ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

দ্বিগুণ ছুটি ঈদে?

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ১৪ জুন ২০১৭

দ্বিগুণ ছুটি ঈদে?

ছুটি পরম লোভনীয় বস্তু, বিশেষ করে বাঙালীর কাছে ছুটি মহার্ঘ্যবিশেষ, ভারি পছন্দের। কিন্তু কর্মঘণ্টার যথাযথ ব্যবহারে কি বাঙালী যথেষ্ট সচেতন? সরকারী অফিসে কোন প্রয়োজনে গেলে বোঝা যায় সেবাপ্রাপ্তির মান কি রকম। ঠিক সময়ে ঠিক ব্যক্তিটিকে তার নির্ধারিত আসনে পাওয়া যায় না। সিটে না থাকার অজুহাতেরও কমতি নেই। বিলম্বে অফিসে উপস্থিতি এবং নির্ধারিত সময়ের আগেই গাত্রোত্থানÑ সরকারী কর্মীদের অনেকেরই এমন বৈশিষ্ট্য সর্বজনবিদিত। তবে শুধু তাদের একতরফাভাবে এমন অপবাদ দিলে অন্যায় হবে। বাঙালী মাত্রই কমবেশি এ জাতীয় বৈশিষ্ট্যে বিশিষ্ট! প্রতিটি দফতরেই কর্মীদের সাপ্তাহিক ছুটি নির্ধারিত রয়েছে। দেশের সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা নিঃসন্দেহে ভাগ্যবান। তারা দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটি ভোগ করে থাকেন। বেসামরিক, স্বায়ত্তশাসিত এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির চাকরীজীবীদের ক্ষেত্রে খুবই নগণ্যসংখ্যক অনুরূপ দুইদিন সাপ্তাহিক ছুটি ভোগ করতে পারেন। বেশিরভাগ চাকুরেরই সাপ্তাহিক ছুটি একদিন। এদিক দিয়ে বিবেচনা করলে দেশে বড় ধরনের ছুটি-বৈষম্য বিদ্যমান। এ নিয়ে উভয় মহলের মধ্যে সূক্ষ্ম মনোকষ্ট ও স্থূল ঈর্ষা থাকাটাও বিচিত্র নয়। এ বাস্তবতায় আবার নতুন ছুটির আগমনী বার্তা শোনা যাচ্ছে। সেটি হলো দুই ঈদে অতিরিক্ত ছুটি। ঈদ-উল-ফিতর ও ঈদ-উল-আযহার ছুটি দ্বিগুণ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ঈদের ছুটি ৩ দিনের পরিবর্তে ৬ দিন করা হচ্ছে। তবে এ বাড়তি ছুটি নৈমিত্তিক ছুটি থেকে কেটে নেয়া হবে। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবের সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের যুক্তি হচ্ছে : ঈদের ছুটি তিনদিন থাকায় দূরে যাদের বাড়ি তারা যেতে পারেন না। বেশিরভাগ কর্মকর্তারা সঙ্গে আরও ৩/৪ দিনের ছুটি নিয়ে থাকেন। ফলে ঈদের পর কয়েকদিন অফিস অনেকটা ফাঁকাই থাকে। তাই ছুটি দ্বিগুণ হলে সরকারী চাকরিজীবীরা পরিবার-পরিজনের সঙ্গে শান্তিমতো ঈদের আনন্দ ভোগ করতে পারবেন। এবার ২৫, ২৬ ও ২৭ জুন ঈদের ছুটি নির্ধারিত হয়ে আছে। ঈদের আগে সরকারী চাকরিজীবীদের শেষ অফিস ২২ জুন বৃহস্পতিবার। ২৩-২৪ জুন সাপ্তাহিক ছুটি, ২৫ থেকে ২৭ জুন ঈদের ছুটি এবং মাঝে ২৮ ও ২৯ জুন ঘোষণা হতে পারে সরকারী ছুটি, ৩০ জুন শুক্রবার ও ১ জুলাই শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। অর্থাৎ সরকারী চাকুরেরা এবার ঈদের ছুটি পেতে পারেন ৯ দিন। কী বিপুল বিলাসিতা বটে! একেই বলে বাঙালীর ছুটিবিলাস! এমনিতে এবার শুক্র-শনি মিলিয়ে যেখানে পাঁচ দিনের ছুটি আগাম নির্ধারিত হয়েছিল, সেখানে বাড়তি ছুটি দেয়া কি অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত নয়? তাছাড়া অতীত অভিজ্ঞতা থেকে আমরা জানি বেশিরভাগ মানুষ তিনদিনের ঈদের ছুটিকে ছয়-সাতদিনের ছুটি বানিয়ে দীর্ঘ অবকাশ যাপন করে থাকেন। এখন নিয়ম করে তাদের ঈদের ছুটি দ্বিগুণ করা হলে সেটি যে ছয়দিনের পরিবর্তে নয়দিনে ঠেকবে না এর কী নিশ্চয়তা রয়েছে? ফলে গোটা জাতিই ছুটির ফাঁদে জড়িয়ে দেশের ক্ষতি বৃদ্ধি ঘটাবে। কর্মবিমুখ মানুষকে কর্মতৎপর করতে হলে ছুটি বাড়িয়ে তা সম্ভব কি?
×