ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

গুলশানে অগ্নিকাণ্ড

প্রকাশিত: ০৩:১৭, ৬ জানুয়ারি ২০১৭

গুলশানে অগ্নিকাণ্ড

রাজধানীর গুলশান ১ নম্বরের ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে সোমবার গভীর রাতে। এতে কাঁচা ও পাকা মার্কেট পুড়ে গিয়ে শুধু ভস্মীভূতই হয়নি; বরং পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। এতে কমপক্ষে ৭শ’ দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায়। প্রাথমিক হিসাবে ক্ষতির পরিমাণ হাজার কোটি টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিক ও ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে দমকল বাহিনীর বিরুদ্ধে অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে অবহেলার অভিযোগও আছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো পর্যাপ্ত পানির অভাব। আশপাশে কোন জলাধারও ছিল না। অন্যদিকে, দমকল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, মার্কেট দুটোতে অগ্নি নির্বাপণের আদৌ কোন ব্যবস্থা তো ছিলই না; উপরন্তু অনেক দোকানেই ছিল দাহ্য পদার্থ- পারফিউমস, গার্মেন্টস, প্লাস্টিক সামগ্রী ইত্যাদি। আগুন লাগার প্রাথমিক কারণ হিসেবে শর্ট সার্কিটসহ বৈদ্যুতিক লাইনের ত্রুটিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালককে প্রধান করে গঠন করা হয়েছে একটি কমিটি। এর বাইরেও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী দোকান ও মালিক সমিতির পক্ষ থেকে যে গুরুতর অভিযোগ করা হয়েছে তা হলো, মার্কেটটিতে আগুন লাগানো হয়েছে পরিকল্পিতভাবে। ডিএনসিসি পাকা ও কাঁচা মার্কেট মিলে কয়েক বিঘা জমির ওপর বহুতল ভবন বিশিষ্ট মার্কেট নির্মাণের জন্য ডেভেলপার কোম্পানির সঙ্গে একটি চুক্তি করে ২০০৬ সালে। সেই থেকে মার্কেটের দোকানদার ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে চলে আসছে বিরোধ। এ নিয়ে পরস্পর মামলা-মোকদ্দমাসহ হুমকি-ধমকির অভিযোগও আছে। ঢাকা উত্তরের মেয়র অবশ্য নাশকতার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তবে তদন্ত কমিটি যদি যথাযথ নিরপেক্ষ তদন্ত করতে সক্ষম হয়, তাহলে নিশ্চয়ই সত্য বেরিয়ে আসবে। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে তদন্ত কমিটিতে মালিক ও ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছেন। দেশে আগুন লাগার ঘটনা বেশি ঘটে শুকনা মৌসুমে। এক সময় পাট ও তুলার গুদামে আগুন লাগার খবর পাওয়া যেত। এখন বেশি আগুন লাগে মার্কেট ও গার্মেন্টসে। তাও প্রধানত রাজধানী ও আশপাশে। এমনকি অত্যাধুনিক ও ডিজিটাল বলে দাবিদার সুপার মার্কেটেও একাধিকবার আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। পরে তদন্ত করতে গিয়ে দেখা গেছে যে, সেই বহু কথিত আধুনিক মার্কেটেও স্মোক ডিটেক্টরসহ অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা পর্যাপ্ত ছিল না; এমনকি পানিও নয়। দেশে-বিদেশে বহুল প্রচারিত তাজরীন গার্মেন্টসের ক্ষেত্রেও কথাটি প্রযোজ্য। গুলশান-১ মার্কেটেও পানির রিজার্ভসহ অগ্নি নির্বাপণের ব্যবস্থা প্রায় ছিল না বললেই চলে। একই কথা প্রযোজ্য বহুতল বিশিষ্ট বাসা-বাড়ি এবং সরকারী-বেসরকারী অফিসের ক্ষেত্রেও। আসলে জরুরী অবস্থা ও ব্যবস্থার কোন ধারণাই গড়ে ওঠেনি ভবন নির্মাণসহ অগ্নি নির্বাপণ কিংবা অন্যবিধ দুর্ঘটনা মোকাবেলায়। এ বিষয়ে কারও কোন প্রশিক্ষণও নেই বললেই চলে। সম্প্রতি এর আধুনিকীকরণ চলছে। ১ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫৬টি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন স্থাপনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে ১৫৬টি উপজেলা সদরে। গুলশানে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও দোকান মালিকদের পুনর্বাসনে সরকার ও ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ আন্তরিক ও সচেষ্ট হবে বলেই প্রত্যাশা।
×