ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৯ জুন ২০২৫, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সৌরজগতের শেষ প্রান্তে নতুন এক বামন গ্রহের সন্ধান

প্রকাশিত: ০৪:১১, ৯ জুন ২০২৫

সৌরজগতের শেষ প্রান্তে নতুন এক বামন গ্রহের সন্ধান

ছবি: সংগৃহীত

সৌরজগতের একেবারে শেষ প্রান্তে—নেপচুনের বাইরেও—নতুন এক বামন গ্রহের সন্ধান পেয়েছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। ‘২০১৭ ওএফ২০১’ নামে চিহ্নিত এই বস্তু শুধু আরেকটি গ্রহই নয়, এটি নতুন করে ‘প্ল্যানেট নাইন’ বা ‘প্ল্যানেট এক্স’-এর অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

এই বস্তুর অস্তিত্ব প্রথম শনাক্ত করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটনের ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডির গবেষক সিহাও চেং ও তাঁর সহকর্মীরা। চিলির ভিক্টর এম. ব্লাঙ্কো টেলিস্কোপের পুরনো ছবিতে উজ্জ্বল এক বিন্দু লক্ষ্য করে তাঁরা গবেষণা শুরু করেন। বিশ্লেষণে দেখা যায়, এটি বিশাল এক বরফে ঢাকা মহাজাগতিক বস্তু, যার অবস্থান কুইপার বেল্ট অঞ্চলে।

৯০ গুণ দূরে, ২৫ হাজার বছরে সূর্যপাক

এই বামন গ্রহটি বর্তমানে পৃথিবী থেকে ৯০.৫ অ্যাস্ট্রোনমিকাল ইউনিট (AU) দূরে অবস্থান করছে। এক AU মানে পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব (প্রায় ১৫ কোটি কিলোমিটার)। অর্থাৎ এই বস্তুটি সূর্য থেকে পৃথিবীর চেয়ে প্রায় ৯০ গুণ দূরে অবস্থান করছে।

প্রায় ৭০০ কিলোমিটার চওড়া এই বস্তুকে যদিও প্লুটোর চেয়ে ছোট, তবু এটি বামন গ্রহ হিসেবে বিবেচিত হওয়ার মতো যথেষ্ট বড়।

এই গ্রহ সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে সময় নেয় প্রায় ২৫ হাজার বছর। আর পৃথিবীর সবচেয়ে কাছাকাছি এলেও এটিকে শনাক্ত করা খুব কঠিন, কারণ তখনও এটি অস্পষ্টই থেকে যায়।

অদ্ভুত কক্ষপথের রহস্য

বিজ্ঞানীরা বলছেন, নতুন এই বামন গ্রহের কক্ষপথ অত্যন্ত ব্যতিক্রমধর্মী। সাধারণত প্লুটোর মতো বামন গ্রহরা সূর্য থেকে ৩০-৫০ AU দূরে ঘোরে। ২০১৭ ওএফ২০১ সূর্যের সবচেয়ে কাছে আসে ৪৪.৫ AU দূরত্বে, কিন্তু যখন সূর্য থেকে সবচেয়ে দূরে যায়, তখন সেটি ১৬০০ AU পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এ সময় এটি প্রায় সৌরজগতের বাইরেই চলে যায়।

বিজ্ঞানীদের ধারণা, হয়তো কোনো অজানা বড় গ্রহের সঙ্গে সংঘর্ষ বা মাধ্যাকর্ষণীয় প্রভাবেই এই কক্ষপথ তৈরি হয়েছে। তবে আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এর কক্ষপথের গঠন প্ল্যানেট এক্সের তত্ত্বকেও চ্যালেঞ্জ করছে।

প্ল্যানেট এক্স কি তবে নেই?

বহুদিন ধরেই বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, সৌরজগতের বাইরে ‘প্ল্যানেট ৯’ নামে একটি বিশাল গ্রহ লুকিয়ে আছে। তার মাধ্যাকর্ষণ বলেই দূরবর্তী বস্তুগুলোর কক্ষপথ একই দিকে বাঁকানো দেখা যায়। কিন্তু ২০১৭ ওএফ২০১ ব্যতিক্রম। যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এরিতাস ইয়াং বলেন, “এই বস্তুটি অন্যদের মতো নয়, বরং এর কক্ষপথ একেবারেই আলাদা। এটি আমাদের আগের তত্ত্বগুলো নিয়ে সন্দেহ তৈরি করেছে।”

নতুন গবেষণা, নতুন আশা

গবেষকেরা এ বস্তুর কক্ষপথ নিয়ে কম্পিউটার সিমুলেশন চালিয়ে দেখেছেন, যদি সত্যিই প্ল্যানেট ৯ থাকে, তাহলে কয়েক শ মিলিয়ন বছর পরে এই বামন গ্রহটি সৌরজগত থেকে ছিটকে পড়তে পারে। আর যদি প্ল্যানেট ৯ না থাকে, তাহলে এটি সৌরজগতেই টিকে থাকবে।

তবে এখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাচ্ছে না। গবেষক সিহাও চেং বলেন, “আমি এখনো আশা করি প্ল্যানেট ৯ আছে। কারণ, সেটা থাকলে বিষয়টা আরও রোমাঞ্চকর হবে।”

ভবিষ্যতের অপেক্ষায় মহাকাশ

এই বামন গ্রহের খোঁজে গবেষকরা আশাবাদী হয়েছেন যে, সৌরজগতের প্রান্তে এমন আরও বহু অজানা বস্তু লুকিয়ে থাকতে পারে। তবে এখনো সেগুলোর অনেক কিছুই আমাদের দৃষ্টির বাইরে।

খুব শিগগিরই চালু হতে যাচ্ছে ভেরা সি. রুবিন অবজারভেটরি নামের একটি উন্নত মানের টেলিস্কোপ। বিজ্ঞানীদের আশা, এই টেলিস্কোপের চোখে ধরা পড়বে এমন আরও বহু অজানা রহস্য।

ততদিন পর্যন্ত ‘প্ল্যানেট নাইন’-এর অস্তিত্বের রহস্য রয়ে গেল মহাকাশের অতল গহ্বরে।

 

সূত্র: নিউ সায়েন্টিস্ট।

রাকিব

×