ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৯ জুন ২০২৫, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

শত বছর ধরে গ্রামীণ হাটের ঐতিহ্য সুস্বাদু ঝুড়িভাজা!

সোহাইব মাকসুদ নুরনবী, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ১০:৪৮, ৯ জুন ২০২৫

শত বছর ধরে গ্রামীণ হাটের ঐতিহ্য সুস্বাদু ঝুড়িভাজা!

গ্রাম্য সাপ্তাহিক হাটের অতি পরিচিত মুখরোচক খাবার ঝুড়িভাজা। প্রায় শতাধিক বছর ধরে মচমচে এ খাবারটি মন যুগিয়ে আসছে গ্রামীণ মানুষদের। তাইতো হাটে আসলেই প্রায় সকল মানুষ ই এক প্যাকেট ঝুড়িভাজা না কিনলে যেন তৃপ্তি খুঁজে পান না। বিশেষ করে বৃহত্তর বরিশাল বিভাগের মানুষদের নিকট এটি একটি সুপরিচিতি খাবার। জানা যায়, প্রায় দুইশত বছরেরও অধিক সময় ধরে  গ্রামীণ হাটে কিংবা মাথায় করে গ্রামে ঘুরে ঘুরে ফেরি করে বিক্রি করা হয় এ খাবারটি।

সাধারণত ডাল, ময়দা, লবনসহ নানা উপকরণ  মিশ্রিত করে তরল পেস্টের মত তৈরী করা হয়। এগুলো গরম তেলের ওপরে জিলাপির মত করে ছেড়ে দেয়া হয়। কিছুক্ষণ পরেই তৈরী হয়ে যায় মচমচে স্বাদের ঝুড়িভাজা। যা ৩-৪ টি করে একেকটি ছোট পলথিনের প্যাকেটে রাখা হয়। এরপরে স্থানীয় বিভিন্ন হাটে বাজারজাত করা হয়, বর্তমানে এ খাবারটি প্রতি প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা মূল্যে।

পটুয়াখালী সদর উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় বসে প্রায় ৩১ টিরও অধিক সাপ্তাহিক হাট। এসকল হাটে মুখরোচক নানা ভাজাপোড়া  খাবারের পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা। পলিথিনের ছাউনি বেষ্টিত এসকল দোকানিরাই বিক্রি করেন ঝুড়িভাজা। 

সদর উপজেলার বোতলবুনিয়া সাপ্তাহিক হাটে  পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া পূত্র সৌরভকে বিয়ে এমন সব মুখরোচক খাবারের দোকান বিয়ে বসেছেন ভ্রাম্যমান বিক্রেতা সুভাষ দেবনাথ। দেখা গেল  ক্রেতার উপস্থিতিতে দোকান সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। তার দোকানে রয়েছে নিজ হাতে তৈরী করা বরা,মনেক্কা, বিষ্কুট, ডালভাজা, ও ঝুড়িভাজাসহ নানা ধরনের খাবার। কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, "আট আনা দাম থেকে ঝুড়িভাজা বিক্রি হতে দেখছি। আমি বেচি ১০-১২ বছর যাবত। পূর্বপূরুষরা আগে তাতের ব্যবসা করত। আধুনিক মেশিন বাইরাইয়া তাতের চাহিদা কমায় আমরা এই পেশায়। ঝুড়িভাজার পাশাপাশি আমরা মিষ্টিও বানাই। তবে ঝুড়িভাজা দেখলেই ছোডকালের কতা মনে পড়ে, এইটা খাওয়ার জন্য কত বায়না ধরতাম!"

কথা হয় সাপ্তাহিক হাটে আসা  স্থানীয় যুবক হাসান মাহমুদের সাথে।  তিনি বলেন, " ছোটবেলায় যখন বাবার হাত ধরে হাটে আসতাম তখনই ঝুড়িভাজা খাওয়ার বায়না ধরতাম। সেই ছোটবেলা থেকেই এ খাবারটি খেয়ে আসছি। এখনও হাটে আসলেই ঝুড়িভাজা কিনি।"


দিন বদলায়, বছর বদলায়, কালের বিবর্তন ঘটে,  শিশু থেকে আমরা বৃদ্ধ হই। কিন্তু যেখানেই থাকিনা কেন আমাদের মানসপটে ভেসে ওঠে দুরন্ত শৈশবের স্মৃতি। গ্রাম্য হাট থেকে ফিরে বাড়ির রাস্তায় দাঁড়িয়ে বাবা কিংবা দাদুর ডাক, আর ঝুড়িভাজার ন্যায় এমন মজাদার সব খাবারের লোভে দৌড়ে ছুটে যাওয়া। এসব ই স্মৃতি হয়ে থেকে যায় আমাদের হৃদয়ে। জানান দেয় খাটি বাঙ্গালীয়ানার। যুগ-যুগান্তর ধরে বাঙ্গালীর মনজুড়ে বেঁচে থাকুক এমন বাঙ্গালীয়ানা টান, ঐতিহ্যবাহী এসকল খাবারের লোভ থাকুক মনজুড়ে!

আঁখি

×