
ছবি: জনকণ্ঠ
একসময় গ্রামীণ মেলার প্রাণ, শিশু-কিশোরের স্বপ্ন, আর বড়দের নির্মল আনন্দের উৎস ছিল যে খেলা ‘তৈলাক্ত কলাগাছ’, তা আজ কালের বিবর্তনে প্রায় হারিয়েই যেতে বসেছে। কিন্তু ঈদের দ্বিতীয় দিন সেই হারিয়ে যাওয়া খেলা ফিরে এলো নতুন রঙে, নতুন প্রাণে, নতুন মুখে।
জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলার বগারচর ইউনিয়নের টালিয়াপাড়া নতুন বাজার এলাকায় ঈদের দ্বিতীয় দিন শনিবার বিকেলে আয়োজিত হয় গ্রামীণ ঐতিহ্যের এই ঐতিহাসিক খেলা। স্থানীয় তরুণ সমাজের উদ্যোগে সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রম ও সহযোগিতার ভিত্তিতে এই আয়োজন করা হয়, যেখানে অংশগ্রহণ করে এলাকার অনেক তরুণ, এবং ভিড় করেন শত শত উৎসাহী দর্শক।
কলাগাছের তৈরি খুঁটিকে তেল দিয়ে পিচ্ছিল করে দেওয়া হয়। এরপর প্রতিযোগীরা একে একে চেষ্টা করেন খুঁটির মাথায় রাখা পুরস্কার ছুঁয়ে নিতে। কেউ পড়ে যান, কেউ আবার সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে ছুঁয়ে ফেলেন বিজয়। আর চারপাশ থেকে ওঠে করতালি, হাসি আর হর্ষধ্বনি।
খেলা শুরু হয় বিকেল সাড়ে চারটার দিকে। ধীরে ধীরে বাজার ও আশপাশের গ্রাম থেকে মানুষ ভিড় করতে থাকেন। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বয়স্ক দর্শকদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। আয়োজক তরুণদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, “আগে এই খেলাটা আমাদের গ্রামে নিয়মিত হতো। এখন মোবাইল-ইন্টারনেটেই সবাই ব্যস্ত। আমরা চাই নতুন প্রজন্ম শিকড়ের সঙ্গে পরিচিত হোক।”
খেলাটিতে কেউ পা পিছলে পড়ে গেলে তা মুহূর্তেই হাসির রোল তোলে দর্শকের মাঝে, আবার কেউ শীর্ষে পৌঁছালে বাজে জয়ধ্বনি। কেবল হাসি-আনন্দ নয়, এই খেলাটি গ্রামের মানুষের মাঝে গড়ে তুলেছে এক ধরনের মিলনমেলা, বন্ধন ও সামাজিক ঐক্যের মজবুত ভিত্তি।
সচেতন মহলের মতে, এ ধরনের আয়োজন শুধু বিনোদনের জন্য নয়, বরং নতুন প্রজন্মকে গ্রামীণ সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত করার একটি শক্তিশালী মাধ্যম। হারিয়ে যাওয়া লোকজ ঐতিহ্যকে নতুনভাবে ফিরিয়ে আনার এমন প্রয়াসই বাংলার মাটি ও মানুষের গল্পকে জীবন্ত রাখবে।
মুমু ২