
ছবি: সংগৃহীত।
বর্তমান বিশ্ব ক্রমেই যেন মানবিক মূল্যবোধ বিস্মৃত হয়ে সংঘাত ও যুদ্ধের দিকে ধাবিত হচ্ছে। ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতের পর বিশ্বকে নতুন করে নাড়া দিচ্ছে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ পরিস্থিতি। এই সংঘাত শুধু উপমহাদেশ নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার জন্যই এক অন্ধকার ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো—পারমাণবিক শক্তিধর এই দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ বেধে গেলে বাংলাদেশের অবস্থান ও করণীয় কী হতে পারে?
সরাসরি না হলেও অনিবার্য প্রভাব
ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশের পশ্চিম, উত্তর ও পূর্ব সীমান্তজুড়েই রয়েছে ভারত। আবার ভারতীয় ভূখণ্ডের মাধ্যমেই পাকিস্তানের সাথে রয়েছে সংযোগ। ফলে সরাসরি যুদ্ধের বিস্তার না ঘটলেও যুদ্ধ-পরবর্তী প্রভাব থেকে বাংলাদেশ একেবারেই মুক্ত থাকবে না।
এতে শরণার্থী প্রবাহ, রাজনৈতিক অস্থিরতা, সীমান্ত উত্তেজনা ও সন্ত্রাসী তৎপরতার আশঙ্কা তৈরি হতে পারে। পাশাপাশি আমদানি-রপ্তানি, জ্বালানি সরবরাহ, রেমিট্যান্স ও বৈদেশিক বিনিয়োগেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
কূটনৈতিক ভারসাম্য ও সক্রিয় ভূমিকা
বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের করণীয় হবে ভারত ও পাকিস্তান—উভয় দেশের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ ও শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা। সেই সঙ্গে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) বা জাতিসংঘের মাধ্যমে যুদ্ধ ঠেকাতে সক্রিয় কূটনৈতিক ভূমিকা পালন করা।
পারমাণবিক হামলার পর করণীয়
যদি পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গড়ায় যেখানে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহৃত হয়, তবে বাংলাদেশের জনগণের জন্য জরুরি কিছু পদক্ষেপ জানা থাকা দরকার:
- রেডিয়েশন থেকে নিরাপত্তা: বিস্ফোরণের পরপরই ঘরের ভেতরে আশ্রয় নিতে হবে। সবচেয়ে ভালো আশ্রয়স্থল হলো বেজমেন্ট বা কংক্রিটের ঘর।
- প্রাথমিক ২৪ ঘণ্টা: এই সময় রেডিয়েশনের মাত্রা সবচেয়ে বেশি থাকে, তাই বাইরে বের হওয়া একেবারে নিষেধ।
- পোশাক ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা: বাইরে ব্যবহৃত পোশাক দ্রুত খুলে প্লাস্টিক ব্যাগে সংরক্ষণ করতে হবে। তারপর হালকাভাবে স্নান করতে হবে—শরীর ঘষা যাবে না।
- খাবার ও পানি: বোতলজাত পানি ও প্যাকেটজাত খাবার খেতে হবে। বাইরের পানির সংস্পর্শ এড়াতে হবে।
একই সঙ্গে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে—মানবিক সহায়তা ও রাজনৈতিক সমর্থন নিশ্চিত করতে। পাশাপাশি সম্ভাব্য শরণার্থী সংকট ও জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কৌশল আগেভাগেই প্রস্তুত রাখতে হবে।
আজকের বৈশ্বিক রাজনীতি এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে একটি দেশের যুদ্ধ কেবল সেই দেশেই সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং তার ছায়া পুরো অঞ্চলজুড়ে বিস্তার লাভ করে। ভারত-পাকিস্তান সংঘাত দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য এক বিশাল হুমকি। বাংলাদেশ যেন কেবল দর্শক না থেকে আগেভাগে কৌশল নির্ধারণ করে—এটাই সময়ের দাবি।
নুসরাত