
ছবি: সংগৃহীত
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে পদত্যাগের জন্য ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে গণঅধিকার পরিষদের অঙ্গসংগঠন বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদ। তাদের দাবি, তিনি ‘ডামি রাষ্ট্রপতি ও হত্যা মামলার আসামি আবদুল হামিদকে দেশ ছাড়তে সহযোগিতা করেছেন’।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদ। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান। পরে ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আতাউর রহমান খানের হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন। স্মারকলিপিতে এ আলটিমেটামের কথা বলা হয়।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, গণমাধ্যমের তথ্যমতে, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের সহায়তায় ডামি রাষ্ট্রপতি, হত্যা মামলার আসামি আবদুল হামিদ তার পুত্র ও শ্যালককে নিয়ে বৃহস্পতিবার রাত ৩টা ৫ মিনিটে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। আপনার সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা দায়িত্বে থাকা অবস্থায় কিভাবে সে পালাল? ডামি রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ একজন ফ্যাসিবাদের দোসর ও হত্যা মামলার আসামি। আমরা সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিচ্ছি। এই সময়ের মধ্যে যথাযথ জবাব, দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা এবং ডামি রাষ্ট্রপতিকে ফিরিয়ে আনতে না পারলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে সসম্মানে চেয়ার ছাড়তে হবে। অন্যথায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে সারা দেশে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। যার জন্য দায়ী থাকবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।’
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, ‘এই সরকার ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সরকার। জুলাই গণহত্যার বিচার, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ, রাষ্ট্র সংস্কার, আহতদের পুনর্বাসন ও শহিদের যথাযথ মর্যাদা প্রদান ছিল আপনাদের ওপর জনগণের অর্পিত দায়িত্ব। কিন্তু আপনারা ধীরে ধীরে সেই দায়িত্ব থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন এবং আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করছেন। তাই গণঅভ্যুত্থানের অংশীজনদের পক্ষ থেকে আপনাদের প্রতি ধিক্কার ও ঘৃণা প্রকাশ করছি।’
এদিকে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর প্রতীকী গায়েবানা জানাজা পড়েন শিক্ষার্থীরা। সন্ত্রাসী ও ধর্ষকদের দ্রুত সময়ের মধ্যে শাস্তির দাবি এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির দায় নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
বরিশালেও ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ করেছেন। এতে ঢাকা-বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শিক্ষার্থীরা বলেন, দেশে একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। এতে মানুষ নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ছেন। সর্বত্র আতঙ্ক বিরাজ করছে। কিন্তু সরকার এসব অপরাধীকে গ্রেফতার ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না। তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান।
এছাড়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে গণপদযাত্রা করেছেন। পুলিশ তাদের বাধা দিলে তারা রাস্তায় বসে প্রতিবাদ জানান। আন্দোলনকারীরা বলেন, সারা দেশে অব্যাহত ধর্ষণ ও নারী নিপীড়ন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, অবিলম্বে ধর্ষণ ও নিপীড়নের সব ঘটনার বিচার এবং সংশ্লিষ্ট আইনগুলোর যৌক্তিক সংস্কার করতে হবে। তবে এর আগে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে।
এদিকে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ‘পদত্যাগ তো পদত্যাগ, অনেকে আমার জানাজাও পড়ে ফেলেছে’। তিনি আরও বলেন, ‘আমি দায়িত্বে আছি, দায়িত্ব পালন করছি। যারা পদত্যাগের কথা বলছেন, তারা আগে নিজেদের দায়িত্ব পালন করুন’।
এ পরিস্থিতিতে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে দেশব্যাপী আন্দোলন জোরদার হচ্ছে। আন্দোলনকারীরা সরকারের কাছে তাদের দাবি বাস্তবায়নের জন্য চাপ সৃষ্টি করছে।
শিহাব