ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৫ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২

মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক

প্রকাশিত: ২৩:২৮, ১১ মার্চ ২০২৫

মাহে রমজান

আজ মাহে রমজানুল মোবারকের ১১তম দিবস

আজ মাহে রমজানুল মোবারকের ১১তম দিবস। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এ বরকতময় মাসকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন। ১ম ভাগ আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার অবারিত রহমতে সন্তরণ করার। ২য় ভাগ করুণাময় খোদা তায়ালার দরবারে কায়মনোবাক্যে ক্ষমা প্রার্থনার। আর সমাপনী দশক অগণিত পাপী তাপীদের মাহে রমজানের ওয়াসিলা ও বরকতে জাহান্নাম থেকে মুক্তির। আমরা আজ ২য় দশকের শুরুতে।

খোদা তায়ালার কাছে নিজেদের পাপ তাপের ক্ষমাপ্রার্থী হয়ে ইবাদত বন্দেগিরত। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, তোমরা আমাকে ডাক; আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেই। আল কুরআনে আরও বলা হয়েছে আল্লাহ পাকের রয়েছে সুন্দর সুন্দর নামসমূহ। তোমরা সেসব নাম ধরে তাকে ডাক। তার কাছে চাও....।
আজ আমরা আল্লাহ পাকের কয়েকটি সুন্দর সুন্দর নামের স্মরণ বা জিকির করব এবং এ দশকে সেসব নাম ধরে তার কাছে পানাহ চাইব, অনুধাবন করব এসব নামের মাহাত্ম্য। এসব নামের মাহাত্ম্য অনুধাবনের মধ্যে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে বহু সংশোধনও নিহিত রয়েছে। আল্লাহর এক নাম হচ্ছে ক্বাভী (শক্তিশালী), কাহ্হার (পরাক্রমশীল), কাবির শ্রেষ্ঠ ও জাব্বার (অতি শক্তিশালী) সমগ্র সৃষ্টি তাঁর শক্তি ও বিজয়ের অধীন।

আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ, সকল শক্তিশালী থেকেও শক্তিশালী। তিনি হচ্ছেন পবিত্র। দুনিয়ার কোনো শক্তিই চিরস্থায়ী নয়, কোনো শক্তিধর চিরঞ্জীব নয়, একমাত্র আল্লাহপাকের শক্তি ছাড়া। কিন্তু বিশ্বের দাম্ভিক শক্তিধরগণ তা সহজে মেনে নিতে চায় না। অবশ্য তারা একপর্যায়ে ফানুসের মতো চুপসে যায় এবং নিক্ষিপ্ত হয় ঘৃণার আঁস্তাকুড়ে। যেমন, ফেরাউন  নমরুদ কারুনরা আজ কোথায়?
বিশ্বের যেকোনো স্থানে যে কোনোকালে অত্যাচারিত ও নিপীড়িত সবার চোখ একটি স্থানে স্থির রাখা (আশায় থাকা) উচিত। আর তা হলো আল্লাহ তায়ালার অপার মহিমার স্থল। কারণ আল্লাহ মাজলুম নারী-পুরুষ ও শিশুর কান্নায় অবশ্যই বিগলিত হন। আল্লাহর আরেক নাম রাজ্জাক (রিজিক দাতা)। আল্লাহ যাকে যে রিজিক দান করেছেন, তা বন্ধ করার জন্য যদি সমগ্র সৃষ্টি, জ্বিন ও মানুষ একত্রিত হয়, তবু তারা তাতে সক্ষম হবে না, কখনো না।

আল্লাহ যা দেন তা কেউ বন্ধ করতে পারে না এবং তিনি যা নিষেধ করেন তা কেউ দিতে পারে না। জেনে রাখুন, আপনাকে কোনো উপকার করার জন্য তামাম উম্মত যদি একত্রিত হয়, তবে আল্লাহ যা আপনার জন্য রেখেছেন তার বেশি কিছু উপকার করতে পারবে না এবং তারা যদি আপনার কোনো ক্ষতি করার জন্য একত্রিত হয় তবে আল্লাহ আপনার বিরুদ্ধে যা নির্দিষ্ট করে রেখেছেন তা ছাড়া আর কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। সুতরাং তার দরজায় লেগে থাকুন এবং তার মহামান্যতার আশ্রয় নিন।
তিনি কখনো সহসা সাড়া দেন, কখনো একটু বিলম্বে। তবে এ দু’পর্যায়ের মধ্যেই মানব জাতির কল্যাণ ও শিক্ষা নিহিত। তাঁর অন্য নাম গফুর (ক্ষমাশীল)। গুনাহ যত বড়ই হোক তিনি ক্ষমা করবেন এবং দোষ যত বেশিই হোক তিনি গোপন রাখবেন। সূরা নজমে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয় আপনার পালন কর্তার ক্ষমা সুদূর বিস্তৃত। তিনি হচ্ছেন হাকীম (সু-বিচারক, প্রজ্ঞাময়) ও আলিম (সর্বজ্ঞাত) তাঁর বিধান ও শক্তিতে তিনি বিচক্ষণ।

কোনো কিছু তিনি বৃথা সৃষ্টি করেননি এবং তাঁর সৃষ্টিকে বৃথা দেননি। কোনো কিছু অনর্থক ও খেলাস্বরূপ সৃষ্টি করেননি। তিনি তাঁর সৃষ্টি ও তাদের মঙ্গল সম্বন্ধে জ্ঞাত। সূরা বাকারায় বলা হয়েছে: বলুন তোমরা কি বেশি জানো, না আল্লাহ বেশি জানেন?। ‘যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনি কি করে জানবেন না? তিনি সূক্ষè জ্ঞানী, সম্যক জ্ঞাত’ (মুলক-১৪)।

তিনি সর্বোজ্ঞ, মানুষ জানে না। তিনি সু-বিচারক; মানুষ খেয়াল-খুশির অনুসরণ করে ও ভুলে যায়। যে এ বিষয়ে পূর্ণ বিশ্বাস করে সে তাঁর প্রভুর বিধান মেনে নেয়, তাঁর শাস্তির কাছে মাথা নত করে এবং তার শাসন ও আদেশের বিরুদ্ধে আপত্তি করে না। 
হাদিস শরীফে আল্লাহ পাকের এ ধরণের প্রাণ সঞ্জীবনী ৯৯টি নাম রয়েছে। এগুলো উচ্চারণ করাও ইবাদত। এগুলোর অর্থ অনুধাবন করলে জীবনে ঈমানী শক্তি তাজাপোক্ত হয়। আল্লাহ তার অফুরন্ত করুণায় বান্দার ইহপরকালকে সুশোভিত করেন। এসব নামের যিকিরের বদৌলতেই আদম নবীর গুনাহ মাফ হয়েছিল, ইবরাহীম নবীর অগ্নিকু- হয়েছিল গুলে গুলজার। মাহে রমজানে এসব নামের যিকিরের ফয়ুজাতে চলুন আমরা রাহমানুর রাহীমের করুণা ভিক্ষা করি।

×