
আজ সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে বিদায় নেবে ২০২৪ ইংরেজি সালের শেষ দিনটি
ঘড়ির কাঁটা থেমে নেই। প্রতিটি মুহূর্তেই জীবন থেকে একটি একটি করে সেকেন্ড হারিয়ে যাচ্ছে। ঠিক তেমনি পরিসমাপ্তির পথে অনেক ইতিহাস রচনার এবং বহুল আলোচিত ২০২৪ সাল। ক্যালেন্ডার বদলানোর সময় হয়েছে। কিন্তু বর্ষ বিদায়ের আট-দশটা বছরের মতো এক নয় ২০২৪। যুগ যুগ ধরে ২০২৪ সালটি বাংলাদেশের ইতিহাসে অমর সাক্ষী হয়ে থাকবে।
একইসঙ্গে বিদায়ী বছরটি শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্ব ইতিহাসেরও অংশ হয়ে থাকবে। ছাত্র-জনতার অদম্য লড়াই আর হাজারো শহীদের রক্তের বিমিময়ে গত ৫ আগস্ট দেশের দীর্ঘতম শাসক শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে, পদচ্যুত প্রধানমন্ত্রী দেশ ছেড়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।
এখানেই শেষ নয়, ২০২৪ সালে বাংলাদেশ বিশ্বে সবচেয়ে আলোচিত দেশ হিসেবে স্থান পেয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। নবীন প্রজন্ম সাহসী লড়াই করে দেশকে দীর্ঘতম শাসনের কবল থেকে দেশকে ছিনিয়ে এনেছে। ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ লড়াই ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে সমকালীন বিশ্বের বিরল এক গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশ আধিপত্যবাদীদের হাত থেকে মুক্ত হয়েছে। জনতার এই অভ্যুত্থান গোটা বিশ্বকে অবাক করেছে, তেমনি রচিত হয়েছে প্রবল আন্দোলনের একটি অন্যরকম ইতিহাস।
স্বাধীনতার পরে ২০২৪ সালে অন্যরকম এক ইতিহাসের সাক্ষী হয় বাংলাদেশ। হাজারটা কালো মেঘের ছায়া সরিয়ে দিয়ে এসেছে রৌদ্রকরোজ্জ্বল দিন। রাশিয়া-ইউক্রেন এবং ইসরাইল-ফিলিস্তিনের মধ্যে ভয়াল যুদ্ধের দামামার মধ্যেও মাথা তুলে দাঁড়াতে চেষ্টা করছে পৃথিবীর মানুষ। হয়তো মেঘ ঘনাবে আবার, তবু সাহসের পতাকা উড়াতে শিখেছে তারা।
এখন ২০২৪ এর শেষ দিনে এসে বলা যায় গণমানুষের স্বপ্নপূরণ হয়েছে অনেকাংশে। সব আশা পূরণ না হলেও প্রাপ্তির থলিটা যথেষ্ট বড়। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকার ধ্বংসপ্রাপ্ত অর্থনীতিকে আবারও অনেকটা স্বাভাবিক করে এনেছে। স্বাধীনতার ৫৩ বছর ধরে চলা নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও ক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ করতে সংবিধান থেকে শুরু করে প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, নির্বাচন কমিশনসহ গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরের আমূল সংস্কারের কাজ হাতে নিয়েছে। নতুন বছরের শুরুতেই তা জাতির সামনে দৃশ্যমান হবে। পুরো জাতি এখন অপেক্ষা করছে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দেশকে পুনরায় গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনার।
তবুও ঘরের দেওয়ালে আর টেবিলের ডেস্কে সময় এলো ক্যালেন্ডার পাল্টে দেওয়ার। একটি বছর যখন চলে যায়, আমরা ফিরে দেখি বড় ঘটনাগুলো। সেখানে আমরা ভালোলাগা খুঁজি। নতুন বছর আসার কিছু দিন পরই হয়তো আগের বছরের কথা ভুলতে থাকি আমরা। কিন্তু ২০২৪ সালকেও দেশের প্রতিটি মানুষ মনে রাখবে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের কারণে।
রাত পেরোলেই ভোরের পূর্বাকাশে দেখা দেবে নতুন বছরের সূর্য। এসে গেল আরও একটা নতুন বছর। নতুন আশায় বুক বেঁধে নতুন করে পথ চলার ব্রত। কিন্তু অতীতের বীজেই যে ভবিষ্যতের বৃক্ষ- সে তো আর নতুন নয়। তাই পিছনে ফিরতেই হয়। দেখে নিতে হয়। কেমন গেল, কী মিলল, কী হারাল। আগামীতেই বা কী হবে। এই পেছনে তাকানোটা পেছনে যাওয়া নয়, সামনে এগোনোর তাগিদেই। কুয়াশা ঘেরা আগামীর পথ হয়তো দেখাবে নতুন দিগন্ত, এই প্রত্যাশা সকলের। সুন্দর-শান্তিময় হোক ২০২৫।
কালেন্ডারের পাতা উল্টে বিদায় নিচ্ছে ২০২৪ সাল। প্রত্যাশা থাকবে প্রাপ্তিগুলো নতুন মোড়কে নতুনভাবে প্রেরণা জোগাবে ২০২৫-এ। হতাশ-গ্লানিগুলো যাবে ঘুচে। বছর শেষ হওয়ার পথে সবাই নতুন আলো ও সম্ভাবনার আশায় বসে আছে। তাই নতুন বছরে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রতিটি মানুষের একটিমাত্রই চাওয়া-‘বন্ধ হোক যুদ্ধ, প্রাণঘাতী হানাহানি। যুদ্ধ নয় শান্তি চাই, ভয়হীন প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিক বিশ্বের প্রতিটি মানুষ’। তাই বিদায় ২০২৪, স্বাগত ২০২৫ সাল।
দেখতে দেখতে কেটে গেল আরেকটি ঘটনাবহুল বছর। দিনপঞ্জিকার শেষ পাতাটি উল্টে যাবে আজ। নানা কাজের ফিরিস্তি লেখা নিত্যসঙ্গী হয়ে হাতখাতাটি হয়ে পড়বে সাবেক। পরমায়ুর বৃক্ষ থেকে ঝরে যাবে একটি পাতা। মহাকাল নামের এক অন্তহীন মরুভূমির বুকে যেন এক ফোঁটা জল। কিন্তু গোটা বিশ্বকে রীতিমতো নাস্তানাবুদ করেই বিদায় নিচ্ছে ঘটনাবহুল-২০২৪।
বিদায়ী বছরের ঐতিহাসিক ঘটনা : জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান ॥ ২০২৪ বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি ঘটনাবহুল বছর। এই বছরটি ইতিহাসে জুলাই গণঅভ্যুত্থান এবং একটি দীর্ঘস্থায়ী সরকারের শোচনীয় পতনের বছর হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। ১৫ বছরের স্বৈরাচার হটানোর এটি ছিল চূড়ান্ত পর্ব। ছাত্রদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ধাপে ধাপে শেখ হাসিনাকে উৎখাতের একদফার আন্দোলনে পরিণত হয়।
২০২৪ সালের ৫ জুন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর বাংলাদেশ সরকারের জারি করা পরিপত্রকে অবৈধ ঘোষণার পর কোটা সংস্কার আন্দোলন নতুন করে শুরু হয়। জুলাইয়ে মাঝামাঝি থেকে এই আন্দোলন তীব্র হতে থাকে। ১৬ জুলাই রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে শহীদ হওয়ার পর সরকারি-বেসরকারি সকল বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজসহ দেশব্যাপী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। ধারাবাহিক এই আন্দোলন ৩ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের একদফা দাবিতে পরিণত হয়।
এই আন্দোলনে তৎকালীন শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকার ভয়াবহ দমন নিপীড়ন শুরু করলে এটি অসহযোগ আন্দোলনে রূপ নেয়। এই গণঅভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। বাংলাদেশ এ সময় সাংবিধানিক সংকটে পড়ে এবং এর তিন দিন পরে নোবেল বিজয়ী, বরেণ্য ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর নেতৃত্বে গঠিত হয় উপদেষ্টা পরিষদ।
আবু সাঈদ ছিলেন ২০২৪ সালে বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের একজন কর্মী। আবু সাঈদ রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক হিসেবে এই আন্দোলনে যোগদান করেন। তিনি রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ও রংপুর অঞ্চলে কোটা আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। এই আন্দোলনে ১৬ জুলাই পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ শহীদ হন। এর পরেই দেশব্যাপী ব্যাপক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।
২০২৪-এর ২০ জুলাই শেখ হাসিনা সরকার সেনাবাহিনী মোতায়েন করে সারাদেশে কারফিউ জারি করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের আলোকে ২২ জুলাই রাতে কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। ছাত্ররা ২৭ জুলাই এলাকা ভাগ করে ‘ব্লক রেইড’ শুরু করেন। সারাদেশে ৬ হাজারের বেশি গ্রেপ্তার করা হয়। ৫৫০ অধিক মামলা দায়ের করা হয়।
৩ আগস্ট সরকার পতনের একদফায় গোটা দেশ আন্দোলনে স্থবির হয়ে পড়ে। শেখ হাসিনার নির্দেশে পুলিশ ও বিভিন্ন বাহিনীর গুলিতে শতাধিক শহীদ হন, আহত আন্দোলনকারীর সংখ্যা কয়েক হাজার। ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমাবেশে পুলিশের হামলায় ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে বিপুলসংখ্যক মানুষের মৃত্যু এবং কয়েক হাজার আহত হন। এদিন ৫ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ নামে অবরোধের ঘোষণা করা হয়। ৫ আগস্ট লক্ষাধিক মানুষ পুরো ঢাকার রাজপথে নেমে আসে। গণভবন অভিমুখে মিছিলে মিছিলে সব রাজপথ একাকার হয়ে যায়। শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন।
২০২৪ সালের যত বিতর্ক ॥ ২০২৪ সালটা শুরুই হয় বিতর্ক দিয়ে। বছরের প্রথম দিন ১ জানুয়ারি শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দেশের শ্রম আইন লঙ্ঘনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন। ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ গ্রামীণ টেলিকমের অন্য তিনজনের প্রত্যেককে ঢাকার শ্রম আদালত ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদ- দেন এবং পরবর্তীতে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার শর্তে এক মাসের জামিন দেন। অবশ্য উচ্চ আদালতে শ্রম আদালতের রায় খারিজ হয়ে যায়।
এরপর নতুন মন্ত্রিসভার শিক্ষামন্ত্রী বছরের শুরুতে পাঠ্যবই নিয়ে তোপের মুখে পড়েন। জানুয়ারির ১৯ তারিখে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন খণ্ডকালীন শিক্ষক এক অনুষ্ঠানে সপ্তম শ্রেণির ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বইয়ে ‘শরীফার গল্প’ শিরোনামের লেখা বইয়ের পাতা ছিঁড়ে ফেলার পর সারাদেশে শুরু হয় বিতর্ক। ওই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় চাকরিচ্যুত করা হয় ওই শিক্ষককে।
এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আন্দোলন গড়ায় রাজপথে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের ফটক আটকে শিক্ষকের পক্ষে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে নতুন কারিকুলামে সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে ‘মানুষে মানুষে সাদৃশ্য ও ভিন্নতা’ অধ্যায়ের শরীফা শিরোনামের গল্প নিয়ে উদ্ভূত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত বিষয়ে আরও গভীরভাবে পর্যালোচনা করে এনিসিটিবিকে সহায়তা করার জন্য পাঁচ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
বছরের শুরুতেই বিরোধী দলের বর্জনের মুখে ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বিরোধী দলগুলোর বয়কটের মুখে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে। ৭ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত এ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এতে ২৯৯টি আসনের মধ্যে ২২৩টি আসন পেয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ জয় পায়। জাতীয় পার্টি ও কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী এ নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তোলে। ৯ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ভোটের ফলাফলের গেজেট প্রকাশ করা হয় এবং অবশেষে ১০ জানুয়ারি জয়ী সংসদ সদস্য শপথ গ্রহণ করেন।
বেইলি রোডে রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ড ॥ ঢাকার বেইলি রোডের একটি বহুতল ভবনে আগুন লেগে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া আরও ৭৫ জন বিভিন্নভাবে আহত অবস্থায় উদ্ধার হন। গ্রিন কোজি নামক বহুতল ভবনে ২০২৪ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে এই অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয়। ভবনটিতে একাধিক রেস্তোরাঁ ও দোকান ছিল, যার মধ্যে কাচ্চি ভাই রেস্তোরাঁ, স্যামসাংয়ের শো-রুম, গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ার, ইল্লিয়িন, খানাস ও পিৎজা ইন উল্লেখযোগ্য।
২০২৪ সালের ১২ মার্চ এমভি আব্দুল্লাহ নামের একটি জাহাজ ছিনতাই করে সোমালিয়ান জলদস্যুরা। জাহাজটি মোজাম্বিক থেকে দুবাই যাচ্ছিল। জাহাজে ২৩ জন বাংলাদেশী নাবিক ছিলেন যাদের জিম্মি করেছিল সোমলিয়ান জলদস্যুরা। ১৫ এপ্রিল, ২০২৪ সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাত থেকে ছাড়া পায় এমভি আব্দুল্লাহ। ১৬ মে, ২০২৪ ফোর্বস ম্যাগাজিনের ফোর্বস ‘৩০ অনূর্ধ্ব ৩০ এশিয়া’-তে স্থান পান নয় বাংলাদেশী। এই তালিকায় এশিয়ার ৩০ বছরের নিচের ৩০০ জনের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। এতে জায়গা করে নিয়েছেন ৯ বাংলাদেশী, যাদের কেউ তরুণ উদ্যোক্তা, সাংবাদিক, নেতা ও আবিষ্কারক।
এমপি আনোয়ারুল আজিম নিখোঁজ ॥ ২০২৪-এর ২২ মে ভারতের কলকাতায় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমের লাশ উদ্ধার হয়। ভারতে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে গিয়ে তিনি ১৩ মে থেকে নিখোঁজ ছিলেন। এ ঘটনায় ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০ মে পর্যন্ত তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ২২ মে সকালে কলকাতার নিউটাউনে অভিজাত আবাসন সঞ্জীবা গার্ডেন থেকে তার শরীরের কিছু অংশ উদ্ধার হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, ১৩ মে নিউটাউনের সেই বাড়িতেই তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। পরে মেয়ের সঙ্গে ডিএনএ টেস্টে প্রমাণ হয় উদ্ধারকৃত শরীরের খ-িত অংশ এমপি আনোয়ারুল আজিমের।
ঘূর্ণিঝড় রেমাল ২০২৪ সালের ২৬ মে সন্ধ্যা থেকে ২৭ মে সকাল নাগাদ বাংলাদেশে আঘাত হানে। এতে ৭ জনের মৃত্যু হয়। ২০২৪ সালের উত্তর ভারত মহাসাগরের ঘূর্ণিঝড় মৌসুমের প্রথম নিম্নচাপ এবং প্রথম ঘূর্ণিঝড় ছিল।
বেনজীরের পুকুরচুরি ॥ সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদ। তিনি বাংলাদেশ পুলিশের ২৪তম মহাপরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন । ২০২৪ সালের এপ্রিলে দুটি গণমাধ্যমে ‘বেনজীরের ঘরে আলাদিনের চেরাগ’ এবং ‘বনের জমিতে বেনজীরের রিসোর্ট’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর আলোচনায় আসেন বেনজীর আহমেদ।
বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন আহমেদের সম্পদের তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করে। দুর্নীতি দমন কমিশন বলছে, বেনজীরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই সূত্র ধরে বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। ১২ জুন আদালত বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেন। তার আগেই বিদেশে পালিয়ে যান বেনজীর আহমেদ।
মতিউর রহমানের ছাগল কাণ্ড ॥ কোরবানির ঈদের সময় ১২ লাখ টাকায় ঢাকার মোহাম্মদপুরের সাদিক অ্যাগ্রো থেকে ইফাত নামের এক তরুণের ছাগল কেনার ফেসবুক পোস্ট ঘিরে আলোচনায় আসেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মতিউর রহমান। সরকারি এক কর্মকর্তার ছেলে কোরবানির জন্য ১২ লাখ টাকায় ছাগল কিনবেনÑ এই খবরে শোরগোল পড়ে যায় চারদিকে। নেটিজেনরা মতিউর রহমানের সম্পদের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন এবং এই ঘটনার জের ধরেই মতিউর রহমানকে পদচ্যুত করা হয়।
ভারি বর্ষণে এ বছরের ৯ জুন কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহার ধসে ৮ জন রোহিঙ্গাসহ ৯ জন নিহত হন। এ ঘটনায় সাত রোহিঙ্গাসহ নয়জনের মৃত্যু হয়। মৃতদের মধ্যে দুজন স্থানীয় বাসিন্দা ছিলেন বলে জানিয়েছেন শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার।
ড. ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা, রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ ॥ শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ৮ আগস্ট ফ্রান্স থেকে ফিরে বঙ্গভবনে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে তিনিসহ অন্তর্বর্তী সরকারের ১৩ উপদেষ্টা শপথ গ্রহণ করেন। ক্ষমতায় এসেই তিনি রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ নেন এবং সেই অনুযায়ী নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
নানা চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে নতুন সরকারের প্রায় দুই মাস অতিবাহিত হওয়ার পর গঠন করা হয় ছয়টি শক্তিশালী সংস্কার কমিশন। জনপ্রশাসন, পুলিশ, নির্বাচন কমিশন, সংবিধান সংস্কারসহ প্রতিটি সংস্কার কমিশনেই শিক্ষার্থীদের একজন করে প্রতিনিধি রাখা হয়। কমিশনগুলো দফায় দফায় বৈঠক করে সংস্কারের কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছেন। নতুন বছরের জানুয়ারিতেই সংস্কার কমিশনগুলো তাদের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেবেন। পরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা সংস্কারের সুপারিশগুলো নিয়ে ধারাবাহিক বৈঠক করে তা চূড়ান্ত করবেন।
তোফাজ্জল হোসেনকে গণপিটুনিতে হত্যা ॥ ক্রিকেট ম্যাচ চলাকালে ছয়টি মোবাইল চুরির অভিযোগ এনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তোফাজ্জল হোসেনকে আটক করে। তাকে ফজলুল হক মুসলিম হলে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তাকে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। এ সময়ে তাকে ক্রিকেট ব্যাট ও স্ট্যাম্প দিয়ে আঘাত করা হয়। কিছুক্ষণ পর তোফাজ্জলকে হলের ক্যান্টিন থেকে খাবার দেওয়া হয়, কিন্তু তার খাওয়া শেষ করার পরপরই এক্সটেনশন বিল্ডিংয়ের গেস্টরুমে নিয়ে সহিংসতা চালানো হয়।
শিক্ষার্থীরা হোসেনের স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে টাকা দাবি করে। একটি প্রক্টর দল ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও হোসেনের তাৎক্ষণিক মুক্তি নিশ্চিত করতে পারেনি। হোসেনের অবস্থার অবনতি হলে তাকে প্রক্টরদের কাছে হস্তান্তর করা হয়, যারা তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে পৌঁছালে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। এ ঘটনায় সামাজিক মাধ্যম ছাড়াও সারাদেশে নিন্দার ঝড় ওঠে।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ও ইসকন প্রসঙ্গ ॥ ২০২৪ সালের ২৫ নভেম্বরে চিন্ময়কে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ঢাকা বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে। জাতীয় পতাকার ওপরে গেরুয়া পতাকা উত্তোলনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়। পরদিন ২৬ নভেম্বর তাকে চট্টগ্রাম ষষ্ঠ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়, যেখানে ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরিফুল ইসলাম তার জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রামে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের রিমান্ড শুনানিকে কেন্দ্র করে তার সমর্থকেরা আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে হত্যা করে।
এশিয়া কাপ শিরোপা জয় ॥ বছরটা শেষ হয় এক অন্যরকম আনন্দ দিয়ে। ভারতকে ফাইনালে হারিয়ে গত ৮ ডিসেম্বর এসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ শিরোপা জেতে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দল।