
ছবি: সংগৃহীত
"লুট"—শব্দটি আজ আমাদের ঘরে-বাইরে বহুল ব্যবহৃত। তবে এর উৎস কী? প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম তার ফেসবুকে একটি লেখা পোস্ট করে উল্লেখ করেছেন, ইংরেজি ভাষায় "loot" শব্দটির প্রবেশ ঘটে উপমহাদেশের বাংলার সম্পদ লুণ্ঠনের মাধ্যমে, বিশেষ করে ১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধের পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে বাংলার দখল যাওয়ার পরপরই।
তিনি জানান, সেই যুদ্ধে বিজয়ের মূল নায়ক রবার্ট ক্লাইভ ব্যক্তিগতভাবে আয় করেন ২৩৪,০০০ পাউন্ড—আজকের বাজারে যার মূল্য প্রায় ২৩ মিলিয়ন পাউন্ড। এই সম্পদের মাধ্যমেই তিনি “পলাশীর ব্যারন ক্লাইভ” উপাধিতে ভূষিত হন এবং ব্রিটিশ পার্লামেন্টে জায়গা পান।
ক্লাইভের ছেলে এডওয়ার্ড ক্লাইভও সেই ‘ঐতিহ্য’কে টিকিয়ে রাখেন। ১৭৯৯ সালে টিপু সুলতানের মহীশূর রাজ্য ব্রিটিশদের হাতে যাওয়ার পর তিনি সেখানকার রাজকীয় ধনরত্ন লুট করে নেন। বর্তমানে টিপুর সিংহাসনের সোনার ব্যাঘ্র অলংকার ও রাজকীয় তাঁবুসহ বিভিন্ন সম্পদ আজও শোভা পাচ্ছে ওয়েলসের পাওয়িস ক্যাসেলে অবস্থিত ক্লাইভ মিউজিয়ামে।
লন্ডনে সফরকালে শফিকুল আলম জানান, সময় ও ব্যয়সংকটে ক্যাসেলটি দেখা না গেলেও তিনি ঘুরেছেন লন্ডনের সেসব এলাকায় যেখানে আজকের বাংলাদেশি ধনকুবেররা তাদের সম্পদের প্রাসাদ গড়েছেন। তিনি উল্লেখ করেন, সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ সাইফুজ্জামান চৌধুরী লন্ডনে ৩০০টিরও বেশি সম্পত্তির মালিক। তার এসব সম্পদের মধ্যে রয়েছে সেন্ট জনস উড ও ফিৎসরোভিয়ার মতো অভিজাত এলাকায় বিলাসবহুল বাসভবন। ব্রিটেনের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি ইতিমধ্যে দুর্নীতির তদন্তে তার ১৮৫ মিলিয়ন পাউন্ডের সম্পদ জব্দ করেছে।
প্রেস সচিবের ভাষায়, ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ২৩০টি আসনে বিজয় ছিল এক ‘রাজনৈতিক বিপ্লব’। কিন্তু তার পরের ঘটনাপ্রবাহ ইঙ্গিত দেয়, যেন পুরো বাংলাদেশ—৪০০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি—একটি বিজয়ের ‘লাভের সম্পদে’ পরিণত হয়েছিল।
তিনি আরও লেখেন, এর ফলেই দেশে তৈরি হয় একটি ধারাবাহিক ও কাঠামোগত দুর্নীতি। ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্যের নেতৃত্বে প্রকাশিত হোয়াইট পেপারে বলা হয়, ভুয়া ঋণ ও ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে দেশ থেকে, যা বিনিয়োগ করা হয়েছে বিদেশে, বিশেষ করে লন্ডনের রিয়েল এস্টেট খাতে।
শফিকুল আলমের মতে, এই চিত্র ব্রিটিশ শোষণের একটি আধুনিক রূপ, যেখানে পূর্বের মতোই একটি এলিট শ্রেণি বিশেষভাবে লাভবান হয়। যেমন ব্রিটিশরা চালু করেছিল ‘পার্মানেন্ট সেটেলমেন্ট’, ঠিক তেমনি ২০০৮ সালের নির্বাচনও যেন একটি রাজনৈতিক পার্মানেন্ট সেটেলমেন্টে রূপ নেয়—যেখানে রাষ্ট্রক্ষমতা পরিণত হয় একেকজনের ব্যক্তিগত সম্পদ বৃদ্ধির হাতিয়ারে।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এ যাত্রায় নিচুস্তরের নেতাকর্মীরা বেছে নেয় বালুমহাল, বাজারে চাঁদাবাজি কিংবা ক্ষুদ্র ঠিকাদারি। আর উচ্চপর্যায়ের নেতৃত্ব রাজধানীর ব্যাংক লুটে ব্যস্ত, এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও ব্যক্তিগত বাহিনীর মতো ব্যবহার করে।
আবির