ইলিশ মাছ ধরা নিষিদ্ধের সময় ভারতের জেলেরা অবৈধভাবে তা ধরে নিয়ে যায় বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, ‘ইলিশ মাছ আল্লাহর দান, আমাদের বড় সম্পদ। কিন্তু অতীতের সরকার ভারতের নতজানু থাকার কারনে বাংলাদেশে ইলিশ মাছ ধরা নিষিদ্ধের সময় ভারতের জেলেরা আমাদের সমুদ্রসীমায় প্রবেশ করে তা ধরে নিয়ে যেতো। এই সমস্যা সমাধানে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করছে। ইলিশ মাছ নোনা পানি থেকে স্বাদু পানিতে আসা এবং ফেরত যাওয়ার মত মাইগ্রেটরি রুট ঠিক করতে পারলে ইলিশের উৎপাদন বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে এবং ইলিশ আমাদের বড় সম্পদে পরিণত হবে।’ শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় মৎস্যজীবী ও মৎস্যখাতে চরম বৈষম্য রয়েছে উল্লেখ করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, জুলাই ও আগস্টে ছাত্র-জনতা-শ্রমিকদের রক্তক্ষয়ী বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ফলে নতুনভাবে স্বাধীনতা আসলেও মৎস্যজীবী ও মৎস্যখাতে যে বৈষম্য রয়েছে তা দূর করতে সরকার সর্বোচ্চভাবে কাজ করে যাচ্ছে। যারা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে তারাই প্রকৃত মৎস্যজীবী। এক্ষেত্রে কোনভাবেই ব্যবসায়ীরা অন্তর্ভূক্ত হতে পারবে না। মৎস্যজীবীদের মধ্যে মজুরি বৈষম্য সবচেয়ে বেশী। নারী মৎস্যজীবীদের স্বীকৃতিকে বড় ধরনের সমর্থন জানাতে হবে-তাদের সাথে অন্য মৎস্যজীবীদের কোন পার্থক্য করা যাবে না। সুযোগ-সুবিধা দিতে পারলে মৎস্যজীবীরা আর গরীব থাকবে না।’
ফরিদা আখতার বলেন, ‘আমরা যদি মেরিন ফিশারিজকে সত্যিকার অর্থেই ব্যবহার করতে পারি বাংলাদেশ আর গরিব থাকবে না। আমরা শুধু মৎস্য সম্পদের কথা বিবেচনা করি তাহলে দেখা যায়, এই বিশাল প্রজাতির মধ্যে অনেক প্রজাতি এখনও আমাদের আহরণের মধ্যে আসে নি। এমনকি, গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণের সক্ষম উন্নত ভেসেল আমাদের নেই। আমরা জানি না সত্যিকার আমাদের কত প্রজাতির মৎস্য সম্পদ আছে, তাদের মজুদ কেমন।’ সরকার নিজস্ব ভেসেল এনে এ বিষয়ে কাজ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এজন্য দেশের স্বার্থে স্বনামধন্য বিজ্ঞানীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, নদ-নদীর মত সমুদ্র দূষিতমুক্ত নয়। নদীর পানি সমুদ্রে যাচ্ছে সমুদ্রও দূষিত হচ্ছে। দেশে যেভাবে প্লাস্টিক ব্যবহৃত হচ্ছে তা রোধ করা দরকার। আমরা যে মাছ খাচ্ছি-অনেক মাছের মধ্যে মাইক্রো প্লাস্টিক পাওয়া যাচ্ছে। ফলে বাংলাদেশকে প্লাস্টিকমুক্ত করতে আমাদের কাজ করতে হবে। হাওর ও নদীর মাছ রক্ষায় অনেক বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। দেশীয় প্রজাতির মাছের উৎপাদন বাড়িয়ে সবার কাছে পৌঁছে দিতে হবে।
কোস্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মো: রেজাউল করিম চৌধুরীর সঞ্চালনায় সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের উপ-নির্বাহী পরিচালক সনৎ কুমার ভৌমিক। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেছেন মৎস্য অধিদপ্তরের পরিচালক মো: জিয়া হায়দার চৌধুরী, বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের পরিচালক অদ্বৈত চন্দ্র দাস, ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোল্লা এমদাদুল্যাহ প্রমুখ। এক্সপার্ট গেস্ট হিসেবে বক্তৃতা করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক (অব) ড.আব্দুল ওয়াহাব এছাড়া সেমিনারে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার এসময় উপস্থিত ছিলেন।
আকাশ