ওবায়দুল হাসান
প্রধান বিচারপতিসহ সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিতর্কিত বিচারপতিদের দ্রুত পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন। তিনি আগামী রবিবারের মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট খুলে দিতে রাষ্ট্রপতির প্রতি আহ্বান জানান। সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতির কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বৃহস্পতিবার এ দাবি জানান।
অন্যদিকে প্রধান বিচারপতিসহ ৫৬ বিচারপতির পদত্যাগ দাবি করেছেন আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব। আপিল বিভাগে সাত বিচারপতির মধ্যে ছয়জনের পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে। পাশাপাশি হাইকোর্ট থেকে সাত বিচারপতি আপিল বিভাগে নিয়োগ দিয়ে এখান থেকে একজনকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দক্ষিণ হলে ‘সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্যবৃন্দ’ ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন থেকে এ দাবি জানান। অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনও প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের সব বিচারপতির পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে।
সুপ্রীম কোর্ট বার সমিতির সংবাদ সম্মেলনে সুপ্রিম কোর্ট বারের কার্যনির্বাহী সদস্য মো. শফিকুল ইসলাম ও ফাতিমা আক্তার উপস্থিত ছিলেন।
ব্যারিস্টার খোকন বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের সব বিচারপতির পদত্যাগ দাবি করেছেন। আমরা তাদের এই দাবির সঙ্গে একমত। তিনি বলেন, যেসব বিচারপতি সততা, সাহসিকতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে বিচার কাজ পরিচালনা করেছেন, তাদের ভয় নেই। সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতি বলেন, রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নয়, যারা বিচারিক মন নিয়ে সংবিধান ও আইনানুযায়ী বিচার করতে পারবেন এমন যোগ্যদের বিচারক পদে নিয়োগ করতে হবে। বিচারক নিয়োগের নীতিমালা প্রণয়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।
ব্যারিস্টার খোকন শেখ হাসিনার ক্ষমতায় থাকাকালে বিচার বিভাগের নানা অনিয়ম তুলে ধরেন। সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার খোকন বলেন, গুম-খুনের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তাকে আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায় দিয়ে দেশে প্রকৃত সংকট তৈরি করেছেন বলে উল্লেখ করেন ব্যারিস্টার খোকন। অবিলম্বে বিচারপতি খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানান সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতি।
বিচারপতিদের অপসারণ দাবি ॥ বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার জানান, প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের সব বিচারপতির পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ। বুধবার মধ্যরাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে তিনি সাংবাদিকদের একথা জানান। বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, বিচার বিভাগের ফ্যাসিবাদ বিলোপ করতে হবে। আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, বিচার বিভাগে এখনো ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার শরিক বিচারপতিরা বিচরণ করছেন। আমরা শুনতে পেলাম, অভ্যুত্থানের আগে আমাদের যেভাবে আদালতের নামে টালবাহানা করা হতো, ঠিক একই কায়দায় অভ্যুত্থান পরবর্তী ছাত্র-জনতার সরকার ব্যাহত করার প্রচেষ্টা চলমান।
আসিফ মাহমুদ বলেন, আমরা অচিরেই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার সক্রিয় শরিক প্রধান বিচারপতি, আপিল বিভাগের বিচারপতিদের অপসারণ দাবি করছি। অনতিবিলম্বে দেশপ্রেমিক এবং জনগণের পক্ষের বিচারপতিদের ওই শূন্য পদগুলোতে নিয়োগ করে দেশে ছাত্র-জনতার সরকার প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম দ্রুততর করা হোক। আশা করব সকালের মধ্যেই বিচারপতিরা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করবেন। অন্যথায় আমাদের কঠোর কর্মসূচির দিকে যেতে হবে। এছাড়াও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি বিচার বিভাগকে স্বাধীন ও কার্যকরভাবে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় পলিসি বাস্তবায়ন করার আহ্বান থাকবে। দেশের সকল পর্যায়ে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগী, সহযোগীদের স্বেচ্ছায় পদত্যাগের আহ্বানও করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
৫৬ বিচারপতির পদত্যাগ দাবি ॥ প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ আপিল বিভাগের ছয় বিচারপতি এবং হাইকোর্ট বিভাগের ৫০ বিচারপতির পদত্যাগের দাবি উঠেছে। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দক্ষিণ হলে ‘সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্যবৃন্দ’ ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে এ দাবি করা হয়।
‘দলবাজ’ বিচারপতি হিসেবে আখ্যায়িত করে এই বিচারপতিদের স্থলে নতুন করে বিচারপতি নিয়োগ দিয়ে বিচার বিভাগের ‘মর্যাদা ফেরানোর’ দাবিও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যের শুরুতে আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আবু সাঈদসহ নিহতদের স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, গত ১৬ বছর ধরে দেশের আপামর জনগণ এই আওয়ামী লীগের বিচার বিভাগের কাছ থেকে কোনো বিচার পায়নি। বরং খুনি, গণহত্যাকারী শেখ হাসিনা সরকারের সমস্ত অন্যায় পাপের সহযোগী হয়েছে প্রধান বিচারপতিদের নেতৃত্বে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ।
সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক, মো. মোজাম্মেল হোসেন, সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, সেয়দ মাহমুদ হোসেন, হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নাম উল্লেখ করে সৈয়দ মামুন বলেন, ‘এই সমস্ত সংবিধান লঙ্ঘনকারী প্রধান বিচারপতিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আদালতে বিচার করতে হবে।’
এ সময় তিনি ‘রাজপথে আন্দোলন করে কি কোর্টের রায় পরিবর্তন করা যায়?’ প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের এ উক্তির কঠোর সমালোচনা করেন।
পাশাপাশি রিট শুনতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহ সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন বলেও অভিযোগ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। সৈয়দ মামুন তার বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ আপিল বিভাগের ছয় বিচারপতি এবং হাইকোর্ট বিভাগের ৫০ বিচারপতির পদত্যাগের পাশাপাশি সৎ, দক্ষ, নিরপেক্ষ, যোগ্য ব্যক্তিদের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানান।
একইসঙ্গে তিনি সদ্য সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপস, সদ্য পদত্যাগকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন ফকির, দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খানসহ ১২ আইনজীবীকে সামাজিকভাবে বয়কট ও অসহযোগিতার আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, আইনজীবী মোহসীন রশিদ, গিয়াস উদ্দিন, গোলাম রহমান ভুইয়া, গোলাম রহমান, মো. সাইফুর রহমান, তাজুল ইসলাম, ব্যারিস্টার আশরাফুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।