ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ৯ কার্তিক ১৪৩১

কাল পবিত্র ঈদুল আজহা ॥ রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা

ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৪২, ১৫ জুন ২০২৪

ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর

ঈদ আনন্দ পরিবারের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এভাবেই ট্রেনে চেপে ঢাকা ছাড়ছে রাজধানীবাসী

কাল সোমবার পবিত্র ঈদুল আজহা। প্রবৃত্তির দাসত্ব, লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষসহ মনের পশুত্বকে পরাভূত করার শিক্ষা নিয়ে আবারও এসেছে কোরবানির ঈদ। বাঙালি সমাজে কোরবানির ঈদ নামেও পরিচিত মুসলমানদের এই অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। যুগ যুগ ধরে এই ঈদ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর করে আসছে। ঈদের নামাজ শেষে মহান আলাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করবেন সামর্থ্যবান মুসলমানরা।

ঈদুল আজহার সঙ্গে পবিত্র হজের সম্পর্ক রয়েছে। শনিবার মক্কার অদূরে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হওয়ার মধ্য দিয়ে বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা হজ পালন করেছেন। স্থানীয় হিজরি মাস গণনা অনুযায়ী আজ রবিবার সৌদি আরবে ঈদুল আজহা উদযাপিত হচ্ছে। সকালে মুজদালিফা থেকে ফিরে হাজীরা মিনায় অবস্থান করে পশু কোরবানিসহ হজের অন্য কার্যাদি সম্পাদন করবেন।

ঈদুল আজহা হজরত ইব্রাহিম (.) তার পুত্র হজরত ইসমাইলের (.) সঙ্গে সম্পর্কিত। হজরত ইব্রাহিম (.) স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে পুত্র ইসমাইলকে আল্লাহর উদ্দেশে কোরবানি করতে গিয়েছিলেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে এই আদেশ ছিল হজরত ইব্রাহিমের জন্য পরীক্ষা।

তিনি পুত্রকে আল্লাহর নির্দেশে জবাই করার সব প্রস্তুতি নিয়ে সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ইসলামে বর্ণিত আছে, নিজের চোখ বেঁধে পুত্র ইসমাইলকে ভেবে যখন জবেহ সম্পন্ন করেন তখন চোখ খুলে দেখেন ইসমাইলের পরিবর্তে পশু কোরবানি হয়েছে, যা এসেছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে।

সেই ঐতিহাসিক ঘটনার স্মৃতি ধারণ করেই হজরত ইব্রাহিমের (.) সুন্নত হিসেবে পশু জবাইয়ের মধ্য দিয়ে কোরবানির বিধান এসেছে ইসলামী শরিয়তে। সেই মোতাবেক প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য পশু কোরবানি করা ওয়াজিব।

কোরবানির ইতিহাস অত্যন্ত প্রাচীন। সৃষ্টির প্রথম মানব হজরত আদম (.) এর দুই পুত্র হাবিল কাবিল সর্বপ্রথম  কোরবানি করেন। প্রসঙ্গে সূরা মায়েদায় ২৭ নম্বর আয়াতে উল্লেখ রয়েছে, ‘আপনি তাদের আদমের দুপুত্রের বাস্তব অবস্থা পড়ে শোনান। যখন তারা উভয়েই কিছু কোরবানি করেছিলেন তখন তাদের একজনের কোরবানি কবুল হয়েছিল এবং অপরজনেরটি হয়নি।

গরু, মহিষ, উট, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা শ্রেণির প্রাণী দ্বারা কোরবানি করা যায়। কোরবানিকৃত পশুর তিন ভাগের এক ভাগ গরিব-মিসকিন, এক ভাগ আত্মীয়স্বজনের মধ্যে বিলিয়ে দিতে হয়। আবার পুরোটাই বিলিয়ে দেওয়া যায়। এদিকে জিলহজ ফজর নামাজের পর থেকে ১৩ জিলহজ আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর তাকবিরে তাশরিক পাঠ করা ওয়াজিব।আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লালাহু আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।অর্থ : আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান; আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই; আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান; সব প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য। মোট ২৩ ওয়াক্ত নামাজ তাকবিরে তাশরিক পড়তে হবে।

ঈদুল ফিতরের মতো কোরবানির ঈদের তারিখ নিয়ে আনন্দময় অনিশ্চয়তা থাকে না। আট দিন আগেই পশ্চিম আকাশে জিলহজের চাঁদ জানান দিয়েছে কোরবানির বারতা। সামর্থ্যবানদের জন্য পশু কোরবানি করা ওয়াজিব। জিলহজ মাসের ১০ তারিখ ছাড়াও ১১ ১২ তারিখ কোরবানি করা যায়। ইসলামে কোরবানি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। বিভিন্ন বর্ণনা থেকে জানা যায়, পৃথিবীতে মানব জাতির সূচনা থেকেই কোরবানির প্রচলন। হজরত আদম (.)-এর দুই পুত্র হাবিল কাবিল সর্বপ্রথম কোরবানি দিয়েছিলেন। প্রসঙ্গে কুরআনে এসেছে, আপনি তাদের আদমের দুই পুত্রের বাস্তব অবস্থা পাঠ করে শোনান। যখন তারা উভয়ে কিছু কোরবানি করেছিল। তখন তাদের এক জনের কোরবানি গৃহীত হয়েছিল এবং অন্যজনেরটি গৃহীত হয়নি (সূরা মায়েদা-২৭)

আল্লাহর সন্তুষ্টিই কোরবানির মূল উদ্দেশ্য। তার পথে প্রয়োজনে জীবন সবচেয়ে প্রিয় বস্তু উৎসর্গের জন্য তৈরি হওয়ার শিক্ষাই এতে নিহিত। জন্যই কোরবানির পশু জবাইয়ের সময় বলা হয়, ‘ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহ্ইয়াইয়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন।অর্থাৎ নিশ্চয় আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন, আমার মৃত্যু সবই আল্লাহর জন্য, যিনি নিখিল বিশ্বের প্রতিপালক।

ইসলামে কোরবানি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। পবিত্র কুরআনে সূরা কাউসারে বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি করুন।রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘ঈদুল আজহার দিন কোরবানির চেয়ে আর কোনো কাজ আল্লাহর কাছে অধিক পছন্দনীয় নয়।

বরাবরের মতো এবারও রাজধানীতে কোরবানির ঈদের প্রধান জামাত হবে জাতীয় ঈদগাহ মাঠে সকাল সাড়ে ৭টায়। রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন সেখানে ঈদের নামাজ আদায় করবেন। প্রতি বছরের মতো এবারও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজের ৫টি জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

আগামীকাল সকালে মুসল্লিরা নিকটস্থ ঈদগাহ বা মসজিদে ঈদুল আজহার দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করবেন। খতিব নামাজের খুতবায় তুলে ধরবেন কোরবানির তাৎপর্য। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই একত্রে নামাজ আদায় শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।

দেশবাসীকে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা জিএম কাদের বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রীয়ভাবে সরকারি, আধা সরকারি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ভবনগুলোতে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। জাতীয় সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো ঈদ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে। ঈদের দিন সরকারিভাবে হাসপাতাল, কারাগার, এতিমখানা শিশু সদনে উন্নত বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হবে। গতকাল শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে ঈদের ছুটি। এদিকে রাজধানী ঢাকায় বেশ কয়েকটি ঈদের নামাজের জামাত হবে। ঈদের জামাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ্যাব পুলিশসহ প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা সার্বক্ষণিক নজরদারিতে থাকবে। ঢাকায় কোন মসজিদ বা ঈদগাহে কখন জামাত হবে, ইতোমধ্যে সেই তথ্য বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রকাশ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।

×