
.
ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ ॥ ঈদুল আজহা উপলক্ষে এ বছর স্থায়ী ও অস্থায়ীসহ ঢাকা দুই সিটি করপোরেশনে মোট ১৮টি পশুর হাট থাকবে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) গাবতলীর স্থায়ী হাটসহ মোট ৯টি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) এলাকায় সারুলিয়া স্থায়ী হাঁটসহ মোট ৯টি। অস্থায়ী হাটের ইজারা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।
ডিএনসিসির সূত্র জানায়, ঈদুল আজহা উপলক্ষে এ বছর গাবতলী স্থায়ী হাটের পাশাপাশি ৮টি স্থানে অস্থায়ী পশুর হাট বসানো হবে। অস্থায়ী হাটগুলো হলো-ভাটারা (সাইদ নগর) সংলগ্ন খালি জায়গা, উত্তরা দিয়াবাড়ী ১৬ ও ১৮ নম্বর সেক্টর বউবাজার এলাকার খালি জায়গা, বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং আফতাব নগর ব্লক বি হতে এইচ পর্যন্ত খালি জায়গা, মিরপুর সেকশন-৬, ওয়ার্ড ৬ এর খালি জায়গা, মোহাম্মদপুর বছিলার ৪০ ফুট রাস্তা সংলগ্ন খালি জায়গা, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট খেলার মাঠের খালি জায়গা, কাওলা শিয়ালডাঙ্গা সংলগ্ন খালি জায়গা এবং ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত কাঁচকুড়া বেপারীপাড়ার রহমান নগর আবাসিক প্রকল্পের খালি জায়গা।
এ বিষয়ে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা জনকণ্ঠকে বলেন, ‘ঈদুল আজহা উপলক্ষে ইতোমধ্যে ৮টি অস্থায়ী পশুর হাটের ইাজারা চূড়ান্ত হয়েছে। এ ছাড়া গাবতলী স্থায়ী হাটসহ এবার মোট ৯টি পশুর হাট থাকবে। তবে আফতানগরের হাটের বিষয়ে আদালতের রায়ের অপেক্ষায় রয়েছে। এটা যদি বাদ যায় তা হলে অস্থায়ী হাট হবে ৭টি।’ ঈদের দিনসহ পাঁচ দিন পশুর হাট বসাতে পারবে বলে জানান তিনি।
ডিএসসিসির সূত্র জানায়, কোরবানি ঈদ উপলক্ষে এ বছর ঢাকার সংসদীয় আসন বিবেচনা করে স্থায়ী ও অস্থায়ীসহ মোট ৯টি পশুর হাট থাকবে। এর মধ্যে গত বছরের ন্যায় এবারও সারুলিয়া হাট হচ্ছে স্থায়ী। বাকি আটটি হাট অস্থায়ীভাবে বসানো হবে। দক্ষিণ সিটির আওতাধীন প্রতিটি সংসদীয় আসনে একটি করে হাট বসবে। দুর্ভোগ কমানোসহ সংসদীয় আসন প্রতি হাট বসানোর সিদ্ধান্তে দু’টি হাট বাতিল করা হয়েছে। উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রীসংঘ ক্লাব ও শ্যামপুর কদমতলী ট্রাক স্ট্যান্ডের খালি জায়গার পশুর হাট বাতিল করা হয়েছে। অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাটের জন্য ২৭ দফা শর্তাবলি মানতে হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
্িডএসসিসির ৮টি অস্থায়ী হাট হলো-হাজারীবাগ এলাকায় ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি কলেজ মাঠসংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা; পোস্তগোলা শ্মশানঘাটসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা; মেরাদিয়া বাজারসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা; লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাবসংলগ্ন খালি জায়গা ও কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন বিশ্ব রোডের আশপাশের এলাকা খালি জায়গা; দনিয়া কলেজ মাঠসংলগ্ন খালি জায়গা; ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনালসংলগ্ন উন্মুক্ত জায়গা; আমুলিয়া মডেল টাউনের আশপাশের খালি জায়গা ও লালবাগের রহমতগঞ্জ ক্লাব সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা। এ বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. রাসেল সাবরিন জনকণ্ঠকে বলেন, ‘কোরবানি ঈদ উপলক্ষে এ বছর জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয় এমন স্থানগুলোতে হাট বসানো হবে না। এবার দু’টি স্থান থেকে পশুর হাট বাতিল করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এবার ডিএসিসিসি এলাকায় ৯টি হাট বসছে। গতবার ১১টি স্থানে হাট বসানো হয়েছিল। পশুর হাট দিয়ে গত বছর ২০ কোটি টাকার বেশি আয় হয়েছিল।’ এ বছর ২৫ কোটি টাকার টার্গেট করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
হাট রক্ষাবেক্ষণে ২৭ দফা নির্দেশনা ॥ ঈদের হাট রক্ষাবেক্ষণ ও ইজারা সংশ্লিষ্ট ২৭ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ডিএসসিসির পক্ষ থেকে। এগুলো হলো-অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাট ঈদের দিনসহ মোট ৫ (পাঁচ) দিন চালু থাকিবে অর্থাৎ ঈদের দিন ও পূর্বে ৪ (চার) দিন। অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাট হতে বিক্রীত গবাদিপশুর মূল্যের ওপর ৫ শতাংশ (শতকরা পাঁচ) হারে হাসিল/ফি আদায় করা যাবে এবং প্রতিটি হাসিল বুখে ধার্যকৃত হার স্পষ্টভাবে লিখে সহজে দৃশ্যমান হয় এমন স্থানে টাঙিয়ে রাখতে হবে। সংযুক্ত নক্সা ও তফসিলে বর্ণিত চৌহদ্দির বাইরে কোনো অবস্থাতেই হাট বসানো যাবে না। আদালতের নির্দেশনামতে, রাস্তায় ও খেলার মাঠ/শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে পশুর হাট বসানো যাবে না এবং রাস্তা খোঁড়া বা খুঁটি স্থাপন করা যাবে না।
পশুর হাটের সুবিধাজনক স্থানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জন্য ১টি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সদস্যদের জন্য ১টি, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রাণী স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের নিমিত্ত ১টি এবং জাল নোট শনাক্তকরণ মেশিন স্থাপনের জন্য ১টি বুথসহ মোট বড় আকারে ৪ (চার) টি অস্থায়ী বুথ নির্মাণ করতে হবে এবং প্রতিটি বুথের ওপর পরিচিতিমূলক ডিজিটাল ব্যানার টাঙিয়ে দিতে হবে। পশুর হাটে প্রয়োজনীয় সংখ্যক অস্থায়ী টয়লেট ও পর্যাপ্ত সুপেয় পানি সরবরাহের ব্যবস্থা ইজারাদারকে করতে হবে। ক্রেতা সাধারণের গাড়ি পার্কিংয়ের সুব্যবস্থা রাখতে হবে।
পশুর হাটের প্রবেশ পথ ও বাহির পথ আলাদা করতে হবে। হাটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সিটি কর্পোরেশনের জন্য উঁচু অস্থায়ী প্রয়োজনীয় সংখ্যক ওয়াচ টাওয়ারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। হাটে বিভিন্ন ধরনের গণসচেতনতামূলক ব্যানার টাঙ্গাতে হবে। হাইওয়ে এবং মেইন রোড-এ কোনো প্রকার পশু লোড-আনলোড করা যাবে না ও হাট বসানো যাবে না। হাটের আশপাশের সড়ক অথবা জনপথ দিয়ে গমণকারী কোন অস্থায়ী কোরবানীর পশু ব্যবসায়ীর নিকট হতে জোর পূর্বক কোনো হাসিল/ফি আদায় করা যাবে না।
সিটি কর্পোরেশন, স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে সকল কাজ নিশ্চিত করতে হবে। হাট শেষ হওয়ার এক দিনের মধ্যে বাঁশ ও বাশের খুটি অপসারণ না করা হলে ব্যয়কৃত অর্থ জামানতের অর্থ থেকে সমন্বয় করা হবে। ইজারাদার কর্তৃক আগামী ২৫ জুনের পূর্বে কোরবানির পশুর হাটে বাঁশের খুঁটি বসানো যাবে না এবং কোরবানির পশু হাটে প্রবেশ করাতে পারবে না। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পশু ব্যবসায়ীদের জন্য খাবারের ক্যান্টিন/হোটেল স্থাপনের ব্যবস্থা, ভেটেরিনারি মেডিক্যাল টিমের জন্য স্টল বরাদ্দের ব্যবস্থা থাকতে হবে।