ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

এবার পাতাল রেল

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

প্রকাশিত: ২৩:০৪, ৩১ জানুয়ারি ২০২৩

এবার পাতাল রেল

উড়াল মেট্রোরেলের পর এবার পাতাল রেলের জগতে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ

উড়াল মেট্রোরেলের পর এবার পাতাল রেলের জগতে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। মাটির ১০ মিটার নিচ দিয়ে এই রেলপথ নির্মাণ করা হবে। তবে ঘনবসতি এলাকায় মাটির ২০-৩০ মিটার নিচ দিয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে একটি টানেলের উপরে আরেকটি টানেল দিয়ে এই রেলপথ নির্মাণ করা হবে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জের পিতলগঞ্জে ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-১ এর ডিপো নির্মাণকাজের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এই ডিপোটি পাতাল ও উড়াল দুই ধরনের মেট্রোরেলের জন্য ব্যবহৃত হবে। উড়াল ও পাতাল রেলপথের সমন্বয়ে ৩১ দশমিক ২৪ কিলোমিটার হবে এমআরটি লাইন-১ প্রকল্পটি। এর মধ্যে রাজধানীর উত্তরা বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার হবে মাটির নিচ দিয়ে। এ ছাড়া নতুন বাজার থেকে পূর্বাচলের পিতলগঞ্জ পর্যন্ত ১১ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার হবে উড়াল পথে। এই প্রকল্পটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।

এর মধ্যে ৩৯ হাজার ৪৫০ কোটি ৩২ লাখ টাকা অর্থ সহায়তা করবে জাইকা। বাকি ১৩ হাজার ১১১ কোটি ১১ লাখ টাকা সরকারের নিজস্ব ফান্ড থেকে ব্যয় করা হবে। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শেষ হলে দৈনিক ৮ লাখ যাত্রী পরিবহন করা যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
এ বিষয়ে এমআরটি লাইন-১ এর প্রকল্প পরিচালক মো. আবুল কাশেম ভূইয়া জনকণ্ঠকে বলেন, ‘পিতলগঞ্জের ডিপো নির্মাণের মাধ্যমে পাতালের কাজ শুরু হয়ে যাবে। কারণ এই ডিপো উড়াল ও পাতাল দুই ধরনের রেলওয়ের জন্য ব্যবহার করা হবে। তবে উত্তরা বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত পাতাল রেলের অংশের কাজের জন্য ইতোমধ্যে ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ বছরের মধ্যে রেললাইন নির্মাণকাজও শুরু হবে। মাটির ১০-২০ মিটার নিচ দিয়ে টানেল নির্মাণের মাধ্যমে পাতাল রেলপথ নির্মাণ করা হবে। টানেল তৈরির জন্য বোরিং মেশিন ব্যবহার করা হবে।’    
তিনি জানান, পাতাল রেল নির্মাণের জন্য মাটির ১০-২০ মিটার নিচে টিউব বোরিং মেশিন (টিবিএম) দিয়ে মাটি খনন করে টানেল করা হবে। এই টানেলের টিউবের ভেতরে রেললাইন বসানো হবে। দু’টি টিউব যাতে পাশাপাশি না হয় সেজন্য কোথাও কোথাও মাটির ৩০ মিটার নিচে পাতাল রেল নির্মাণ করা হবে। সেক্ষেত্রে একটি টিউবের উপরে আরেকটি টিউব নির্মাণ করা হবে। পাতাল রেল নির্মাণের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন হয়েছে। আশা করছি চলতি বছরের মধ্যে পাতাল রেলপথ নির্মাণের কাজ শুরু হবে। 
দ্বিতীয় মেট্রোরেল (এমআরটি লাইন-১) ॥ দু’টি রুটে ৩১ দশমিক ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি লাইন-১ নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে বিমানবন্দর রুটে উত্তরা বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার হবে মাটির নিচ দিয়ে (পাতাল)। এই রুটে স্টেশন হবে ১২টি। এগুলো হলো-বিমানবন্দর, বিমানবন্দর টার্মিনাল-৩, খিলক্ষেত, নদ্দা, নতুন বাজার, উত্তর বাড্ডা, বাড্ডা, আফতাব নগর, রামপুরা, মালিবাগ, মালিবাগ, রাজারবাগ ও কমলাপুর।
আর পূর্বাচল রুটে ১১ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার রেলপথে স্টেশনটি হবে ৯টি। এগুলো হলো-নতুন বাজার, নদ্দা, জোয়ার সাহারা, বোয়ালিয়া, মস্তুল, শেখ হাসিনা ক্রিকেট স্টেডিয়াম, পূর্বাচল সেন্টার, পূর্বাচল পূর্ব ও পূর্বাচল টার্মিনাল। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে সংশ্লিষ্টরা জানান।
এ বিষয়ে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক জনকণ্ঠকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার  বেলা ১১টায় পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প এলাকায় প্রধানমন্ত্রী এই কাজের উদ্বোধন করবেন।

এ উপলক্ষে রূপগঞ্জ জনতা উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন রাজউকের কমার্শিয়াল প্লট মাঠে সভা হবে। রূপগঞ্জের পিতলগঞ্জ মৌজায় ৮৮ দশমিক ৭১ একর ভূমিতে ডিপো হবে। এ খাতে ব্যয় হবে ৬০৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। বিমানবন্দর রুট ও পূর্বাচল রুটে চলাচলকারী সব মেট্রো ট্রেন এই ডিপোর সুবিধা ব্যবহার করতে পারবে। ডিপো নির্মাণের মাধ্যমে পাতাল রেলের নির্মাণকাজ শুরু হবে। এমআরটি-১ প্রকল্প দুটি অংশে বাস্তবায়িত হবে। একটি অংশ হবে পাতাল ও অপরটি হবে উড়াল।’ 

ডিএমটিসিএলের সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগরী ও পার্শ্ববর্তী এলাকার যানজট নিরসনে এভাবে উড়াল ও পাতাল রেলের সমন্বয়ের নির্মাণ করা হচ্ছে মেট্রোরেলের ৬টি লাইন। পুরো রেলপথ হবে ১২৮ দশমিক ৭৪১ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৬৭ দশমিক ৫৬৯ কিলোমিটার হবে উড়াল পথে এবং ৬১ দশমিক ১৭২ কিলোমিটার হবে মাটির নিচ দিয়ে। ২০৩০ সালের মধ্যে মেট্রোরেলের এই ছয়টি লাইনের নির্মাণকাজ শেষ হবে।
এর মধ্যে প্রথম মেট্রোরেল ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-৬। নির্মাণ করা হচ্ছে উড়ালপথে। রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়ী-মিরপুর-ফার্মগেট-মতিঝিল-কমলাপুর পর্যন্ত এর দৈর্ঘ্য হবে ২১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার। এই মেট্রোরেলের গত ২৮ ডিসেম্বরে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার অংশ চালু করা হয়েছে।
তৃতীয় মেট্রোরেল এমআরটি লাইন-৫ নর্দান (উত্তর) রুট। উড়াল ও পাতাল পথের সমন্বয়ে এটি হবে ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ। এর মধ্যে সাভারের হেমায়েতপুর থেকে আমিনবাজার পর্যন্ত ৫ দশমিক ৬০ কিলোমিটার হবে উড়াল। এ রুটে স্টেশন হবে ৪টি। এগুলো হলো-হেমায়েতপুর, বালিয়ারপুর, বিলামালিয়া ও আমিনবাজার।
চতুর্থ মেট্রোরেল এমআরটি লাইন-৫ সাউর্দান (দক্ষিণ) নির্মাণ হবে গাবতলী-আফতাবনগর-দাশেরকান্দি রুট। উড়াল ও পাতাল পথের সমন্বয়ে এই রেলপথটি হবে ১৭ দশমিক ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ।
পঞ্চম মেট্রোরেল এমআরটি লাইন-২ ॥ উড়াল ও পাতাল পথের সমন্বয়ে গাবতলী থেকে কাঁচপুর সেতু হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে এই এমআরটি লাইন-২ রেলপথ।
ষষ্ঠ মেট্রোরেল এমআরটি লাইন-৪। এমআরটি লাইন-৪ উড়ালপথে নির্মাণ করা হবে এই মেট্রোরেল। রাজধানীর কমলাপুর থেকে নারায়নগঞ্জ পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে রেলপথটি। ২০৩০ সালের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়া কথা রয়েছে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথের পাশদিয়ে এই মেট্রোরেল নির্মাণ করা হবে। পাবলিক প্রাইভেট পাটনারশিপ (পিপিপি) ভিত্তিতে রেলপথটি নির্মাণের কথা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

×