ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলি পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তা

প্রকাশিত: ১৬:৫১, ৪ অক্টোবর ২০২২

শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলি পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তা

শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা 

তিন বছরেও ১৭তম নিবন্ধন নিয়োগের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আয়োজন করতে পারেনি বেসরকারী শিক্ষক নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা কবে হবে তা এখনও অজানা।

এমন অবস্থায় বেসরকারী শিক্ষক নিয়োগের ১৭তম নিবন্ধনের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার অনিশ্চয়তা বাড়ছেই। একাধিকবার পরীক্ষার তারিখ প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েও নানা অজুহাতে পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। চলতি বছর শেষেও এ পরীক্ষা আয়োজনের দৃশ্যমান কোন কর্মকান্ডও চোখে পড়ছে না। ফলে চরম অনিশ্চয়তায় আছেন ১২ লাখ চাকরিপ্রার্থী।

এনটিআরসিএ ২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারি ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। ওই বছরের ১৫ মে প্রিলি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়। করোনার কারণে তখন পরীক্ষা স্থগিত হয়। এরপর প্রায় তিন বছর হতে চলেছে। এই সময়ের মধ্যে তিনটি বিসিএস পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে পিএসসি। এমন কোন নিয়োগ প্রতিষ্ঠান নেই যেখানে নিয়োগ পরীক্ষা হয়নি। তবে এক্ষেত্রে শুধু ব্যতিক্রম এনটিআরসিএ।

যেসব সঙ্কট দেখাচ্ছে এনটিআরসিএ  পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা না করার কারণ হিসেবে অনেক ধরনের সঙ্কট দেখিয়েছে এনটিআরসিএ। একটি সমস্যার সমাধান হলে অন্য সমস্যা সামনে আসছে। 

প্রথম পর্যায়ে করোনা মহামারীর কারণে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরীক্ষা আয়োজনে কেন্দ্র সমস্যায় এই নিয়োগ পরীক্ষা আটকে যায়। এরপর সংস্থাটিতে সিস্টেম এনালিস্ট না থাকা সর্বোপরি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মতি নিয়ে ধোঁয়াশায় পরীক্ষার তারিখ দিতে পারেনি তারা। পরীক্ষা আয়োজনে দীর্ঘ সময় ব্যয় করায় প্রশ্ন রাখার ট্রাঙ্ক ও নানা মূল্যবানসামগ্রী নষ্ট হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। 

ফলে নতুন করে এসব পরীক্ষাসামগ্রী কিনতে হচ্ছে এনটিআরসিএকে। প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষা বোর্ডের সঙ্গে পরীক্ষা কেন্দ্র ও প্রশ্ন সংরক্ষণের চুক্তি করতে ব্যর্থ হয় এনটিআরসিএ। এই চুক্তি নিয়ে নানা আলোচনায় কাটে প্রায় এক বছর। পরে ইস্কাটনের প্রতিযোগিতা কমিশনের দুটি ফ্লোর ভাড়া নিয়েছে তারা। 

সূত্র জানায়, ১৭তম নিবন্ধনের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য দেশব্যাপী ১৯টি সেন্টার প্রয়োজন। এর মধ্যে ঢাকায় পরীক্ষা দেয় ৫-৬ লাখ আবেদনকারী। ঢাকার বাইরে ১৮ জেলায় ৬ লাখ পরীক্ষার্থী রয়েছে। 

প্রশ্ন প্রণয়ন ও খাতা দেখার বিষয়ে বুয়েটের সঙ্গে আলোচনায় বসে তারা। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি অনেক ব্যয়সাপেক্ষ হওয়ায় পিছিয়ে যায় এনটিআরসিএ। এখন প্রশ্ন প্রণয়ন ও খাতা দেখার বিষয়টি দেখভাল করবে এনটিআরসিএ। শুধু ফল প্রকাশ করা হবে বাংলাদেশ টেলিটকের মাধ্যমে।

অগ্রগতি কতদূর : বেসরকারী শিক্ষক নিয়োগ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানটির পরীক্ষা আয়োজনে তাদের তৎপরতা অব্যাহত আছে বলে দাবি করা হচ্ছে। এরই মধ্যে স্থানের সঙ্কট দূর হয়েছে। সম্পন্ন হয়েছে ওএমআর শীটসহ বেশ কিছু কাজ। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি না পাওয়ায় এ বিষয়ে কোন কিছুই বলতে নারাজ এনটিআরসিএ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এছাড়াও সিস্টেম এনালিস্ট নিয়োগের বিষয়টি এখনও ঝুলে থাকায় প্রতিষ্ঠানটি শতভাগ প্রস্তুতি যে নিয়েছে তা বলা যাচ্ছে না।

এনটিআরসিএ সচিব ওবায়দুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, জায়গার সমস্যাটি শতভাগ দূর হয়নি। পরীক্ষার প্রশ্ন, রেজাল্ট তৈরির মেশিনসহ নানা কার্যক্রম চালাতে নির্দিষ্ট স্থান প্রয়োজন। এর আগে শিক্ষা বোর্ডের জায়গা ব্যবহার করলেও এবার তা সম্ভব হয়নি। তবে এবার পরীক্ষা উপযোগী জায়গা পাওয়া গেছে। আমরা মোটামুটি পরীক্ষা নিতে প্রস্তুত।

এনটিআরসিএ চেয়্যারম্যান দেখা দেন না, ফোনও ধরেন না: ১৭তম প্রিলিমিনারি আবেদনকারীদের পক্ষে কাজ করছেন জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ১৫ বার এনটিআরসিএকে পরীক্ষার আয়োজনে স্মারকলিপি দিয়েছেন চাকরিপ্রার্থীরা। কয়েকবার মানববন্ধন করা হয়েছে। কিন্তু এনটিআরসিএ শুধু বেকারদের মৌখিক আশ্বাসই দিয়েছে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। 

তবে দুঃখের বিষয় গেল দেড় বছরে চেয়ারম্যানের সাক্ষাত পাননি বেকাররা। তিনি  তাদের কোন প্রতিশ্রুতিও দেননি। বিষয়টি জানতে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান এনামুল কাদির খানের মুঠোফোনে একাধিক কল ও খুদে বার্তা পাঠিয়েও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, অন্য কোন চাকরির পরীক্ষায় আবেদন ৩০ বছরের আগে করলেই আর কোন সমস্যা নেই। কারণ চাকরি কেউ ১০ বছর পরে পেলেও বয়সের কোন বাধা হয় না। কিন্তু শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় শুধু পাস করলেই হয় না। বয়সের জটিলতা আছে এখানে। এ কারণে যথা সময়ে পরীক্ষা আয়োজন না করা হলে ক্ষতি চাকরিপ্রত্যাশীদেরই হয়।

১২ লাখ বেকারের হতাশা : নিবন্ধনের মাধ্যমে শিক্ষকতা পেশায় আবেদনের সর্বোচ্চ বয়স ৩৫ বছর। তিন বছর পরীক্ষা না হওয়ায় ১২ লাখ চাকরিপ্রত্যাশীর মধ্যে হতাশা বেড়েছে। অনেকের বয়স ৩৫ বছর পেরিয়েছে। দ্রুত পরীক্ষা না হলে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি থেকে বাদ পড়ার শঙ্কা রয়েছে এসব আবেদনকারীর। পরীক্ষা না হলে লাগাতার আন্দোলনে যাওয়ার হুমকিও দিয়েছেন তারা। 

তারা জানান, আমরা দিন রাত পরীক্ষার তারিখ জানতে ভবনটিতে যাতায়াত করছি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কোন কর্মকর্তা এ বিষয়ে মুখ খুলছেন না। তারা আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার অনুরোধ করছেন। পরীক্ষার তারিখ নিয়ে কেন মন্ত্রণালয়-এনটিআরসিএ টানাপোড়েন চলবে!

এনটিআরসিএর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি বছর একবার শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার ব্যবস্থা করবে। কিন্তু করোনার পর তারা এ নিয়ম মানছে না। নিয়োগ পরীক্ষার্থী কামরুল ইসলাম বলেন, ১২ লাখ আবেদনকারীর অনেকের স্বপ্ন শিক্ষকতায় যুক্ত হওয়া। কিন্তু এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে যেখানে কেউ পরীক্ষায় ভাল ফল করেও বয়স জটিলতায় শিক্ষক হতে পারবেন না। কারণ একটি পরীক্ষার প্রিলি দিতেই যদি ৩ বছর লেগে যায় সেক্ষেত্রে পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়েই প্রশ্ন ওঠে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নিবন্ধন পরীক্ষার অনুমতির ফাইল এখনও পাস হয়নি। যে কারণে পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করতে পারছে না বেসরকারী শিক্ষক নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ। জানতে চাইলে অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-২) আবদুন নূর মুহম্মদ আল ফিরোজ বলেন, খুব বেশি দিন হয়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এসেছি। বিষয়টি আমার জানা ছিল না। পরীক্ষার অগ্রগতির বিষয়ে খোঁজ নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি। 

এমএস

×