ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

‘মেড ইন পাকিস্তান’ লেখা অস্ত্র উদ্ধারের তদন্ত রহস্যের জালে আটকা

শংকর কুমার দে

প্রকাশিত: ০০:০৬, ১ অক্টোবর ২০২২

‘মেড ইন পাকিস্তান’ লেখা অস্ত্র উদ্ধারের তদন্ত রহস্যের জালে আটকা

‘মেড ইন পাকিস্তান’

রাজধানী ঢাকায় ‘মেড ইন পাকিস্তান’ লেখা গ্রেনেড-গুলি অস্ত্রের চালান উদ্ধারের মামলার তদন্ত রহস্যের জালে আটকা পড়ে আছে। গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এর কাছে সাহায্য-সহযোগিতা চেয়েছিল বিএনপি-জামায়াত জোট। ওই সময়ে রাজধানীর বিজয়নগর এলাকার ড্রেনে পরিত্যক্ত অবস্থায় পিস্তল ও গুলি উদ্ধার করে পুলিশ।

উদ্ধার হওয়া সেই অস্ত্রের চালানের রহস্য উদঘাটন হওয়ার আগেই এখন কড়া নাড়ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। যখনই জাতীয় সংসদ নির্বাচন বা স্থানীয় কোন নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসে তখনই অস্ত্রের ঝনঝনানি শুরু হয়। এমনকি অস্ত্র চোরাচালান বেড়ে যায়। এই দীর্ঘ সময়েও মেড ইন পাকিস্তান অস্ত্রের চোরাচালান রহস্য উদঘাটন না হওয়ায় অস্ত্র চোরাকারবারিদের তৎপরতা বেড়ে যেতে পারে বলে ধারণা গোয়েন্দা সংস্থার।
তদন্ত সংস্থার সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মেড ইন পাকিস্তান লেখা গ্রেনেড-গুলি, অস্ত্রের চোরাচালানী চক্রের শিকড় অনেক গভীরে। এই চক্রের সঙ্গে জড়িত দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারী। বড় ধরনের নাশকতা ও ধ্বংসাত্মক কর্মকা- চালানোর নীল- নকশা তৈরি করে দেশের ভেতরে আনা হয় মেড ইন পাকিস্তান লেখা গ্রেনেড-গুলি অস্ত্রের চালান। নাশকতা ও সহিংস সন্ত্রাসী কর্মকা-ে ব্যবহারের জন্য ওই অস্ত্রের চোরাচালান পাঠানোর বিষয়ে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই জড়িত থাকার অভিযোগে তদন্ত শুরু হয়ে গত তিন বছরে বেশি দূর অগ্রসর হতে পারেনি। এই ঘটনাটির তদন্ত করার দায়িত্ব দেয়া হয় পুলিশ ও ছায়া তদন্তের দায়িত্ব পায় গোয়েন্দা সংস্থা।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এর কাছে সাহায্য-সহযোগিতা চেয়েছিল বিএনপি-জামায়াত জোট। বিএনপি-জামায়াত জোটের পক্ষে লবিং করেছে লন্ডনে পলাতক সাজাপ্রাপ্ত তারেক জিয়া। মেড ইন পাকিস্তান লেখা গ্রেনেড-গুলি অস্ত্রের চালান উদ্ধারের পর এই ধরনের অভিযোগ উঠার পর তদন্ত শুরু করে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা।

একাদশ নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপ, গোয়েন্দা নজরদারির কারণে অস্ত্রের গায়ে লেখা মেড ইন পাকিস্তান গুলি-গ্রেনেডের অস্ত্রের চালান আটক হওয়ার ঘটনা ঘটে। অস্ত্রের ওই চালান আটক করে ফেলায় বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বড় ধরনের নাশকতা ও সহিংসতা ঘটানো যায়নি বলে তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থার দাবি।
গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর বিজয়নগরের ডাস্টবিন থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ৮ রাউন্ড নাইন এমএম পিস্তলের গুলি, ২৮ রাউন্ড একে ফোর্টি সেভেন রাইফেলের গুলি ও ১৯ রাউন্ড শটগানের গুলি উদ্ধার করা হয়েছে যাতে গুলির গায়ে লেখা মেড ইন পাকিস্তান। গুলি ও তাজা গ্রেনেড উদ্ধার করার পর বিস্ময়ে হতবাক হয় পুলিশ। খবর পেয়ে গুলি উদ্ধার ও গ্রেনেড নিষ্ক্রিয় করে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের বম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা।
পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই বাংলাদেশের জঙ্গি গোষ্ঠী কিংবা সন্ত্রাসীদের জন্য এসব গুলি, গ্রেনেড পাঠিয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দা সংস্থা। পরিত্যক্ত অবস্থায় যেসব গুলি ও গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়েছে তার সঙ্গে কোন অস্ত্র পাওয়া যায়নি। এতে অনুমিত হওয়া স্বাভাবিক যে অস্ত্রের চালানও এসে থাকতে পারে, যা জঙ্গী গোষ্ঠী কিংবা সন্ত্রাসীদের হাতে চলে গিয়ে থাকতে পারে। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ে সন্ত্রাসী বা  জঙ্গী গোষ্ঠীর হাতে চলে যাওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদ ব্যবহৃত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, মেড ইন পাকিস্তান লেখা গুলি ও গ্রেনেড উদ্ধারের ঘটনায় প্রমাণ করে এগুলো পাকিস্তান থেকেই এসেছে। এ ধরনের অস্ত্র, গুলি, গ্রেনেড ইতিপূর্বে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই পাঠিয়েছে বলে তদন্ত করে দেখেছি। বিশেষ করে জঙ্গী গোষ্ঠী ও ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার জন্য এ ধরনের অস্ত্র, গুলি, গ্রেনেড পাঠিয়েছে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই।
চট্টগ্রামের দশ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই জড়িত থাকার বিষয়টি তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে সাবেক বিরোধী দলীয় নেতা, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার উদ্দেশ্যে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেডের উৎসও একই স্থান পাকিস্তানেই। ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটসহ সীমান্ত এলাকায় উলফা গোষ্ঠীর জন্য পাঠানো অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে একাধিকবার, যার সঙ্গে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই জড়িত থাকতে পারে।
গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও নির্বাচনের দুই-তিন বছর আগে থেকে দেশে সহিংস সন্ত্রাস, নাশকতা, নৈরাজ্য করে আসছিল সরকার বিরোধী একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠী। এর মধ্যে জঙ্গী গোষ্ঠী, জামায়াত-শিবির ও বিএনপির উগ্রপন্থী পরিচিত একটি চক্র।

রাজধানী পল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশেপাশে সহিংস সন্ত্রাসের তা-বলীলা চালিয়েছে বিএনপি উগ্রপন্থী নেতা-কর্মী নামধারী দুর্বৃত্তরা। কর্তব্যরত পুলিশের উপর আক্রমণ করে পুলিশ সদস্যদের হত্যা করে দেশে অস্থিতিশীল ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে নির্বাচন বানচাল করাই ছিল সহিংস সন্ত্রাস চালানোর উদ্দেশ্য বা মোটিভ।
গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশকে নিয়ে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র চলছে। সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই কোন অপরাধী চক্র এই বিপুল পরিমাণ অস্ত্র গোরাবারুদ এনে থাকতে পারে। এসব চক্রের হাতে আরও অস্ত্র-গোলাবারুদ আছে কি না খুঁজে দেখা হচ্ছে। কারা কী কারণে কী উদ্দেশ্যে এই গোলাবারুদ মজুদ করেছে, আবার ফেলে দেয়ার পর পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার হচ্ছে, তা রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চলছে।

×