চাল ডাল আটা তেল ডিম পেঁয়াজের পাশাপাশি সাবান সোডার মতো পণ্যও নাগালের বাইরে
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর সরকারের সব উদ্যোগ ব্যর্থ করে হঠাৎ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। চাল, ডাল, আটা, চিনি, ভোজ্যতেল, ডিম ও পেঁয়াজের মতো ভোগ্যপণ্যের পাশাপাশি নিত্য ব্যবহার্য সাবান, সোডা এবং টুথপেস্টের মতো পণ্যসামগ্রীর দামও বাড়ছে হু হু করে। আরেক দফা বেড়েছে ভোজ্যতেলের দাম। ওয়াসা পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম ইতোমধ্যে কয়েক দফা বাড়ানো হয়েছে। জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে দিশেহারা সীমিত আয়ের সাধারণ মানুষ। এর সঙ্গে রয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফা করার প্রবণতা।
আয় না বাড়লেও ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সঞ্চয় ভেঙ্গে খাচ্ছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা। যার সঞ্চয় নেই, জীবন নির্বাহ করতে গিয়ে তিনি কোন না কোনভাবে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। দুর্বিষহ হয়ে উঠছে জনজীবন। দ্রবমূল্য শীঘ্রই কমবে এরকম কোন সম্ভাবনাও দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণ, যে কোন জ্বালানির দাম বাড়লে সেই প্রভাব সামষ্টিক অর্থনীতিতে দীর্ঘ ৯ মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে থাকে। এ সময় দেশে খাদ্য ও খাদবহির্ভূত পণ্যে মূল্যস্ফীতি ঘটবে। এরপর পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক হয়ে আসে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
জানা গেছে, বৈশ্বিক সঙ্কটের নেতিবাচক প্রভাব পুরোপুরি বিস্তার করেছে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির ওপর। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেল ও ডলার সঙ্কটের মুখে গত আট বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি হয়েছে। ডলার রেকর্ড সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে। এতে করে বৈধ চ্যানেলে ডলার আসা কমে হুন্ডি বেশি হচ্ছে। ফলে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের সুফল সেভাবে পাওয়া যাচ্ছে না।
করোনার ধাক্কা পুরোপুরি সামাল দেয়ার আগে এখন মূল্যস্ফীতি মোকাবেলায় নতুন লড়াই শুরু করেছেন দেশের মানুষ। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর পরিবহন খরচ কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। যাত্রীবাহী বাসের নির্দিষ্ট ভাড়ার চেয়ে দেড় থেকে দ্বিগুণ ভাড়া নিচ্ছে পরিবহন মালিকরা। কৃষি ও শিল্পপণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে নিত্যপণ্যের বাজারে। এমন কোন জিনিস খুঁজে পাওয়া যাবে না যেটির দাম বাড়েনি।
সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবির তথ্যমতে, জ্বালানির তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর শতভাগ ভোগ্য ও নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দ্রব্যমূল্য বাড়ার বিষয়টি অকপটে স্বীকার করে জানিয়েছেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর মূল্যস্ফীতি হয়েছে, হবে। এটাই অর্থনীতির স্বাভাবিক চিত্র। তিনি বলেন, এতে করে সীমিত আয়ের সাধারণ মানুষের কষ্ট বেড়েছে। তবে দুঃসময় কেটে গিয়ে আবার সুসময় ফিরে আসবে।
তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে অর্থনীতিতে কি ধরনের প্রভাব পড়েছে সে বিষয়টি মূল্যায়ন করা হচ্ছে। শীঘ্রই এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেথ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করে পরিস্থিতি মোকাবেলায় করণীয় নির্ধারণ করা হবে। অর্থ বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, মানুষকে স্বস্তি দিতে মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে হবে। একবারে জ্বালানির তেলের দাম এতটা না বাড়িয়ে ধাপে ধাপে সমন্বয় করা যেত। তবে এখন দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ডলারের বাজার আগে ঠিক করা প্রয়োজন। ডলারের দাম স্থিতিশীল হলে আমদানি প্রক্রিয়া সহজ হবে। এজন্য ডলারের একরেট করা দরকার।
প্রবাসী রেমিটেন্স বৈধ চ্যানেলে নিয়ে আসতে পলিসি নির্ধারণ, ভোগ্যপণ্যের বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ, সাপ্লাই চেন ঠিক রাখা এবং কৃষি উৎপাদনে প্রণোদনা দেয়ার মতো কর্মসূচী গ্রহণ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশে জাপানী বিনিয়োগকারীদের উপদেষ্টা ও জাপান-বাংলাদেশ চেম্বারের সাবেক সভাপতি আব্দুল হক জনকণ্ঠকে বলেন, এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন দ্রব্যমূল্য কমিয়ে মানুষকে স্বস্তি দেয়া। সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক রয়েছে। এই অস্থিরতা দূর করতে হলে যেভাবেই হোক বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে।
তিনি বলেন, ডলারের একরেট করতে হবে, অপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি কমিয়ে প্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি চালু রাখা জরুরী। একই সঙ্গে ভোগ্যপণ্যের সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণ, ব্যাংকিং খাতের দুর্নীতি বন্ধ এবং ডলার নিয়ে যারা কারসাজি করেছে তাদের শাস্তির আওতায় আনার মতো পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সঙ্গে কৃষকদের প্রণোদনা দিয়ে কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর মতো কর্মসূচী গ্রহণ করা জরুরী হয়ে পড়ছে।
অত্যাবশ্যকীয় ১৭ ভোগ্যপণ্য চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ॥ জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর সরকার ঘোষিত অত্যাবশ্যকীয় ১৭ পণ্য এখন চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। এর সঙ্গে আছে অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কারসাজি। পণ্যমূল্য বাড়াতে নানা রকম ফন্দিফিকির করা হচ্ছে। খাদ্য লবণ আমদানির প্রয়োজন হয় না। দেশে পর্যাপ্ত উৎপাদন ও মজুদ থাকার পরও পুরনো প্যাকেটজাত লবণের দাম বাড়ানো হয়েছে।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিকেজি প্যাকেট লবণের দাম ৭ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকায়। একইভাবে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে পেঁয়াজ ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হঠাৎ করেই শুধু জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর প্রতিকেজি চালে ৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে খুচরা বাজারে। প্রতিকেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়। অথচ সপ্তাহখানেক আগেও এই চাল কিনতে একজন ভোক্তাকে ৪৮-৫০ টাকা গুনতে হয়েছে।
আমিষের প্রধান উৎস ফার্মের ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৫০ টাকায়। ব্রয়লার মুরগি দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠছে। প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৯০-২০০ টাকায়। চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের মাছ-মাংস। দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো হয়েছে প্রতিলিটারে ২০ টাকা। অথচ আন্তর্জাতিক বাজার পর্যবেক্ষণ করে কয়েক দফা দাম কমানো হয় ভোজ্যতেলের। সেই দাম বাজারে কার্যকর না হলেও ফের ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো হয়েছে।
ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফা করতে বেপরোয়া হয়ে উঠছে। এতে ঢাকার কোন কোন বাজারে ইতোমধ্যে ভোজ্যতেলের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। দাম বাড়ানোর কারসাজিতে মিলগেট থেকে তেল সরবরাহ করা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। প্রতিটি পাঁচ লিটারের সয়াবিনের ক্যান ৯১০ টাকা মূল্য নির্ধারণ করা হলেও খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৯৫০-৯৮০ টাকায়। কিন্তু এখন বাজারে তেলের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এতে সরকার নির্ধারিত মূল্যের অতিরিক্ত দাম দিয়েও ভোজ্যতেল না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে ভোক্তাদের।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স এ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স এ্যাসোসিয়েশন থেকে ট্যারিফ কমিশনে সয়াবিনের দাম লিটারে ২০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েই তা কার্যকর করেছে। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে এখন তেলের দাম নি¤œমুখী। খুচরা ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ার কথা স্বীকার করেছেন। এ প্রসঙ্গে খিলগাঁও তিলপা পাড়ার কামাল স্টোরের স্বত্বাধিকারী নাজমুল কবির বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর আবার পাইকারি বাজারে সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম বেশি নেয়া হচ্ছে।
এছাড়া কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউটাররা দাম বাড়ার কথা জানিয়েছেন। ফলে খুচরা বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে। তবে প্রস্তাব দিয়েই দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর সবকিছুর দাম বাড়ানোর একটি হিড়িক পড়ে গেছে। তবে নিয়ম বহির্ভূতভাবে পণ্যের দাম বাড়ানোর কোন সুযোগ নেই। ভোজ্যতেলের বিষয়ে বাজারে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। তিনি জানান, সরকারের পক্ষ থেকে এখনও ভোজ্যতেলের তেলের দাম বাড়ানো হয়নি। তাই বাজারে আগের দামে বিক্রি করতে হবে। এদিকে বাজারে আটা ও ময়দার দাম চড়া।
প্রতিকেজি আটা মানভেদে ৫০-৫৫ এবং ময়দা ৬৫-৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। এছাড়া সবজির বাজারও চড়া। প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ খুচরা বাজারে ৩০০-৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য সবজিও ভোক্তাদের বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। গড়ে বাজারে ৭০ টাকার নিচে কোন সবজি পাওয়া যাচ্ছে না। দেশে এখন রেকর্ড দামে বিক্রি হচ্ছে ১৭টি অত্যাবশ্যকীয় ভোগ্যপণ্য। একদিকে আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব, অন্যদিকে নিত্যপণ্যের বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি-সবমিলিয়ে ভোক্তাদের নাভিশ্বাস এখন চরমে। অত্যাবশ্যকীয় পণ্য হিসেবে খ্যাত পেঁয়াজ, রসুন, মসুর ডাল, ছোলা, শুকনো মরিচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচ ধনে, জিরা, আদা, হলুদ, তেজপাতা, সয়াবিন তেল, পাম অয়েল, চিনি ও খাবার লবণ গরিব মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এসব পণ্য কিনতে চাপে আছেন নি¤œ ও মধ্যবিত্তরাও।
প্রচলিত আইনকানুন মানছে না অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা ॥ জ্বালানির তেলের দাম বৃদ্ধির সুযোগ নিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। বাজার নিয়ন্ত্রণ ও ভোক্তা অধিকারে যেসব আইন কানুন দেশে প্রচলিত রয়েছে তা মানছে না ব্যবসায়ীরা। আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে অবৈধভাবে মুনাফা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে বিদ্যমান আইনেরই যথাযথ প্রয়োগ নেই এবং সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কারণে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে।
বাজারে অতিরিক্ত মুনাফাকারী, অননুমোদিত পরিমাণে পণ্য গুদামজাতকারী, অবৈধ আড়তদার, সংগঠিত সিন্ডিকেট, চাঁদাবাজ থেকে শুরু করে খুচরা ব্যবসায়ী পর্যন্ত যারা নানা উপায়ে পণ্যের দাম অস্থিতিশীল করে তাদের প্রতিরোধে সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনার জন্য নতুন-পুরনো আটটির বেশি আইন আছে। পুরনো আইনগুলোর মধ্যে দি এ্যাসেনশিয়াল আর্টিক্যালস (প্রাইস কন্ট্রোল এ্যান্ড এ্যান্টি-হোর্ডিং) এ্যাক্ট ১৯৫৩, দ্য কন্ট্রোল অব এ্যাসেনশিয়াল কমোডিটিস এ্যাক্ট ১৯৫৬, অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যাদি নিয়ন্ত্রণ আদেশ ১৯৮১, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিপণন ও পরিবেশক নিয়োগ আদেশ ২০১১ অন্যতম।
কিন্তু এসব আইনের এখন প্রয়োগ নেই বললেই চলে। নতুন আইনের মধ্যে ভোক্তা অধিকার আইন ২০০৯, নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩, প্রতিযোগিতা আইন ২০১২, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ বিধিমালা ২০২০ অন্যতম। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রচলিত এসব আইন-কানুন মানা হচ্ছে না।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অস্থির বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার নানামুখী উদ্যোগ নিচ্ছে। এর অংশ হিসেবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের স্থানীয় বাজারে কারসাজি ঠেকাতে এবং ভোগ্য পণ্যের দাম ভোক্তাদের নাগালের মধ্যে রাখতে প্রচলিত আইনের যথাযথ প্রয়োগের কথা বলছেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ। এ প্রসঙ্গে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, বিভিন্ন কারণে দেশে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ছে।
একদিনে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি এবং অন্যদিকে দেশীয় ব্যবসায়ীদেরও কারসাজি রয়েছে। ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, এজন্য সরকারীভাবে টিসিবিকে শক্তিশালী করা হচ্ছে। জানা গেছে, ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে গত ২০১১ সালে পেঁয়াজ, রসুন, লবণসহ ১৭টি পণ্যকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৫৬-এর আওতায় এসব পণ্যকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। এর মাধ্যমে এসব পণ্যের দাম বেঁধে দেয়ার ক্ষমতা অর্জন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
১৯৫৬ সালের আইনে বেশি কিছু পণ্য অত্যাবশ্যকীয় হিসেবে ঘোষণা করা আছে। কিন্তু গত কয়েক বছরে দেশে পেঁয়াজ ও ভোজ্যতেল নিয়ে যা হয়েছে তা সম্পূর্ণ আইনবিরোধী কাজ করছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে আইন প্রণয়ন হলেও বন্ধ হয়নি অতি নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ে কারসাজি। এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি জসিম উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, কভিডের ধাক্কা কাটিয়ে বৈশ্বিক পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে আসলেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সব হিসাব-নিকাশ আবার পাল্টে দিয়েছে। ফলে দেশে দেশে চাহিদা বাড়ছে খাদ্যপণ্যের। তেলের দাম বৃদ্ধি ও কন্টেনার সঙ্কটের ফলে বেড়েছে জাহাজ ভাড়া। সব মিলিয়ে ভোগ্য পণ্যের বিশ্ববাজার এখন নাগালের বাইরে।
দ্রব্যমূল্য কমাতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই বড় চ্যালেঞ্জ ॥ দ্রব্যমূল্য কমাতে এ মুহূর্তে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও সেটি আর সম্ভব হচ্ছে না। এতে করে জীবন যাত্রার ব্যয় বেড়ে দিশেহারা মানুষ। এ কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়েও এ মুহূর্তে ভাবা হচ্ছে না। যদিও চলতি বাজেটে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে তিন মাস ধরে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের ওপরে রয়েছে। এ হার গত ৮ থেকে ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। সর্বশেষ জুলাইয়ে পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এর মধ্যে খাদ্যসূচকে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ১৯ শতাংশ। খাদ্যসূচকে গত বছরের একই মাসের চেয়ে বেড়েছে ৩ দশমিক ১১ শতাংশীয় পয়েন্ট। আর জুলাইয়ে খাদ্যবহির্ভূত সূচকে ৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছে। এ সূচকে এক বছরে বেড়েছে মাত্র ৪৯ শতাংশীয় পয়েন্ট। জ্বালানি তেল ও পরিবহন ভাড়া খাদ্যবহির্ভূত সূচকের মধ্যে পড়ে। ফলে এখন এ সূচকে বাড়তি চাপ তৈরি হবে, পাশাপাশি খাদ্যের দামও বাড়বে জ্বালানি তেলের কারণে ।
ফলে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার আরও বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাব দীর্ঘমেয়াদী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আগামী ৯ মাসের মধ্যে পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ার কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। এ কারণে গরিব মানুষের কথা চিন্তা করে স্বল্পমেয়াদী বেশকিছু কর্মসূচী গ্রহণ করা হবে। তথ্যমতে, মূল্যস্ফীতির কারণসমূহের মধ্যে রয়েছে- বাণিজ্য সহযোগীদের মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, ডলারের বিপরীতে টাকার অবচিতি, বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থার প্রতিবন্ধকতা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ।
তবে মূল্যস্ফীতি যাতে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা যায় সেজন্য বেসরকারী খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়াতে হবে বলে মনে করা হচ্ছে। চলতি বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মূল কৌশল হবে বিদ্যমান চাহিদার প্রবৃদ্ধি কমিয়ে সরবরাহ বাড়ানোর মতো কর্মসূচী নেয়া হবে বলে জানা গেছে।