
পাচারকারী চক্রের দুই সদস্যকে রাজধানী থেকে গ্রেফতার
বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির আড়ালে বিদেশে নারী পাচার করা হতো। দেশের প্রত্যন্ত এলাকার দরিদ্র, তালাকপ্রাপ্ত, স্বামীর সংসারে নির্যাতিত নারীদের টার্গেট করে বিদেশে ভাল বেতন ও বিনামূল্যে হজ করার প্রলোভন দেখাত। এরপর বিদেশে নিয়ে বিভিন্ন অবৈধ কাজে বাধ্য করাসহ নির্যাতন করা হতো তাদের। দেশীয় শতাধিক দালালচক্রের মাধ্যমে এক বছরে প্রায় এক হাজার নারী শ্রমিককে মধ্যপ্রাচ্যেসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করা হয়েছে। রবিবার রাতে রাজধানীর পল্টন থানার সিটি হার্ট শপিং কমপ্লেক্সে অভিযান চালিয়ে এ চক্রের অন্যতম হোতা বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান কনকর্ড এ্যাপেক্স রিক্রুটিং এজেন্সি মালিক আবুল হোসেন (৫৪) ও তার সহযোগী আলেয়া বেগমকে (৫০) গ্রেফতার করেছে র্যাব।
এ সময় বিদেশে পাঠানোর জন্য আনা তিন নারীসহ ৩১টি পাসপোর্ট, বিভিন্ন তথ্য ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। তাদের গ্রেফতারের পর এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। গতকাল দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন এসব তথ্য জানান।
কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন জানান, দেশে মানবপাচার চক্রের টার্গেটে পরিণত হয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকার দরিদ্র সহজ-সরল মানুষ। তাদের লোভনীয় বেতনে চাকরিসহ সৌদি আরবে বিনামূল্যে হজ পালন করার প্রলোভন দেখানো হতো। কিন্তু বিদেশে নিয়ে বিভিন্ন অবৈধ কাজে বাধ্য করাসহ নির্যাতন করা হতো তাদের। গ্রেফতারকৃত আবুল হোসেনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র্যাব-১ এর অধিনায়ক জানান, দীর্ঘদিন ধরে বৈধ প্রতিষ্ঠান কনকর্ড রিক্রুটিংয়ের আড়ালে নারী পাচার ও নির্যাতনের মতো অপকর্ম করে আসছে। তিনি এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান। তার এ কাজের অন্যতম সহযোগী আলেয়া বেগমসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অসংখ্য দালাল রয়েছে।
দালালদের মাধ্যমে চক্রটি মূলত সমাজের বেকার, অল্পশিক্ষিত, অসচ্ছল ও দরিদ্র পরিবারগুলোর বিবাহিত, তালাকপ্রাপ্ত নারীদের মধ্যেপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে অধিক বেতনে চাকরি, বিমানে ওঠার অভিজ্ঞতা, রাজকীয় থাকা খাওয়ার সুবিধা, স্মার্টফোন নেয়া এবং সৌদিতে হজ করাসহ ধর্মভিত্তিক লোভনীয় চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশে পাঠাত। বিদেশে যাওয়ার পর প্রথমে তারা ভুক্তভোগীদের জানালাবিহীন কক্ষে আটকে রাখে। পরে ২-৩ দিন পর বিভিন্ন জনের বাসায় পাঠানো হতো। বাসায় নিয়ে যাওয়ার পর তাদের দিয়ে সব ধরনের কাজ করানো হতো। কিন্তু ঠিকমতো খাবার খেতে দেয়া হতো না।
অকারণে বেধড়ক মারধরের মাধ্যমে অমানবিক নির্যাতন করা হতো। এমনকি বৈদ্যুতিক শক দেয়া হতো। তিনি জানান, চক্রের অন্যতম দালাল হিসেবে কাজ করা আলেয়া আগে পল্টন এলাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক সংগ্রহের কাজ করেছেন। ২০২১ সাল থেকে আবুল হোসেনের কনকর্ড রিক্রুটিং এজেন্সিতে শ্রমিক সংগ্রহের কাজ শুরু করেন। বিদেশে পাঠানোর আগে এই শ্রমিকদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ ও বিভিন্ন সাদা কাগজে সই নেয়া হতো।