ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০২ অক্টোবর ২০২৩, ১৭ আশ্বিন ১৪৩০

ধরলা ও দুধকুমারের পানি বিপদসীমার ওপরে

সিলেটে তিনদিন থাকবে বৃষ্টি, দীর্ঘমেয়াদী বন্যার আশঙ্কা

জনকণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০০:৩২, ১ জুলাই ২০২২

সিলেটে তিনদিন থাকবে বৃষ্টি, দীর্ঘমেয়াদী বন্যার আশঙ্কা

বন্যা

দীর্ঘমেয়াদী বন্যার কবলে পড়েছে সিলেটজুনের মধ্যভাগ থেকে এ বিভাগে বন্যা শুরু হয়েছেপানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, বর্তমানে আষাঢ় মাসের মাঝামাঝি সময়, সামনে শ্রাবণ মাসএই সময়ের মধ্যে আরও দুই-একটি বন্যা হতে পারেএ জন্য পূর্বাভাস কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে, জুলাইয়ের শেষের দিকে আরও একটি বন্যা হতে পারে

এদিকে উজানের ঢল ও টানা বৃষ্টিতে কুড়িগ্রামে ফের বন্যা দেখা দিয়েছেবিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ধরলা ও দুধকুমার নদের পানিফলে জেলার অন্তত ৬০টি চর প্লাবিত হয়েছেখবর সিলেট অফিস ও স্টাফ রিপোর্টারের

সিলেটে  দীর্ঘস্থায়ী এই বন্যায় ক্ষতির পরিমাণও দীর্ঘ হচ্ছেসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবারের বন্যায় এখন পর্যন্ত সিলেট জেলায় ৪১ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি আংশিক বা সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেএর মধ্যে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ির সংখ্যা হাজারখানেকবাকিগুলো জেলার বিভিন্ন উপজেলারসিলেটে বুধবার রাত থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছেবৃষ্টি আরও তিন দিন থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতরবৃষ্টির কারণে গতকালের তুলনায় সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্টে পানি কিছুটা বেড়েছেএ ছাড়া সুরমার কানাইঘাট পয়েন্ট এবং কুশিয়ারা নদীতে এর প্রভাব না পড়লেও সারি নদী ও ধলাই নদের পানি বেড়েছে

পাউবো সূত্রে জানা গেছে, সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্টে বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী পানি ছিল ১০ দশমিক ৭৪ সেন্টিমিটারসেখানে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় পানি ১০ দশমিক ৭৬ সেন্টিমিটারসারি নদীর সারিঘাট পয়েন্টে বুধবার ১১ দশমিক ৩৬ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হলেও বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় সে পয়েন্টে ১১ দশমিক ৪৯ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলধলাই নদের ইসলামপুর পয়েন্টে বুধবার সন্ধ্যায় ১০ দশমিক শূন্য ৬ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হলেও বৃহস্পতিবার সকালে সেটি বৃদ্ধি পেয়ে ১০ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে

বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে ঘুরে কিছু এলাকায় জলাবদ্ধ দেখা গেছেনগরের মির্জাজাঙ্গাল, তালতলা, যতরপুর, শাহজালাল উপশহর এলাকায় পানি জমতে দেখা গেছেএছাড়া দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর সড়কে জলাবদ্ধতা রয়েছে।  বৃহস্পতিবার আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারেসিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন, বৃহস্পতি ও শুক্রবার বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকলেও এর ফলে বন্যার কোন পূর্বাভাস নেইবন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পূর্বাভাস কেন্দ্রের তথ্যে এমনটি জানা গেছেতাদের পূর্বাভাস অনুযায়ী দুদিন বৃষ্টি হয়ে বৃষ্টির অবস্থা উন্নতি হবে

৪১ হাজার কাঁচা বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত সিলেটে বন্যায় ৪১ হাজারের বেশি কাঁচা বাড়িঘর আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেজেলার ৩০ লাখের বেশি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেনজেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার আহসানুল আলম জানান, সিলেট সিটি কর্পোরেশন ব্যতীত জেলার ১৩ উপজেলা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ৪০ হাজার ৯১টি কাঁচা ঘরবাড়ি আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেএ তালিকা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছেবন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ঘরবাড়ি নির্মাণ বা মেরামতের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ বা অনুদান প্রদানের জন্য আবেদন জানানো হয়েছে

২৪ ঘণ্টায় ১০৯.৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত ॥  সিলেটে ২৪ ঘণ্টায় ১০৯.৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছেমঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় এ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়এছাড়া, বুধবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সিলেটে ৮.২১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।  আবহাওয়া দফতর জানায়, সিলেটে আগামী ২/৩ দিন বৃষ্টিপাত হতে পারে

ডুবে গেছে গরুর হাট নগরীর সবচেয়ে বড় পশুর হাট কাজিরবাজার বন্যার পানিতে তলিয়ে আছেএ কারণে হাট বসেনি সেখানেকবে বসবে, জানে না কেউ।  কোরবানির ঈদের আর ৯ দিন বাকিজেলার বেশিরভাগ হাট তলিয়ে যাওয়ায় পশু বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খামারিরাসংশ্লিষ্টরা জানান, ৮/৯ দিন তলিয়ে থাকার পর দুদিন আগে পানি নেমেছিলআবার বুধবার থেকে পানি উঠেছেসব মিলিয়ে প্রায় ১৫ দিন ধরে এই হাটের সব কাজ বন্ধকাজিরবাজার পশুর হাটের ব্যবস্থাপক শাহাদাত হোসেন লোলন জানান, সিলেটের বিভিন্ন উপজেলার খামারি ও ব্যবসায়ীরা ট্রাকে করে পশু নিয়ে আসেনএবার বন্যায় বেশিরভাগ সড়ক তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছেএ কারণে কেউ পশু নিয়েও আসতে পারছেন না

কুড়িগ্রাম বৃষ্টি ও ঢলে আবারও কুড়িগ্রামে নতুন করে বন্যা দেখা দিয়েছেবিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে ধরলা ও দুধকুমারের পানিফলে নাগেশ্বরী, ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রাম সদর ও উলিপুর উপজেলার অন্তত ৬০ চর ও নদী সংলগ্ন গ্রামের নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছেঘরবাড়িতে পানি ওঠায় অনেকেই উঁচু ভিটা, রাস্তা ও বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছেপানিবন্দী হয়ে পড়েছে অন্তত ৭০ হাজার মানুষএসব এলাকার পাট, ভুট্টা, বীজতলা ও সবজি ক্ষেত ডুবে গেছেগ্রামীণ সড়কগুলোর ওপর পানি প্রবাহিত হওয়ায় যাতায়াতে ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষ