ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বাগেরহাটে আরও প্রতœতত্ত্বের সন্ধান

অসাধারণ স্থাপত্য, সমৃদ্ধ ইতিহাসের সাক্ষী

বাবুল সরদার

প্রকাশিত: ০১:৪৫, ৩০ জুন ২০২২

অসাধারণ স্থাপত্য, সমৃদ্ধ ইতিহাসের সাক্ষী

বাগেরহাটের প্রত্ন নিদর্শন

“বা  ংলাদেশের ষাটগম্বুজ মসজিদ ঘুরতে এসে আমি মুগ্ধ হয়েছি। এর স্থাপত্যশৈলী অসাধারণ। আমি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছি। তবে এই মসজিদের স্বতন্ত্র স্থাপত্যশৈলী এবং ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনায় এ আমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভ্রমণ। আমি বিশ্বের সব পর্যটককে অনুরোধ করব এই স্থাপনাগুলো ঘুরে দেখার জন্য।’ বাগেরহাটে বিশ^ ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদ পরিদর্শন করে মুগ্ধ ঢাকায় কর্মরত নেপাল এ্যাম্বাসির কুমার রায় সম্প্রতি এভাবেই তার অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে গত ২২ মার্চ ১৫ দেশের রাষ্ট্রদূত এবং দুটি সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে মুজিব ফ্যামিলাইজেশন ট্যুরের অংশ হিসেবে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মোঃ মাহবুব আলী ষাটগম্বুজ মসজিদ দেখে বলেন, অসাধারণ স্থাপত্যশৈলীর এই মসজিদ আমাদের অতীতের সমৃদ্ধ ইতিহাস বহন করে। তার ভাষায়, ‘বাগেরহাটের মানুষ অত্যন্ত সৌভাগ্যবান। বিশ্ব ঐতিহ্যের বড় দুটি স্থানই পড়েছে বাগেরহাটে। একটি সুন্দরবন, অন্যটি ষাটগম্বুজ মসজিদসহ খানজাহানের অন্যান্য স্থাপনা। এখানে ১৫ দেশের রাষ্ট্রদূত এবং দুটি সংস্থার প্রতিনিধি এসেছেন। তারা সবাই আমাদের দেশের এই প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক স্থাপনা দেখে মুগ্ধ হয়েছেন।’  সেদিন ৬০ সদস্যে ওই প্রতিনিধি দলের প্রায় সকলে অনুরূপ অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন।
আক্ষরিক অর্থে গোটা বাগেরহাটে প্রতœত্ত্বাত্তিক এমন অপরূপ নিদর্শন রয়েছে।
বাগেরহাটে নতুন করে আরও ১৬৩টি প্রতœস্থান শনাক্ত করেছে প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর। ইউনেস্কো ঘোষিত ঐতিহাসিক মসজিদের শহর বাগেরহাটে সম্প্রতি প্রতœতাত্ত্বিক জরিপ করে সদর উপজেলার ১০ ইউনিয়ন ও পৌরসভায় এসব প্রতœতাত্ত্বিক স্থাপনা শনাক্ত করা হয়। বাগেরহাট জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান মোহাম্মদ যায়েদ বলেন, প্রতœসম্পদে সমৃদ্ধ এ জেলায় সরেজমিন জরিপ ও অনুসন্ধানে ১৬৩টি নতুন প্রতœটিবি, দীঘি, পাথরখ-, প্রাচীন কবর ও জমিদার বাড়ির সন্ধান মিলেছে।
ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ মসজিদ কমপ্লেক্সে বাগেরহাট জাদুঘরের সেমিনার কক্ষে আয়োজিত এক সভায় তিনি এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, নতুন করে শনাক্ত হওয়া স্থানসহ বাগেরহাট সদরে মোট ১৮০টি প্রতœ সাইট শনাক্ত হলো। এর মধ্য থেকে গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও নিদর্শনগুলোকে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হবে। সদর উপজেলার মোট ১৮৪টি গ্রামে এই জরিপ করে প্রতœতত্ত্ব বিভাগ। এর মধ্যে ৭৩টি প্রতœ সাইটের সন্ধান মিলেছে ষাটগম্বুজ ইউনিয়নে। এর পর কাড়াপাড়া ইউনিয়নে ৩৮টি এবং বাগেরহাট পৌর এলাকায় ১৫টি।
বর্তমানে ষাটগম্বুজ মসজিদ, হযরত খান জাহান (র.)-এর মাজার, খান জাহান নির্মিত প্রাচীন সড়ক, চুনখোলা মসজিদ, সিঙ্গাইর, রণবিজয়পুর (দরিয়া খাঁ), নয় গম্বুজ, দশ গম্বুজ মসজিদসহ ১৭টি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি রয়েছে। ১৫শ’ শতকে খান জাহান (র.) নির্মিত এমন আরও অসংখ্য স্থাপনা ও নিদর্শন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এখানে। ১৯৮৩ সালে এসব স্থাপনাকে ইউনেস্কো ‘ঐতিহাসিক মসজিদের শহর বাগেরহাট’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। জেলার অন্যান্য উপজেলাতে আরও এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতœ নিদর্শন রয়েছে। সেগুলো সন্ধানেও জরিপ করা হবে।
সভায় খানজাহানিয়া গণবিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যক্ষ শেখ সাইফ উদ্দিন, ষাটগম্বুজ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ আখতারুজ্জামান বাচ্চু, ষাটগম্বুজ মসজিদের ইমাম হেলাল উদ্দিন, মোয়াজ্জিন টিএম মুজিবুর রহমান, উন্নয়নকর্মী আলমগীর হোসেন মিরুসহ স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। বক্তারা শনাক্ত হওয়া প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো রক্ষণাবেক্ষণের আহ্বান জানান।
প্রসঙ্গত : হারিয়ে যাওয়া শহর ও বিপন্ন ঐতিহ্যবাহী প্রতœতাত্ত্বি¡ক শহর হিসেবে বাগেরহাটকে তালিকাভুক্ত করে বিশ্বখ্যাত ফোর্বস সাময়িকী। ‘ওয়ার্ড মনুমেন্ট ওয়াচ’ এই তালিকা করে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হুমকিতে থাকা সাংস্কৃতিকভাবে উল্লেখযোগ্য ইউনেস্কো ঘোষিত মসজিদের শহর বাগেরহাট বিশ্বের ২৫টি ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশের একমাত্র মসজিদের শহর বাগেরহাট এই তালিকায় স্থান পায়।  

 

×