স্টাফ রিপোর্টার ॥ বলাৎকার ধর্ষণের অপরাধ কেন নয় তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। নারী ধর্ষণ অপরাধের পাশাপাশি বলাৎকারকে ‘পুরুষ ধর্ষণ’ অপরাধ হিসেবে যুক্ত করতে দন্ডবিধির ৩৭৫ ধারা সংশোধনের কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। এ সংক্রান্ত এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মোঃ মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি খিজির হায়াত সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ রবিবার এ আদেশ দেন।
চার সপ্তাহের মধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব ও পুলিশের মহাপরিদর্শককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল। গাজীপুরের ড. সৌমেন ভৌমিক, সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী তাসমিয়া নূহিয়া আহমেদ এবং সমাজকর্মী ড. মাসুম বিল্লাহ রিটটি দায়ের করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
রিটের পক্ষে আইনজীবী ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল জনকণ্ঠকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ছেলে শিশুসহ পুরুষকে যৌন নির্যাতন ও বলাৎকারের ঘটনা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
কিন্তু এই ধরনের নির্যাতনকে ধর্ষণের অপরাধ হিসেবে বিচার করা যাচ্ছে না। এ কারণে দন্ডবিধির ৩৭৫ ধারায় সংশোধন এনে ‘নারী ধর্ষণ’ এর অপরাধের পাশাপাশি অপরাধ হিসেবে ‘পুরুষ ধর্ষণ’ বিষয়টিকে যুক্ত করার আবেদন করা হয়। আদালত শুনানি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রতি রবিবার রুল জারি করেছে।
রিটে বলা হয়, ৩৭৫ ধারায় শুধু পুরুষ দ্বারা নারীদের ধর্ষণের বিষয়ে আছে। এখানে সম্মতি ছাড়া নারীদের দ্বারা নারী, নারীর দ্বারা পুরুষ, পুরুষ দ্বারা পুরুষ এবং একজন ট্রান্সজেন্ডার আরেক ট্রান্সজেন্ডারের দ্বারা যৌন নিপীড়নের বিষয়টি নেই। শিশু আইন অনুযায়ী, ১৮ বছরের নিচে সবাই শিশু।
তাই ধর্ষণের শিকার শিশু ছেলে হোক বা মেয়ে- উভয়ের ক্ষেত্রে ওই আইনে বিচার করা যাবে। ১৮ বছরের বেশি বয়সী ছেলেদের ক্ষেত্রে দন্ডবিধির ৩৭৭ ধারা প্রযোজ্য হবে। সেখানে এই অপরাধকে ‘অস্বাভাবিক যৌনাচার’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে যাবজ্জীবন সাজার বিধান রয়েছে।
আইনজীবী আরও বলেন, মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) বিভিন্ন গণমাধ্যমের বরাতে এক পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। সংগঠনটি বলছে, গত বছর দেশে শুধু মাদ্রাসায় ধর্ষণের শিকার হয়েছে অন্তত ৫২ শিশু। যার মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।
আর চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ‘ধর্ষণের শিকার’ হয়েছে আরও ১০ শিশু। এ ছাড়া প্রায় সময়ই গণমাধ্যমে খবর আসে ছেলে শিশুদের ‘ধর্ষণের’। তবে শাস্তির বিধানে অনেক অপরাধী ছাড় পেয়ে যায়।
১৮৬০ সালের দন্ডবিধির ৩৭৫ ধারায় বলা হয়েছে, নারী ধর্ষণ যদি কোন ব্যক্তি অতঃপর বর্ণিত ক্ষেত্র ব্যতীত নিম্নে বর্ণনাধীন যে কোন অবস্থায় কোন নারীর সঙ্গে যৌন-সহবাস করে, সে ব্যক্তি নারী ধর্ষণ করেছে মর্মে পরিগণিত হবে।
প্রথমত তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে। দ্বিতীয়ত তার বিনা সম্মতিতে। তৃতীয়ত তার সম্মতি অনুযায়ী, যখন পুরুষটি জানে যে সে তাহার স্বামী নয় এবং সে (নারীটি) এ বিশ্বাস সম্মতি দান করে যে, সে (পুরুষটি) এমন কোন লোক, যার সঙ্গে সে আইনত বিবাহিত কিংবা সে নিজেকে তার সঙ্গে আইনত বিবাহিত বলে বিশ্বাস করে। চতুর্থত: তার সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতীত, যখন তার বয়স চৌদ্দ বৎসরের কম হয়। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ছেলেশিশুদের ধর্ষণের বিষয়টি আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়নি।