ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৫ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২

নবেম্বরে এসএসসি, ডিসেম্বরে এইচএসসি পরীক্ষা অনলাইন ও টেলিভিশনের ক্লাস চলমান থাকবে

দেড় বছর পর স্কুল কলেজ খুলছে ১২ সেপ্টেম্বর

প্রকাশিত: ২২:০৯, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২১

দেড় বছর পর স্কুল কলেজ খুলছে ১২ সেপ্টেম্বর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনার কারণে গত বছর থেকে দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর বন্ধের পর আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে খুলে দেয়া হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শুক্রবার চাঁদপুরে এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি জানিয়েছেন, ১২ সেপ্টেম্বর থেকে খুলে দিলেও শুরুতে একসঙ্গে সব শ্রেণীর ক্লাস হবে না। ধাপে ধাপে বিভিন্ন শ্রেণীর ক্লাস হবে। বিস্তারিত তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, প্রথমে হয়ত চলতি বছরের এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার্থী যারা এবং আগামী বছরের পরীক্ষার্থী- তারা প্রতিদিনই ক্লাস করবে। বাকি শ্রেণীর ক্লাস হয়ত শুরুতে সপ্তাহে একদিন করে হবে। পরে পরিস্থিতি বুঝে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি করা হবে। একইসঙ্গে অনলাইন ও টেলিভিশনের ক্লাস চলমান থাকবে বলেও জানান তিনি। এদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলমান ছুটি শেষ হচ্ছে ১১ সেপ্টেম্বর। তারপর আর ছুটি বাড়ানো হবে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। তবে আগামীকাল রবিবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা সংক্রান্ত বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় মিটিংয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বলে জানা গেছে। জানা যায়, দেশে করোনার প্রকোপ শুরু হলে গত বছরের ১৭ মার্চ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর কয়েক দফা চেষ্টা করেও পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি না হওয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা যায়নি, বরং দফায় দফায় ছুটি বাড়ানো হয়েছে। গত বছর এইচএসসি পরীক্ষা নেয়া সম্ভব না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের এসএসসি ও জেএসসির ফলের গড় করে মূল্যায়ন ফল প্রকাশ করা হয়। তার ভিত্তিতেই তাদের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করা হয়। স্কুলের শিক্ষার্থীদেরও আগের রোলে পরের ক্লাসে তুলে দেয়া হয়। দেড় বছর ধরে ঘরে বসে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইনে ক্লাসের ব্যবস্থা হলেও তাতে শিক্ষা কতটা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে সংশ্লিষ্টদের। গত ২৪ আগস্ট জাতিসংঘ শিশু তহবিল বা ইউনিসেফের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, কোভিড-১৯ এর কারণে স্কুল বন্ধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় দীর্ঘতম দেশ। দীর্ঘ বন্ধের কারণে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা স্তর পর্যন্ত চার কোটির বেশি শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় সবকিছু খুলে দেয়ার পর এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। গত ১৮ আগস্ট সচিব সভায় করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি ও টিকা দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বৃহস্পতিবারও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে বলেছেন, ‘খুব তাড়াতাড়ি স্কুল-কলেজ খুলে দেয়ার জন্য তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। সে অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে।’ শিক্ষামন্ত্রী শুক্রবার এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আগের ঘোষণা অনুযায়ী পরীক্ষা হবে। অর্থাৎ নবেম্বরের মাঝামাঝি এসএসসি এবং ডিসেম্বরে এইচএসসি পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।’ দ্রুত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে নানা মহলের চাপের মধ্যে গত সপ্তাহে এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি বৈঠক হয়। শিক্ষামন্ত্রী সংবাদিকদের বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ১২ সেপ্টেম্বরকে আমরা নির্ধারণ করেছি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললেও এ্যাসাইনমেন্ট প্রক্রিয়া চলমান থাকবে।’ তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ‘বেশিরভাগ’ শিক্ষক করোনাভাইরাসের টিকা নিয়েছেন। ভবিষ্যতে ১২ বছরের বেশি বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনা সরকার করছে। এছাড়াও আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে দেশের সব মেডিক্যাল কলেজ খুলবে বলে কয়েকদিন আগে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। গত বৃহস্পতিবার রাতে কোভিড-১৯ প্রতিরোধ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির বৈঠকেও স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে প্রতিপালনের মাধ্যমে সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যায়ক্রমে খুলে দেয়ার পক্ষে মত দেয়া হয়। কমিটির প্রধান অধ্যাপক ডাঃ মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ পরে বলেন, ‘আমরা মনে করছি যে দীর্ঘ ১৭ মাস শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল, এটা আমাদের করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় ভাল কাজ করেছে। এখন আমার মনে হয় সবদিক বিবেচনা করে স্কুল, কলেজ, বিশবিদ্যালয় পর্যায়ক্রমে খুলে দেয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সারাবিশ্বে যে জনস্বাস্থ্যবিধি চালু আছে বাংলাদেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে সেগুলো কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।’ সর্বশেষ গত ২৬ আগস্ট এক ঘোষণায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। সেই ছুটি আর বাড়ানো হবে না বলে শুক্রবার সংবাদিকদের জানান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এ খায়ের। তবে আগামীকাল রবিবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা সংক্রান্ত বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় মিটিংয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বলে জানা গেছে।
×