ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

তদন্ত দাবি

সাতক্ষীরা শহীদ স্মৃতি কলেজ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৮:৪৯, ১১ অক্টোবর ২০১৯

সাতক্ষীরা শহীদ স্মৃতি কলেজ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা ॥ সাতক্ষীরার শহীদ স্মৃতি ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ এনে তদন্তের দাবি করেছেন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ মোঃ সহিদুর রহমান। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নিয়মবহির্ভূতভাবে কলেজের গবর্নিং বডি তৈরি, অনেক শিক্ষক,কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে দেড় কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্যসহ নিজের ভগ্নিপতিকে কলেজের সভাপতি বানিয়ে তিনি নিজে অধ্যক্ষ হয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এছাড়া কলেজ তহবিল থেকে ১৬ লাখ টাকা আাত্মসাতসহ নানা অবৈধ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে এই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। কলেজের অধ্যক্ষ ফজলুর রহমান তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে জনকণ্ঠকে বলেন, নির্বাচনী বোর্ড তাকে অধ্যক্ষ হিসেবে নির্বাচিত করেছেন। নিয়োগ প্রক্রিয়া কমিটির এখতিয়ার উল্লেখ করে তিনি বলেন, কলেজের উন্নয়ন কাজের জন্য গবর্নিংবডির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ধারাবাহিকভাবে ১৬ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয় বলে তিনি স্বীকার করেন। ইতোমধ্যে ডাঃ সহিদুর রহমানের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুদক কলেজে তদন্ত করেছে এবং সমুদয় কাগজপত্র দুদক নিয়ে গেছে বলে তিনি জানান। সম্প্রতি হাইকোর্ট থেকে কলেজের নিয়োগ প্রক্রিয়া ও কমিটিকে বৈধ বলে রায় দিয়েছে উল্লেখ করে অধ্যক্ষ জানান, কলেজে সদলবলে ঢুকে অফিসের তালা ভেঙ্গে তছনছের একটি মামলায় সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে পুলিশ চার্জশীট দিয়েছে। এছাড়া ডাঃ সহিদুর রহমান একই অভিযোগ গত ৩ থেকে ৪ বছর ধরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, দুদকসহ বিভিন্ন দফতরে পাঠিয়ে তাকে হয়রানি করছেন বলে অধ্যক্ষ জানান। বিভিন্ন সরকারী দফতরে ও পত্রিকা অফিসে পাঠানো ডাঃ সহিদুর রহমানের অভিযোগ, অধ্যক্ষ ফজলুর রহমান কে গবর্নিংবডি ২০১৩ সাল থেকে সাময়িক বরখাস্ত করলেও তিনি অবৈধ গবর্নিংবডি বানিয়ে কলেজের উপাধ্যক্ষ ও পরবর্তীতে অধ্যক্ষ হয়েছেন। তিনি স্থানীয় অসৎ পুলিশ কর্মকর্তাদের সহায়তায় এ ধরনের অনৈতিক কাজ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ উপেক্ষা করেছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা অধিদফতরের বেতন বন্ধের আদেশ, কমিটি বাতিলের আদেশ নির্দেশ অমান্য করেছেন। ঘরে বসে গবর্নিং কমিটি বানিয়ে তিনি অধ্যক্ষ ও আপন ভগ্নিপতিকে সভাপতি বানিয়ে নিয়েছেন। ১৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন যখন তার কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ ও তার ভগ্নিপতি সভাপতি ছিলেন না। অভিযোগ, কমিটির মেয়াদ শেষ হয় ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর। পরবর্তীতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তার ভগ্নিপতি আলতাফ হোসেনকে পুনরায় সভাপতি মনোনয়ন দেয় ২০১৮ সালের ১৩ মে। এই ১৬ লাখ টাকা উত্তোলনের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালা ও তিনি লঙ্ঘন করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এ বিষয়ে দুদকে মামলা হয়েছে, যার (নং ৭/১৮)। গত ২ সেপ্টেম্বর দুদক এই অভিযোগের তদন্ত করেছে। অধ্যাপক ডাঃ মোঃ সহিদুর রহমান শহীদ স্মৃতি ডিগ্রী কলেজ ১৯৯৪ সালে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠা করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি যুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং পাক আর্মির হাতে গ্রেফতার হন। পরে কৌশলে মুক্ত হয়ে পুনরায় যুদ্ধে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধে মৃত্যুবরণকারী শহীদদের স্মরণে তিনি এই কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন বলে জানিয়েছেন। ডাঃ সহিদুর রহমানের অভিযোগ, ১৮ সালের ১৭ নবেম্ব^র সকাল ১০টায় তিনি শহীদ স্মৃতি ডিগ্রী কলেজে তদন্ত প্রতিবেদন ও মন্ত্রণালয়ের আদেশাবলী নিয়ে মোঃ আাব্দুল বাকী, মোঃ আাব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, ও মোঃ হাবিবুল ইসলামকে উপস্থিত হন। দুপুর ১২টায় অধ্যক্ষ ফজলুর রহমান ও তার ভায়রা কলেজের প্রভাষক আঃ রশিদ বারান্দায় ঢুকে চিৎকার করতে থাকেন এবং অধ্যক্ষ ফজলুর রহমান তার পাশে দাঁড়ানো কামারুলকে সজোরে আঘাত করতে থাকেন। এতে যোগ দেন কলেজের শিক্ষক আব্দুর রশীদ, আলমগীর কবির, ও কর্মচারী মাগফুর রহমান, ইয়ারুল ইসলাম। তারা তাকে মারতে মারতে অধ্যক্ষের রুমে ঢুকিয়ে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে বেদম প্রহার করেন। পুলিশ সুপারকে জানানোর পর এসআই রইস কলেজে পৌঁছালে পুলিশের উপস্থিতিতে মারধরের ঘটনা ঘটে। অভিযোগ, এসআই রইস এই ঘটনার দায়ভার ডাঃ সহিদুর রহমানের ওপর চাপাতে চান এবং তাকে গ্রেফতারের হুমকি প্রদান করেন। এই ঘটনায় পুলিশ তার সঙ্গী কামারুলকে গ্রেফতার করে তাকে সহ ৬ জনের নামে ভুয়া মিথ্যা মামলা সাজিয়ে গত ২৫ জুন তাকে সহ ৬ জনের নামে চার্জশীট দেয় পুলিশ। এই মিথ্যা মামলার বিষয়ে তদন্তের জন্য পুলিশের উর্ধতন বিভাগে আবেদনের পর আইজিপির নির্দেশে গত ২৮ সেপ্টেম্বর খুলনায় ইন্ডাস্ট্র্রিয়াল পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এই ঘটনার তদন্ত হয়েছে বলে ডাঃ সহিদুর রহমান জানান। অধ্যক্ষ ফজলুর রহমান অনৈতিক কাজে সব সময় পুলিশকে ব্যবহার করেন বলে অভিযেগে উল্লেখ করা হয়েছে। অধ্যক্ষ ফজলুর রহমান একজন অদক্ষ শিক্ষক, তার কলেজে অনুপস্থিতি অনিয়মিত এবং এবারের পরীক্ষার ফলাফলে ভয়াবহ বিপর্যয় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া ফজলুর রহমান জাতীয় পার্টির রাজনীতি করেছেন এবং লিখিতপত্র দিয়ে জামায়াতের রাজনীতি করেছেন বলে ডাঃ সহিদুর রহমানের অভিযোগ। অনুপ্রবেশকারী হিসেবে আওয়ামী লীগে ঢুকে অনৈতিকপথে বিশাল সম্পত্তির অধিকারী হয়ে ঢাকা শহরে ফ্ল্যাট, সাতক্ষীরা শহরে ৪ তালা ও নিজ গ্রামে ২তালা বাড়ি, ২৭ লাখ টাকার গাড়ি করেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। এলাকাবাসী এই ফজলুর রহমানের হাত থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে রক্ষার জন্য ও অবৈধপথে উপার্জিত অর্থের উৎস জানতে তাকে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
×