ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৮ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২

বৈধতা পাচ্ছে বিদ্যুতচালিত যানবাহন ॥ ইজিবাইক চলছে ১১ লাখের বেশি

প্রকাশিত: ১০:৩৩, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

 বৈধতা পাচ্ছে বিদ্যুতচালিত যানবাহন ॥ ইজিবাইক চলছে ১১ লাখের বেশি

রাজন ভট্টাচার্য ॥ দেশজুড়ে অবৈধভাবে চলা বিদ্যুতচালিত যানবাহনগুলোকে একটি নিয়মের মধ্যে এনে বৈধতা দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। তাতে বলা হয়েছে, ইলেক্ট্রিক মোটরযান চালাতে হলে বিআরটিএ থেকে নিবন্ধন নিতে হবে; থাকতে হবে ফিটনেস সনদ, ট্যাক্স টোকেন। দেশে বিদ্যুতচালিত যানবাহনের সংখ্যা কত? এর সঠিক কোন পরিসংখ্যান নেই। বেসরকারী বিভিন্ন সংগঠনের তথ্য হলো ইজিবাইকের সংখ্যা ১১ লাখের বেশি। ব্যাটারিচালিত রিক্সাসহ নতুন নতুন মডেলের আরও কিছু ব্যাটারিচালিত পরিবহন রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈধতা পেলে প্রতিদিন প্রয়োজন হবে ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুত। এজন্য বিদ্যুত বিভাগের পক্ষ থেকে চার্জিং স্টেশন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। টাকার বিনিময়ে এসব স্টেশনে বিদ্যুতচালিত পরিবহন চার্জ দেয়া যাবে। বিদ্যুত সঙ্কটের মুখে সরকার এক সময় ইজিবাইক আমদানি নিষিদ্ধ করে। তবুও ব্যবসা বন্ধ থাকেনি। বিদেশ থেকে পার্টস আমদানি করে দেশে গাড়ি বানিয়ে বিক্রি হচ্ছে দেদার। ঢাকাসহ দেশের প্রতি আনাকে-কানাচে এখন ইজিবাইকের দাপট। অনুমোদনহীন এই যানটির চাহিদা যেমন রয়েছে তেমনি সব মানুষের কাছে সহজেই জনপ্রিয় হয়েছে। ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখলে এই পরিবহনটি দেশের যোগাযোগের ক্ষেত্রে পরিবর্তন এনেছে, সত্য। তবে নিষিদ্ধ হওয়া সত্যেও মহাসড়কে চলে! ফলে সড়ক দুর্ঘটনাও ঘটছে অহরহ। অনেক আগে থেকেই ইজিবাইক বৈধতা দেয়ার দাবি ওঠে। ৪৫ লাখের বেশি মানুষ এখন এই সেক্টরের সঙ্গে এখন প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি বিআরটিএর নতুন উদ্যোগের মধ্য দিয়ে ইজিবাইকেরও বৈধতা পাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বলেছেন, ইজিবাইক নিবন্ধনের আগে বুয়েটে পরীক্ষা করিয়ে নেয়া হবে। গত বছরের ২৬ নবেম্বর ‘ইলেক্ট্রিক মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন ও চলাচল সংক্রান্ত নীতিমালা-২০১৮’ এর খসড়া সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে পাঠায় বিআরটিএ। পরে গত ৬ জানুয়ারি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে একটি পর্যালোচনা সভা হয়। ওই সভায় বিভাগের সচিব মতামত দেন, নীতিমালার খসড়ায় যেসব বিষয় বলা হয়েছে তার বেশিরভাগই বর্তমান মোটরযান আইন ও বিধিতে আছে। এছাড়া ১৯৮৩ সালের মোটরযান আইন অনুযায়ী ইলেক্ট্র্রিক বা বিদ্যুতচালিত মোটরযান নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে, এ কারণে নতুন নীতিমালা তৈরির প্রয়োজন নেই। বিআরটিএর সাবেক সচিব শওকত আলী জানান, নতুন করে নীতিমালা তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। অন্য দেশেও বিদ্যুতচালিত পরিবহন নিবন্ধন পায়। তাছাড়া আমাদের দেশের সবখানেই এখন এসব পরিবহন ছড়িয়ে গেছে। চলাচলের সীমাবদ্ধতা দেখিয়ে বৈধতা নিশ্চিত না করলে সড়ক দুর্ঘটনা আরও বেড়ে যেতে পারে বলেও মত দেন তিনি। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সভায় সিদ্ধান্ত হয় প্রতিবেশী দেশ ভারতে বিদ্যুতচালিত মোটরযান কীভাবে নিবন্ধন হচ্ছে, কীভাবে চলাচল করছে, তা দেখতে একটি প্রতিনিধি দল পাঠানো হবে। এরপর বিআরটিএ একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে প্রস্তাব তৈরির কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন বিআরটিএর পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী। তিনি বলেন, আমরা একটি খসড়া নীতিমালা পাঠিয়েছিলাম। মন্ত্রণালয় বলেছে, এটি নীতিমালা আকারে না করে অফিস অর্ডার করে দেবে। নীতিমালা করবে না। মন্ত্রণালয় আমাদের বলেছে একটি প্রস্তাব পাঠাতে। এটি আমরা এখনও দেইনি। প্রস্তাব তৈরির কাজ চলমান। ইজিবাইকও এর আওতায় আসবে কি না- এই প্রশ্নে বিআরটিএর এই পরিচালক বলেন, নীতিমালায় পড়লে এ ধরনের যানবাহনও নিবন্ধন পাবে। তবে এজন্য আগে বুয়েট থেকে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। আমরা এগুলো বুয়েটে পরীক্ষা করব। পরীক্ষা করে যদি মনে করি তা নিরাপদ, তাহলে আমরা রেজিস্ট্রেশন দেব। বিষয়টি নিয়ে এখনও পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে বলে জানান, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের যুগ্ম সচিব নূর মোহাম্মদ মজুমদার। তিনি বলেন, নীতিমালাটি কীভাবে করা যায়, তা নিয়ে এখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে। যানবাহনগুলো চলতে গেলে একটা রেগুলেশন লাগবে। বর্তমান যে বিধি বা আইন আছে, এগুলোর সঙ্গে এটার লাইনআপ করতে হবে। বিভিন্ন আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকে বসতে হবে, কেবিনেটের অনুমোদন লাগবে। যা আছে খসড়ায় ॥ খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, কার্বন-ডাই-অক্সাইডের নিঃসরণ কমিয়ে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধ করার জন্য বিশ্বে ইঞ্জিনবিহীন মোটরযান ব্যবহারে উৎসাহ বাড়ছে। বাংলাদেশেও এ ধরনের মোটরযান ব্যবহার শুরু হয়েছে বিধায় এগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনা প্রয়োজন। বর্তমানে চলমান গাড়িগুলো কী পরিমাণ বিদ্যুত ব্যবহার করে, তার সঠিক তথ্য নেই বিদ্যুত বিভাগের কাছে। তবে প্রতিদিন আড়াই শ’ থেকে তিন শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুত ব্যবহার হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। তারা বলেন, এক সময় এসব যান বন্ধ করে দেয়ার চিন্তা থাকলেও তা থেকে এখন সরে এসেছেন তারা। বিআরটিএর কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে অনুমতি ছাড়াই লাখ লাখ বৈদ্যুতিক যানবাহন চলাচল করছে। এরমধ্যে ইজিবাইক হিসেবে পরিচিত থ্রি-হুইলারের সংখ্যাই বেশি। এসবের বেশিরভাগের অবস্থাই ভাল না, খুবই হাল্কা। নিবন্ধন পদ্ধতিতে পরীক্ষার ব্যবস্থা চালু হলে আমদানিকারকরা ভাল মানের ইলেক্ট্রিক থ্রি-হুইলারের আমদানি বাড়াবেন। খসড়া নীতিমালায় ইলেক্ট্রিক মোটরযানের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, রিচার্জেবল ব্যাটারিতে সঞ্চিত বিদ্যুত শক্তির সাহায্যে চালিত মোটরযান, যার ব্যাটারি বিদ্যুত বিতরণ লাইন বা নবায়নযোগ্য জ্বালানি (সৌরশক্তি, জৈব জ্বালানি ইত্যাদি) ব্যবহারের মাধ্যমে রিচার্জ করা হয়, তাকে ইলেক্ট্রিক মোটরযান বলা যাবে। তবে ব্যাটারিচালিত বাইসাইকেল বা রিক্সা এর অন্তর্ভুক্ত হবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে খসড়ায়। ইলেক্ট্রিক মোটরযানের আয়ুষ্কাল ধরার কথাও বলা হয়েছে খসড়া নীতিমালায়। এক্ষেত্রে মোটরসাইকেল ১০ বছর, তিন চাকার যান নয় বছর এবং হাল্কা, মধ্যম ও ভারি যানবাহনের আয়ুষ্কাল ২০ বছর ধরা হয়েছে। ইলেক্ট্রিক মোটরযানের নিবন্ধন ও ফিটনেস সার্টিফিকেট ও ট্যাক্সটোকেন এবং রুট পারমিট দেয়ার প্রক্রিয়া ইঞ্জিনচালিত মোটরযানের মতোই হবে। ভাড়ায় চালিত ইলেক্ট্রিক মোটরযানকে আঞ্চলিক পরিবহন কমিটির কাছ থেকে রুট পারমিট নিতে হবে। এক্ষেত্রে ভাড়ায় চালিত ইলেক্ট্রিক মোটরযানের জন্য সরকার ভাড়া নির্ধারণ করে দেবে। অন্য যানবাহনের মতোই ইলেক্ট্র্রিক মোটরযান শনাক্তের জন্য এর গায়ে বা ফ্রেমে প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের খোদাই করা নির্ধারিত ডিজিটের চেসিস নম্বর, মোটরযান শনাক্তের জন্য মোটরের গায়ে প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের খোদাই করা নির্ধারিত ডিজিটের মোটর নম্বর থাকতে হবে। মোটরযানের মোটর নষ্ট বা অকেজো হয়ে গেলে তা প্রতিস্থাপন করা যাবে বলেও খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে। অনুমোদিত চার্জিং স্টেশন বা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বা সোলার প্যানেল অথবা নবায়নযোগ্য যে কোন জ্বালানি ব্যবহার করে এর ব্যাটারি চার্জ করা যাবে। বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যুতচালিত গাড়ির জন্য চার্জিং স্টেশনও করা হচ্ছে। এজন্য আলাদা একটা ট্যারিফও ঠিক করা হয়েছে। ওরা যেন মানুষের বাসাবাড়ি থেকে বিদ্যুত না নেয়, কমার্শিয়াল যে রেট আছে, সেই রেটে ওরা চার্জ দেবে। যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেবে শুধু ইজিবাইকই আমদানি করা হয়েছে ১০ লাখের বেশি। সব মিলিয়ে ঢাকায় তিন চাকার যানবাহনের সংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ। ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে চলাচলের জন্য নিবন্ধিত ২৫ হাজার অটোরিক্সা বাদে বাকি সব ধীরগতির যানবাহন মহাসড়কে চলছে বলে জানান। ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত তিন চাকার গাড়িকে নিবন্ধন দেয় না সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। ২০১১ সালে আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু চালু গাড়িগুলো পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার শর্তে সেগুলোর জন্য যন্ত্রাংশ আমদানি করতে দেয়া হয়েছিল। তারপর থেকে যন্ত্রাংশের নামেই বিক্রি হচ্ছে আস্ত গাড়ি। প্রায় সব জেলা ও উপজেলা শহরে উন্মুক্ত বিক্রয়কেন্দ্রও আছে। বিআরটিএ নিবন্ধন না দিলেও পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ লাইসেন্স দিচ্ছে। জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের সদস্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শামছুল হক জানিয়েছেন, মহাসড়কে দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ ধীরগতির যানবাহন। তিনি বলেন, মহাসড়কে বাস, ট্রাক, মোটরসাইকেল, প্রাইভেট গাড়ির মতো দ্রুতগতির যান যেমন চলে, একই সঙ্গে চলে ধীরগতির অটোরিক্সা, ইজিবাইক, শ্যালো ইঞ্জিনচালিত গাড়ি, ব্যাটারিচালিত গাড়ি ও রিক্সা। তিনি বলেন, পৃথিবীর কোন দেশে মহাসড়কে এমন বারোয়ারি যান চলাচল করে না। ধীরগতির যানগুলো দুর্বল হওয়ায় এর যাত্রী ও চালকদের নিরাপত্তা নেই। মহাসড়ক নিরাপদ করতে দ্রুতগতি ও ধীরগতির যানবাহনের জন্য পৃথক সড়ক বা লেন থাকতে হবে। সরকারের পরিকল্পনাতেও রয়েছে মহাসড়কে ধীরগতির জন্য পৃথক লেন থাকবে। নির্মাণাধীন ঢাকা-মাওয়া-ভাঙা মহাসড়কে পৃথক লেন রাখা হচ্ছে ধীরগতির যানবাহনের জন্য। কিন্তু বিদ্যমান দেশের প্রধান ছয় মহাসড়কের কোনটিতে ধীরগতির লেন নেই। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের একাধিকবার জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে সব মহাসড়কেই ধীরগতির যানবাহনের জন্য পৃথক লেন থাকবে। তবে গত দুই বছরে এ ঘোষণা কার্যকর হয়েছে সামান্যই। ব্যাপক প্রচার চালিয়ে ২০১৫ সালের ১ আগস্ট ২২টি জাতীয় মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করে সরকার। তিন চাকার পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের প্রতিবাদে মহাসড়কে নৈরাজ্যকর অবস্থা সৃষ্টি হয়। ব্যাপক জনভোগান্তি হলেও সরকার চাপের কাছে নতিস্বীকার করেনি। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেনি। তবে যানবাহল চলাচল অব্যাহত রয়েছে। অবৈধ যানবাহন বৈধতা দেয়ার উদ্যোগের কারণ ব্যাখ্যা করে বিআরটিএ পরিচালক রব্বানী বলেন, ‘পৃথিবীর সব জায়গায় ইলেক্ট্রিক গাড়ির বিষয়ে আগ্রহ বাড়ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশেও কয়েকটি ইলেক্ট্রিক কার এসেছে। ‘গাড়ি যেহেতু এখানেও আসা শুরু করেছে, স্বাভাবিকভাবেই একে একটা নীতিমালার আওতায় আনতে হবে। জেলা শহরগুলোতে চোখে পড়ে অসংখ্য বিদ্যুচালিত যান। ব্যবসায়ীরা বলছেন, রিক্সা থেকে চলাচলে ইজিবাইক গাড়ি সময় সাশ্রয়ী। রিক্সা ও সিএনজি থেকে ভাড়াও কম। একসঙ্গে বেশি মানুষ যাতায়াত করতে পারেন। অল্প টাকায় বেশি দূরত্বে যাতায়াত করা সম্ভব। সেইসঙ্গে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের অর্থনৈতিক উন্নতি হচ্ছে ব্যাপকভাবে। চালকরাও হচ্ছেন স্বাবলম্বী। পাশাপাশি রিক্সা চালানোর মতো কঠিন কায়িক পরিশ্রম থেকে ইজিবাইক চালানো খুবই সহজ। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) ইজিবাইক চালানোর অনুমতি দিলে গাড়ি প্রতি পাঁচ হাজার টাকা করে ১০ লাখ গাড়ি থেকে বছরে ৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করা সম্ভব। ২০০১ সালের ৫ মে ইজিবাইকের আমদানি বন্ধে সরকারী সিদ্ধান্ত হয়। ব্যবসায়ীদের দাবি ইজিবাইক চলাচলের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা হোক। এতে দেশের বেকার সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে। সড়ক নিরাপত্তার হুমকি এড়াতে ইজিবাইক চালকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণেরও দাবি ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকদের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই যান পরিবেশবান্ধব। এছাড়া সেনাবাহিনীর অধীন বাংলাদেশ ডিজেল প্লান্টে সংযোজন করা হয়েছে আরও প্রায় ১০ হাজার ইজিবাইক। এসব ইজিবাইকের প্রতিটির ব্যাটারি চার্জ দিতে গড়ে প্রতিদিন ৯ কিলোওয়াট বিদ্যুত খরচ হচ্ছে। লাবিব এন্টাপ্রাইজের স্বত্ব¡াধিকারী নাসির আহমেদ চৌধুরী বলেন, সারাদেশে মানুষ এখন ইজিবাইকের ওপর খুব বেশি নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছে। কারণ একজন চালক প্রতিদিন কমপক্ষে এই গাড়ি চালিয়ে এক হাজার টাকা আয় করছেন। কিন্তু চার লাখ টাকা ব্যয় করে বিদেশে গিয়ে মাসে ২০ হাজার টাকা আয় করতে শ্রমিকদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। ইজিবাইক পার্টস আমদানির সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পরিবহনটির বৈধতার জন্য তারা বছরের পর বছর সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়সহ বিআরটিএ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। জিম ট্রেড অটো লিমিটেডের স্বত্ব¡াধিকারী নজরুল ইসলাম নয়ন জনকণ্ঠকে বলেন, দিন দিন ইজিবাইকের চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু ব্যবসা করতে গিয়ে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। একদিকে সরকার বলছে এসব গাড়ি চলবে না। বাস্তবতা হলো সবখানেই এখন ইজিবাইক।

আরো পড়ুন  

×