ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২

বেচাকেনায় পুরো জমজমাট হয়নি রাজধানীর পশুর হাট

ভাই দাম কতো?

প্রকাশিত: ০১:৩০, ৩০ আগস্ট ২০১৭

ভাই দাম কতো?

ওয়াজেদ হীরা ॥ ‘ভাই দাম কতো?’ ‘কতো দাম?’ আগ্রহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আর উত্তর খুঁজতে বার বার প্রশ্ন করছেন অজানা-অচেনা অংসখ্য মানুষ। আর সবারই প্রশ্নের উত্তর হাসি মুখে দিচ্ছেন আব্দুল হাসান। উত্তরও সংক্ষিপ্ত ৫৫। প্রশ্নকর্তারা এতেই বুঝে যায়! শুধু আব্দুল হাসানই নয়। জসিম উদ্দিন, বাদল খন্দকার, ইমরুল সোহেল এরা সবাই একসাথে ফিরেছেন আফতাব নগরের গরুর হাট থেকে। আর মাত্র মাঝে দুটি দিন এর পরই ত্যাগের মন মানসিকতায় মুসলিম বিশ্ব পালন করে ঈদ উল আযহা। আর কোরবানি মানেই পশুর কদর। হাটে ইতোমধ্যেই পশু বিকিকিনি শুরু হয়েছে। তবে বেচাকেনা পুরো জমজমাট নয়। অল্প অল্প হলেও বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর পশুর হাট থেকে যারাই পশু কিনে ফিরছেন প্রায় সারাটা পথই তাকে প্রশ্ন শুনতে হয় ‘ভাই দাম কত? বা কতো নিলো?’ এ জাতীয় প্রশ্নে। যারা প্রশ্ন করছেন তারা কেউ পরিচিত বা চেনাজানা নয়। তবুও জানার আগ্রহ অনেক। কেননা, এই দাম জানার মধ্য দিয়েই প্রশ্নকর্তাও ধারণা নিয়ে ফেলেন তার জন্য কেমন পশু চাই। পশু কিনে ফেরার পথে হাজারো দাম জানার প্রশ্ন থাকলেও কোরবানির পশু কিনে বেশ উচ্ছ্বসিত কণ্ঠেই উত্তর দেন ক্রেতারা। একটুও বিরক্তি নেই সে উত্তরে। তবে উত্তরটা হয় সংক্ষিপ্ত। ৪০, ৪৫ ৫০, ৬০ বা ৮০ তাতে প্রশ্নকর্তাও বুঝে নিতে পারে গরুটির দাম কতো। ঐ সংখ্যার সঙ্গে ‍হাজার শব্দটা জুরে দিলেই হলো। রাজধানীতে এবার স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে মোট কোরবানির পশুর হাট বসছে ২৩টি। এর মধ্যে দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় অস্থায়ী হাটের সংখ্যা ২২টি। ১৩টি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ও ১০টি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায়। ডিএসসিসি এলাকার মধ্যে মেরাদিয়া বাজার, আফতাবনগর হাট, উত্তর শাহজাহানপুর-খিলগাঁও রেলগেট বাজারসংলগ্ন মৈত্রী সংঘের মাঠ, ব্রাদার্স ইউনিয়ন সংলগ্ন বালুর মাঠ, কমলাপুর স্টেডিয়ামের উল্টোপাশের খালি স্থান, জিগাতলা হাজারীবাগ মাঠ, রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ, কামরাঙ্গীরচর ইসলাম চেয়ারম্যানের বাড়ির মোড় থেকে দক্ষিণ দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর বাঁধসংলগ্ন জায়গা, আরমানিটোলা খেলার মাঠ ও আশপাশের খালি জায়গা, ধূপখোলা ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব মাঠ, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন খালি জায়গা, দনিয়া কলেজ মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, শ্যামপুর বালুর মাঠ এবং সাদেক হোসেন খোকা মাঠ সংলগ্ন ধোলাইরখাল ট্রাক টার্মিনাল ও সংলগ্ন খালি জায়গায় হাট বসছে এবার। ডিএনসিসি গাবতলীর স্থায়ী হাট বাদে আরও নয়টি হাটের স্থান করেছে। এর মধ্যে মিরপুর ডিওএইচ এস সংলগ্ন উত্তর পাশের খালি জায়গা, বসুন্ধরার দক্ষিণ পাশের খালি জায়গা এবং বছিলায় হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ডিএনসিসির হাটগুলোর মধ্যে রয়েছে কুড়িল, বসিলা, মিরপুরের ডিওএইচএস সংলগ্ন উত্তর পাশের খালি জায়গা, উত্তরার ১৫ নং সেক্টর, খিলক্ষেত বনরূপা আবাসিক প্রকল্প,বাড্ডার আশিয়ান সিটি, ভাটারার সাঈদনগর, আফতাবনগর, মিরপুরের ৬ নং সেকশনপশুর হাট। অনেকেই উট কোরবানি দিতে চান। উট পাওয়া যাবে কমলাপুর হাটে। সেখানে উটের খামার রয়েছে। কোরবানি উপলক্ষে তারা হাটে উট আনেন। এছাড়াও গাবতলীর হাটেও উঠেছে উট। আর এসকল হাটগুলোতে ছাগল-খাসি-ভেড়া বিক্রির জন্য আলাদা জায়গা রয়েছে। তবে সাধারণত অনেক সময় দেখা যায় ছাগল খাসি নিয়ে রাজধানীর অলি গলিতে বিক্রেতারাই ঘুরছেন। বাড়ির কাছের হাটে গিয়েও অনেকে কাঙ্ক্ষিত পশুটিতে না মিললে ছুটে যান অন্য হাটে। রাজধানীর আফতাবনগর হাট থেকে টুকটুকে লাল রঙের ষাড় কিনে ফিরছিলেন ইমতিয়াজ। পেশায় বেসরকারি চাকুরিজীবী। তিনি বলেন, ৬৫ হাজার টাকায় গরুটি কিনেছি। যতক্ষণ এসেছি যার সাথেই দেখা হয় সেই দাম জানতে চায়। আমারও কোন বিরক্ত নেই। তবে গরু কিনে দাম নিয়ে সন্তুষ্টিও প্রকাশ করলেন তিনি। দাম জানতে চাওয়া বিষয়ে একাধিক প্রশ্নকর্তার কাছে জানাতে চাইলে সবারই উত্তর একটাই গরুর দাম নিয়ে একটু ধারণা নিতেই দাম জিজ্ঞেস করা হয়। শহিদুর হাবিব এখনো গরুর হাটেই যাননি। তবে ইতোমধ্যেই তার বাসার সামনে দিয়ে কিনে আনা গরুর দাম জানতে জানতে এতটুকু বুঝেছেন গরুর দাম তুলনামূলক একটু কম। তিনি বলেন, ‘যে দামে যে সাইজের গরু দেখছি লোকজন কিনছে তাতে গরুর বাজার এ বছরও একটু কমই থাকবো।’ এদিকে, গরুর বাজারের হালহকিয়ত জানতে রাজধানীর আফতাবনগর, উত্তর শাহজাহানপুর এবং গাবতলীর পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, গরুর বিক্রি তেমন শুরুই হয়নি। বিক্রেতারা গরু নিয়ে বসে আসেন। ক্রেতারাও আসছেনে, দেখছেন। মাজে মধ্যে বিক্রিও হচ্ছে তবে বিক্রির সংখ্যাটা খুবই কম। বিক্রেতারা মনে করছেন মূল বেচাকেনা হবে বৃহস্পতিবার থেকে। এদিকে, ঈদের আহে শেষ কর্মদিবসও হচ্ছে বৃহস্পতিবার। একদিকে রাজধানী ছাড়বে মানুষ অন্যদিকে পশুর হাটে ভিড়ও বাড়বে। সব ব্যস্ততা শেষে কোরবানির জন্য পছন্দসই ও সাধ্যের মধ্যে ভালো পশু কিনতে হাটগুলোতে ছুটবে রাজধানীর বাসিন্দারা। গাবতলীর হাটে কুষ্টিয়া থেকে গরু নিয়ে আসা রমিজ উদ্দিন বলেন, আমি চারটা গরু এনেছি, ক্রেতা এমন দাম কয় মনে হয় গরু রাইখাই চইলা যাই। তবে আশাও ছাড়েন নি তিনি। বলেন, ‘সামনে সময় আছে দেখি বেচাকেনা হবে মনে হয়’। রমিজ উদ্দিনের প্রতিবেশি আব্দুল সিরাজও গরু এনেছেন চারটি তবে তার একটি গরু ইতোমধ্যেই বিক্রি হয়ে গেছে। বুধবার সকালে বিক্রি করেছেন গরুটি ৫২ হাজার টাকায়। প্রত্যাশা ছিলো আরো বেশি বিক্রির তবে বিক্রি কম বলে অল্প হলেও বিক্রি করে দিয়েছেন আর বাকি তিনটি নিয়ে আশায় আছেন ভালো দাম পাবেন। রাজধানীর বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতারা দলবেধে ঘুরছেন আর দাম জানতে চাইছেন। অনেকটাই গরুর বিষয়ে ধারনা নিচ্ছেন। বিক্রেতারাও দাম হাকাচ্ছেন নেহাত কম নয়। অধিকাংশ বিক্রেতারা যারা এক এলাকার অনেকগুলো গরু নিয়ে একসাথে হাটে এসেছেন তারাও খোশ গল্পে মেতে আছেন। তবে গরু বিক্রি না হলে কি হবে সে বিষয়েও চিন্তিত। পাবনার ব্যবসায়ী দুলাল মিয়া বলেন, একটু বেশি দাম পাওয়ার আশায় আমরা গরু ঢাকায় আনি। যদি ভালো দাম না পাই তাহলে গরুর ব্যবসাই ছেড়ে দিতে হবে। দিনের বেলার চেয়ে রাতের বেলায় মানুষের ভিড় আরো বাড়ে পশুর হাটে। আফতাব নগরের হাটের এক ইজারাসংশ্লিষ্টরা এমনটাই জানালেন। তাদের মতে, রাতে গরুর ট্রাক আসে, ক্রেতাও আসে। রাতে গরম কম থাকে তাই ভিড়ও বেশি থাকে। হাটের ইজারাসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার রাতে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হবে। তবে শুক্রবার সারাদিনই হাট জমজমাট থাকবে। এদিকে, পশুর হাটগুলোতে দেখা গেছে নির‍াপত্তার কোন কমতি নেই। ৠাব-পুলিশের চৌকি বসানো হয়েছে হাটগুলোতে। এছাড়াও জালটাকা সনাক্তের জন্য রয়েছে মেশিনও। পশুর হাটে বিকিকিনি এখনো তেমন না হলেও মানুষের সম‍াগম আর কোলাহল বলে দেয় আসন্ন কোরবানির আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে সবখানেই।
×