
ছবি: জনকণ্ঠ
নারিকেল-সুপারি ভরপুর, উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুর। লক্ষ্মীপুরে প্রতিবছরই নারিকেলের বাম্পার ফলন হয়। এখানকার নারিকেল দেশের চাহিদার বিশাল অংশের জোগান দেয়। উপকারী নারিকেল থেকে তৈরি হয় মুখরোচক খাবার ও তেল।
কেবল নারিকেলই নয় এখানে খোসাকে ঘিরেও গড়ে উঠেছে লাভজনক ব্যবসা।
এর ফেলনা খোসা জ্বালানি ছাড়াও বিছানার আরামদায়ক জাজিম, পাপোস, রশি, সোফা ও চেয়ারের গদিসহ বিভিন্ন ধরনের শৌখিন ও প্রয়োজনীয় পণ্য তৈরিতে ব্যবহার হয়। এসব তৈরিতে যথাযথ বিকল্প উপকরণ না থাকায় নারিকেলের খোসার রয়োছে বেশ কদর। তৈরি হয়েছে বিশাল অর্থনৈতিক বাণিজ্য।
তাছাড়া খোসা থেকে পাওয়া ভুসি বা তুষ দিয়ে বিভিন্ন সার এবং মশার কয়েলও তৈরি করা হয় বলে জানা যায়।
সেজন্য লক্ষ্মীপুরে নারিকেলের খোসা মেশিনের সাহায্যে প্রক্রিয়া করে আঁশ ও ভুসি তৈরি করে ব্যবহার উপযোগী করছেন উদ্যোক্তারা। এটি করতে আলাদাভাবে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয় না। যে কারণে সহজেই অল্প পুজিঁর মাধ্যমে এ ব্যবসা শুরু করা যায়।
জেলার সবচেয়ে বড় নারিকেলের হাট সদর উপজেলার দালাল বাজার। এখানে রয়েছে নারিকেলের বেশ কয়েকটি আড়ত। প্রতিদিনই খোসা ছাড়িয়ে সড়ক ও নৌপথে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যায় এখানকার নারিকেল। সেখান সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে নারিকেলের ১ টি খোসা ১-২ টাকায় ক্রয় করেন উদ্যোক্তারা। সেখানে নারিকেলের খোসাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে অনেকগুলো কারখানা।
সেখানে নারিকেলের খোসা একটি মেশিনে তুলে দিলেই মুহূর্তেই হয়ে যায় চিকন আঁশ। তৈরি করা আঁশ একটি বাক্সে ঢুকিয়ে রশি বেঁধে ২০ কেজি বান্ডেল তৈরি করা হয়। একেকটি ফ্যাক্টরিতে দৈনিক আঁশ তৈরি করা যায় ২০-২৮ মন। এক মণ আঁশ বিক্রি করা হয় ১২ শ থেকে ১৪ শ টাকায়। মাসে প্রায় সাড়ে ৪ শ মন আঁশ বিক্রি করে একেকটি কারখানা। এতে আয় হয় প্রায় অর্ধ লক্ষ টাকা।
তাছাড়া নারিকেলের খোসা থেকে আঁশ তৈরির সময় খোসার ৬৬% তুষ বা ভুসি বের হয়। নারিকেলের তুষে ৩১% সেলুলোজ ও ২৭% লিগনিন জাতীয় জৈব পদার্থ আছে এবং এর কার্বন ও নাইট্রোজেন। এই ভুসি বা তুষ দিয়ে তৈরি হয় জৈব সার এবং মশার কয়েল। এই ভুসি বা গুড়া বিক্রি হয় কেজি ৩০০-৩৫০ টাকা।
প্রক্রিয়াকৃত এসব আঁশ ও ভুসি গুলো বিক্রি করা হচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানির নিকট। আঁশ এবং ভুসি বিক্রি করে একটি কারখানা মাসে আয় করতে পারে প্রায় এক লক্ষাধিক টাকা। জানা যায়, এ আঁশ এবং ভুষি-তুষ ঢাকা,চট্টগ্রাম, কুষ্টিয়া সহ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে যাচ্ছে চায়নাতেও।
ব্যাপক চাহিদা থাকায় লক্ষ্মীপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে ৫০টিরও বেশি খোসা প্রক্রিয়াকরণ ও ব্যবসা গড়ে উঠেছে। এতে শত শত লোকের কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হয়েছে। আর খোসা থেকে তৈরি শৌখিন ও আরামদায়ক পণ্য দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব।
লক্ষ্মীপুরের নারিকেলের ব্যবসায়ীরা জানান,আগে নারিকেলের খোসা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হতো। বর্তমানে জাজিম, পাপোস, রশি, সোফাসহ প্রয়োজনীয় পণ্য তৈরিতে ব্যবহার হয়ে আসছে। যে কারণে গত কয়েক বছর থেকে খোসার ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে। এখন নারিকেল ও খোসা আলাদা বিক্রি করেন। তাতে তাদের লাভও বেশি হয়।
উদ্যোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক ভাবে এর রপ্তানি বাড়ালে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সম্ভাবনা আছে বলে মনে করেন সচেতন মহল।
সাব্বির