ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২

দুর্ঘটনার পর জনরোষে পুড়ল ‘শাম্মি ডিলাক্স’, পথে বসেছে চার সন্তানের পরিবার

মারুফুর রহমান, শেরপুর

প্রকাশিত: ০৯:২৪, ১৮ জুন ২০২৫; আপডেট: ০৯:২৪, ১৮ জুন ২০২৫

দুর্ঘটনার পর জনরোষে পুড়ল ‘শাম্মি ডিলাক্স’, পথে বসেছে চার সন্তানের পরিবার

ছবি: সংগৃহীত

শেরপুর পৌর শহরের রাজভল্লভপুর মহল্লার বাসিন্দা মো. ফেরদৌস আলী এক বছর আগে ইফাদ অটোস লিমিটেড থেকে কিস্তিতে ‘শাম্মি ডিলাক্স’ নামের একটি যাত্রীবাহী বাস কেনেন। বাসটির নম্বর ছিল ঢাকা মেট্রো-ব-১৫-৫১৯২। শেরপুর-ঢাকা রুটে নিয়মিত বাসটি পরিচালনা করছিলেন তিনি।

গত শনিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে শেরপুর সদর উপজেলার ভাতশালা ইউনিয়নের বাঁশতলা এলাকায় চলন্ত অবস্থায় বাসটি একটি মোটরসাইকেলে ধাক্কা দিলে, এক অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এই ঘটনার পরপরই উত্তেজিত জনতা বাসটিতে অগ্নিসংযোগ করে। বাসে আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছেও স্থানীয় জনতার বাধায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি।

বাসের মালিক মো. ফেরদৌস আলী বলেন, ‘৩৫ লাখ টাকা দিয়ে বাসটি কিনেছিলাম। এখনো ৫ লাখ টাকা কিস্তি বাকি রয়েছে। এটাই ছিল আমার একমাত্র আয়ের উৎস। বাসটি পুড়ে যাওয়ায় আমি এখন পরিবারসহ পথে বসেছি। আমার চার সন্তান অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।’

এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শেরপুর জেলা সড়ক পরিবহন খাতের নেতৃবৃন্দ। তারা দোষীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা এবং ক্ষতিগ্রস্ত মালিকের যথাযথ ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন।

অন্য গাড়ির মালিক সুভল সাহা বলেন, ‘আমরা যারা ব্যক্তিগতভাবে গাড়ি কিনে রাস্তায় চালাই, তারা এমন ঘটনায় আতঙ্কে আছি। রাস্তায় নিরাপত্তাহীনতার কারণে গাড়ি চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে।’

বাস মালিক অশিত কুমার অন্তু বলেন, ‘যদি কেউ দোষ করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক। কিন্তু বাস পুড়িয়ে দেওয়া কোনো সমাধান নয়।’

শেরপুর জেলা মিস্ত্রি সমিতির সভাপতি রিপন বলেন, ‘একটি বাস মানে শুধু মালিক নন, সঙ্গে জড়িত থাকেন চালক, হেল্পার, মিস্ত্রি—অনেকেই। একটি বাস পোড়ানোর মানে একাধিক পরিবারের ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া।’

শেরপুর জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সহ-সভাপতি মো. আব্দুল হামিদ বলেন, ‘আমরা ক্ষতিগ্রস্ত মালিকের পাশে আছি। প্রশাসনের উচিত দ্রুত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া।’

জেলা বাস মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গৌতম কুমার সাহা বলেন, ‘এই ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া জরুরি। যারা জনরোষের সুযোগ নিয়ে বাসে আগুন দিয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে মালিক যেন ক্ষতিপূরণ পান, তা নিশ্চিত করতে হবে।’

এ ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও সংশ্লিষ্টদের প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, এখন পর্যন্ত বাস মালিককে কোনো ধরনের সহায়তা বা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি।

 

মারুফুর রহমান/রাকিব

×