ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২

হৃদয়ের গহীনে

শরিফুল রোমান

প্রকাশিত: ০৯:২৩, ১৮ জুন ২০২৫

হৃদয়ের গহীনে

ছবি: এমডি সাব্বির (প্রতীকী ছবি)

গভীর রাতেও  বাইরে থেকে জানালা দিয়ে আলো জ্বলতে দেখা যায় ঘরের ভিতরে। টিনশেড বাড়ি। ছোট্র । টিনের পাঁচিল দিয়ে ঘেরা।  শহরতলীর এক প্রান্তে। একটি ছোট্র গলির শেষ মাথায়। চারটে রুম। আলো জ্বলে মাত্র একটি রুমে, ওইটা আমার শোবার ঘর। আলো না জ্বালিয়ে আমি ঘুমাতে পারি না। অন্ধকারে থাকতে ভয় করে। 
 একেতো শ্রাবণ মাস। তারপরে বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। ঘড়ির কাটায় ১২টা বেজে ১৫ মিনিট হয়েছে অনেক আগেই। প্রায়  দু’ঘণ্টা ইলেকট্রিসিটি ছিল না। এইতো মিনিট বিশেক আগে ইলেকট্রিসিটি এসেছে। অন্য সময়ে বৃষ্টিকে রোমান্টিক মনে হয়। কিন্তু এমুর্হুতে বৃষ্টিকে কেমন যেন ভৌতিক মনে হচ্ছে। ইলেকট্রিসিটি না থাকার সময়ে ভূতুড়ে অন্ধকারে মনে হয়েছিল আজ পৃথিবী প্রলয় হয়ে যাবে। দিনের আলোতে মনে হয় আর চির চেনা পৃথিবীটাকে  দেখা হবে না। ....
 এমন সময় দরজায় নক করার শব্দ। দুর্যোগময় রাতে যে আমার দরজায় নক করে সে অন্তত কোন সুসংবাদ দিতে আসেনি। কি হতে পারে দ্রুত চিন্তা করছি- মৃত্যু সংবাদ। রোড অ্যাকসিডেন্ট। হার্টএটাক করে কেউ কি হাসপাতালে। এসব কথা ভাবতে ভাবতে যখন দরজা খুললাম

-  তখন দেখলাম আমার সাংবাদিক বন্ধু রূদ্র কমল।
-  কিরে, তুই এমন অসময়ে ? 
 - কেন তোর বাসায় আসতে সময়- অসময়  আছে নাকি ? থাকলে বল চলে যাই।
- ঠিক তা নেই। কিন্তু এই প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে....।
- আচ্ছা, তুই আমাকে ভেতরে ঢুকতে দিবি ? নাকি দরজার বাইরে দাঁড় করিয়ে    রাখবি ?
- ওকে ভেতরে ঠুকতে দিলাম ঠিকই। কিন্তু আমার বিস্ময় কাটছে না। ওর পোশাক- পরিচ্ছেদ বৃষ্টিতে ভেজা। চোখ দু’টো জবা ফুলের মতো লাল ( সম্ভবত ...)। 
-  তোর সাথে আমার জরুরি কিছু কথা আছে।
কমল কেমন যেন অস্বাভাবিক আচরণ করছে।
- আমি তোর কোন কথা বুঝতে পারছি না। 
- তুই বুঝতে না পারলে আমার কিছুই করার নেই বলে কমল ব্যাগ থেকে একটি ডাযেরি বের করে দিল। 
- কার ডায়েরি ?
- কার আবার ! আমার ! বোকার মতো প্রশ্ন করছিস কেন ?
- তোর ডায়েরি দিয়ে আমি কি করবো ?
- কি করবি মানে পড়বি। 
- তোর ডায়েরি আমি পড়বো কেন? কারো ব্যক্তিগত ডায়েরি পড়া উচিত না। 
উচিত বা অনুচিত তা আমি জানি না। আমি বলছি, তুই পড়বি।
- ঠিক আছে না হয় পড়লাম। তারপর ?
- তারপর তুই সুন্দর একটা গল্প লিখবি। 
- ভালোই বলেছিস, ডায়েরি পড়ে গল্প লিখবো। লিখিসতো সংবাদ । গল্প লিখলে বুঝতে পারতি ....।
- আমার বিশ্বাস তুই পারবি। আমি তোর লেখা অনেক গল্প পড়েছি। একটি শব্দ থেকে তুই অসাধারণ গল্প লিখতে পারিস।
- ঝোলা মারার আর জায়গা  পাওনি। আমার ওই ধরনের কোন ঐশ্বরিক ক্ষমতা নেই। আমাকে কিছুটা সময় চুপ করে থাকতে দেখে কমল বলল - 
  এখানে তুই একটা নারী চরিত্রের দেখা পাবি। যার নাম বিন্দু। তুই তোর গল্পে বিন্দুকে অমর করে রাখবি।
- আমি যাকে কখনো দেখিনি। যার সর্ম্পকে কিছুই জানিনা। তাকে কি করে গল্পে অমর করে রাখবো ? তোর কি মাথা ঠিক আছে ? 
- প্লিজ, রূপক আমাকে ফিরিয়ে দিস না। 
- তোর লেখার সুবিধার্থে একটা ফোন নম্বর দিচ্ছি, নম্বরটা লিখেন।
-  তুই নিজেইতো পারিস চরিত্রটিকে অমর করে রাখতে। আমার ওপর দায় চাপাচ্ছিস কেন ?
- আমার সে ধরনের ক্ষমতা নেই। যদি থাকতো তাহলে আর তোর কাছে আসতে হতো না।
 কমল এখন ঘোরগ্রস্থ হয়ে আছে। আমার  কৌতূহল হলো। কোন সে বিন্দু যে কমলকে অমরত্বের পক্ষে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। এই কৌতূহলের জন্যে শেষ পর্যন্ত ডায়েরিটা রেখে দিলাম। পড়ে দেখি না । লিখতেই হবে এমনতো কোন কথা নেই। আমার শত অনুরোধ উপেক্ষা করে দুর্যোগময় সে রাতে কমল চলে যায়। 
 বন্ধু কমলের অনুরোধ এবং নিজের কৌতূহল মেটানোর জন্যে এক সময়ে ডায়েরিটা পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। ডায়েরিটা পড়তে অনেক বেশি সময়  দিতে হয়েছিল আমাকে। এমনিতেই কমলের শব্দ গাঁথুনি চমৎকার। তার সাথে যোগ হয়েছে প্রবল ইমোশন। আমি অবশ্য ইতোমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি - আমার পক্ষে এ গল্প লেখা সম্ভব না।

সাব্বির

×