
ছবিঃ সংগৃহীত
আবহা-সৌদি আরবের 'আছির প্রদেশের রাজধানী। এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২,২৭০ মিটার (৭,৪৫০ ফুট) উপরে দক্ষিণ-পশ্চিম সৌদি আরবের আছির পর্বতমালায় (আছির জাতীয় উদ্যানের) নিকটে অবস্থিত। শহরটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আল-দাকাল দুর্গ সংস্কারের পর আবারও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তার গৌরবময় স্থান পুনরুদ্ধার করেছে। এ প্রকল্পটি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অন্তর্গত হেরিটেজ কমিশন বাস্তবায়ন করেছে।
কর্তৃপক্ষের এই উদ্যোগ দুর্গটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও স্থাপত্যের মৌলিকতা পুনঃস্থাপন করেছে, যার ফলে এটি আছির অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক গন্তব্যে রূপান্তরিত হয়েছে। আবহার মনোরম ও শীতল জলবায়ু একে সৌদি আরবের মানুষের কাছে একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেছে।
কিং খালিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. গাইথান গ্রেসসহ অন্যান্য গবেষকদের মতে, দুর্গটি প্রায় ১১০ বছর আগে হিজরি ১৩৩৪ সালে (খ্রিস্টাব্দ ১৯১৬ সালের আশেপাশে) নির্মিত হয়েছিল।
সাম্প্রতিক পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ কার্যক্রমের সময় দুর্গের ক্ষতিগ্রস্ত অংশসমূহ স্থানীয় প্রাকৃতিক পাথর দিয়ে সতর্কতার সাথে পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে, যাতে এর প্রাচীন স্থাপত্যশৈলী অবিকৃত থাকে। অভ্যন্তরীণ করিডোর ও কক্ষসমূহ পরিষ্কার করে নান্দনিকভাবে পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে, ফলে দর্শনার্থীরা আসির অঞ্চলের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য ও ইতিহাসের অনন্য স্বাদ উপভোগ করতে পারেন।
ড. মাহফুজ আল-জাহরানি তাঁর গবেষণা ‘দ্য ফোর্টিফিকেশন্স অফ দ্য সিটি অফ আভা’ (২০০৬) গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, ‘আল-দাকাল’ নামটি শুদ্ধ আরবি শব্দ থেকে এসেছে, যার অর্থ উচ্চতা বা উঁচু স্থান। এটি পালতোলা নৌকার কেন্দ্রীয় মাস্তুলের প্রতীক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়, যা দুর্গটির উঁচু অবস্থানকে ইঙ্গিত করে।
পাহাড়ি পাথুরে ভিত্তির উপর নির্মিত দুর্গটি পার্বত্য ভূপ্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রাচীন স্থাপত্যরীতি অনুসরণ করে তৈরি করা হয়েছে। এর আয়তাকার বিন্যাস প্রায় ৪৩.৬ মিটার লম্বা ও ১৬ মিটার চওড়া, যার উত্তর অংশটি অর্ধবৃত্তাকার। এটির উত্তর ও পশ্চিম প্রান্তের প্রাকৃতিক ঢালগুলোকে দুর্গের প্রতিরক্ষার অংশ হিসেবে কাজে লাগানো হয়েছে।
দুর্গের মূল কাঠামো তিনটি ভাগে বিভক্ত: কমান্ড সেন্টার, সৈন্যদের আবাসন এবং একটি সেবামূলক অংশ। একটি কেন্দ্রীয় প্রাঙ্গণ দুর্গটিকে পূর্ব ও পশ্চিম শাখায় ভাগ করেছে। এর অন্যতম আকর্ষণ হলো একটি বৃহৎ পাথরের চুলা, যেখানে সৈন্যরা রুটি তৈরি করত। এর মুখ প্রায় দুই মিটার চওড়া এবং এর চিমনি ১১০ সেন্টিমিটার উঁচু।
দুর্গটিতে একটি সিল করা শস্যভাণ্ডারও রয়েছে, যা পাথরের নিরোধক ব্যবহার করে আর্দ্রতা ও কীটপতঙ্গ থেকে রক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া আছির অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী খাবার ‘হানীথ’ প্রস্তুতের জন্য একটি আলাদা স্থানও রয়েছে।
স্থানীয় কারিগররা দুর্গটি গ্রানাইট পাথর ব্যবহার করে নির্মাণ করেছেন, যা ক্ষয়রোধী হিসাবে পরিচিত। ছাদের জন্য জুনিপার কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে, যা মাটি, আখশলাকা (শোহাত) এবং লাল সাগর থেকে আমদানি করা প্লাস্টার দিয়ে সম্পূর্ণ করা হয়েছে। বহির্মুখে জলরোধী এবং শৈল্পিক প্লাস্টার প্রলেপ দেওয়া হয়েছে।
ছাদ নির্মাণের পদ্ধতিতে সমান্তরালভাবে জুনিপার কাঠের গুঁড়ি বসানো হয়েছে, এর উপর আখশলাকা এবং পলিমাটি-খড়ের মিশ্রণ দিয়ে স্তর তৈরি করে বৃষ্টির পানি থেকে রক্ষা নিশ্চিত করা হয়েছে।
দুর্গটি শীঘ্রই সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে, যা আভা শহরের সাংস্কৃতিক সৌন্দর্যকে আরও সমৃদ্ধ করবে এবং আসির অঞ্চলের প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াবে।
নোভা