ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

এ্যাটর্নি জেনারেলের ব্যাখ্যা

মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমে যাবজ্জীবন হলে আমৃত্যু কারাবাস

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২৬ এপ্রিল ২০১৭

মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমে যাবজ্জীবন হলে আমৃত্যু কারাবাস

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিচারিক আদালত থেকে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত কোন আসামিকে হাইকোর্ট বা আপীল বিভাগ যাবজ্জীবন সাজা প্রদান করলে সেই আসামিকে আমৃত্যুকারাদ- ভোগ করতে হবে বলে জানিয়েছেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। যাদের মামলা এখনো আপীলে আসেনি তাদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম অনুসরণ করা হবে। যাদের মৃত্যুদ-ের সাজা কমে যাবজ্জীবন কারাদ- হবে, শুধু তাদেরই আমৃত্যু কারাগারে কাটাতে হবে।“ এই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে এখন যত মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি তাদের যদি যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়া হয়, হাইকোর্ট বা আপীল বিভাগ যদি করে, তবে তার ইফেক্টটা হবে আমৃত্যু কারাগারে থাকতে হবে।” এক্ষেত্রে কারাবিধিতে বা অন্য কোন রেয়াত তার ক্ষেত্রে খাটবে না। “শুধু রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা উনি এক্সারসাইজ করতে পারবেন, উনি কমাতেও পারবেন, উনি মাফও করতে পারবেন”। মঙ্গলবার দুপুরে সুপ্রীমকোর্টের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। গত সোমবার প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপীল বেঞ্চ এ সংক্রান্ত একটি পূর্ণাঙ্গ রায় দেয়। সেই রায়ে যাবজ্জীবন মানে আমৃত্যু কারাদ- হবে বলে উল্লেখ করা হয়। রায়ের পর এ বিষয়ে অস্পষ্টতা তৈরি হয়। এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন , যাদের মৃত্যুদ-ের সাজা কমে যাবজ্জীবন কারাদ- হবে, শুধু তাদেরই আমৃত্যু কারাগারে কাটাতে হবে। অর্থাৎ বিভিন্ন মামলায় যাদের যাবজ্জীবন সাজা হবে, তাদের মৃত্যু পর্যন্ত কারাগারে থাকতে হবে না। দ-বিধি অনুযায়ী ৩০ বছর জেল খেটেই বের হবেন তারা। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি দেয়া রায়টি সোমবার প্রকাশিত হয়েছে, যা আপীল বিভাগের ওয়েবসাইটে তোলা আছে। এই রায়ে বলা হয়েছে, দন্ডবিধির ৫৩ ধারা অনুযায়ী যাবজ্জীবন কারাদন্ডের অর্থ ৪৫ ধারার সঙ্গে মিলিয়ে পড়তে হবে, যার মানে দাঁড়ায় যাবজ্জীবন মানে আমৃত্যু কারাদ-। এই রায়ের ফলে যাবজ্জীবন কারাদ-ে দ-িত সবাইকে আমৃত্যু কারাবাস করতে হবে কি না, সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। দ-বিধির ৫৭ ধরায় যাবজ্জীবন কারাদ-ের অর্থ হলো সর্বোচ্চ ৩০ বছর কারাদ-। কারাগারে বছরের হিসাব নয় মাসে হয় বলে তা আরও কমে আসে। সেই সঙ্গে নানা রেয়াতও থাকে। এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, “যে সমস্ত ব্যক্তির মৃত্যুদ-ের আদেশ পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন দেওয়া হয়, তাদের আমৃত্যু কারাগারে থাকতে হবে এবং তারা এই সাজার রেয়াত পাবে না।” তিনি আরো বলেন ,“এই রায় প্রকাশের ফলে সবার মনে প্রশ্ন জেগেছে যে এটা সবক্ষেত্রে হবে কি না?“এই মামলাটি মৃত্যুদ-প্রাপ্ত লোককে যাবজ্জীবনে রূপান্তরিত করেছিল হাইকোর্ট। এই যাবজ্জীবন রূপান্তরের পরিপ্রেক্ষিতে বলা হয়েছে এই সাজাটা কতদিন হবে। সেক্ষেত্রে আপীল বিভাগ বলে দিয়েছেন, আমৃত্যু ধরতে হবে তার সাজা।” তিনি সাংবাদিকদের বলেন , “যার নাকি জীবন চলে যেত ফাঁসিতে, তাকে যদি যাবজ্জীবন করা হয়, তারপর তিনি বেরিয়ে চলে যাবেন, এটা হয় না। আইন ব্যাখ্যা করেই এটা করা (রায় দেয়া) হয়েছে।”তবে অন্য যেসব যাবজ্জীবন কারাদ- বিচারিক আদালত দিচ্ছে, তা ৩০ বছরই থাকবে বলে মনে করেন তিনি। “বিস্তারিত রায় পড়ে যদি দেখা যায় যে তার (রায়) ইন্ডিকেশনটা অন্যান্য মামলার ক্ষেত্রে বলা হয়, সেক্ষেত্রে এপি কেবল হবে। এক্ষেত্রে পুরো রায়টা না পড়ে বিস্তারিত বলা সম্ভব না।”আমৃত্যু কারাবাসের এই দ- প্রয়োগে আইন সংশোধনের কোনো প্রয়োজন দেখছেন না রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা। “আইনের সংশোধন দরকার হবে না। দ-বিধির ৫৭ ধারার সঙ্গে এটা সাংঘর্ষিক হবে না। এগুলো আপীল বিভাগ ৫৭ ও অন্যান্য ধারা ব্যাখ্যা করেই এটা সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।”
×