
ছবি: সংগৃহীত
বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থী ও মেধাবী গবেষক শাশ্বত সৌম্য আর নেই। কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়ার একটি লেক থেকে তার নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সম্প্রতি তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে কানাডায় গিয়েছিলেন ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (UBC) একটি বক্তৃতা দিতে। কীভাবে এই মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটেছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে এ মৃত্যু এক অপূরণীয় ক্ষতি— পরিবার, বন্ধু ও গবেষণা জগত সবাই শোকাহত।
মাত্র কয়েক দিন আগে ৩১ মে ২০২৫ তারিখে শাশ্বত নিজের ফেসবুক পেজে একটি আবেগঘন পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লেখেন, "The great American dream is dead!"
তিনি জানান, “গত সপ্তাহে আমি ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি টক দিতে এসেছিলাম। এরপর আমার অন্যান্য আমন্ত্রিত বক্তৃতা ছিল UC Berkeley, Princeton, Harvard-এর মতো নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমি দারুণ উচ্ছ্বসিত ছিলাম, কারণ আমি জানি আমি যা করি তাতে আমি ভালো।”
পোস্টে তিনি আরও লেখেন, “UBC-তে বক্তৃতার পর এখানকার NLP গবেষক দল আমাকে কিছুদিনের জন্য কাজ করার প্রস্তাব দেয়। এক রাত চিন্তা করে আমি রাজি হয়ে যাই। কিন্তু আমার অনেক কিছু নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। আমার আমেরিকান স্বপ্ন মৃত এবং তা মৃতই থাকবে। যে দেশটা এক সময় দক্ষ অভিবাসীদের উপর দাঁড়িয়ে ছিল, এখন তারা সেসব অভিবাসীদের নিরুৎসাহিত করছে। মানুষ, সঠিক সিদ্ধান্ত নাও। পৃথিবী বদলে যাচ্ছে, আর যুক্তরাষ্ট্র তাদের আকর্ষণ হারাচ্ছে— বিশেষ করে তাদের কাছে যারা শুধু গবেষণা আর কাজ দিয়ে দুনিয়াকে বদলাতে চায়।”
এই পোস্টের ক’দিন পরই তার মৃত্যুর খবর আসে। শাশ্বত সৌম্য বুয়েট থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছিলেন চমৎকার ফলাফল নিয়ে— ৪.০০ এর মধ্যে ৪.০০ সিজিপিএ অর্জন করেছিলেন, যা অত্যন্ত বিরল। এরপর তিনি উচ্চতর গবেষণার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা এমআইটি-তে সুযোগ পান এবং অল্প সময়েই গবেষণাক্ষেত্রে নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন।
তাঁর হঠাৎ চলে যাওয়া শুধু বুয়েট বা তার সহপাঠীদের জন্য নয়, গোটা দেশ ও আন্তর্জাতিক গবেষণা অঙ্গনের জন্যই এক বড় ক্ষতি।
শাশ্বতের এমন মৃত্যু নতুন করে প্রশ্ন তোলে— আমরা কী সত্যিই আমাদের মেধাবী তরুণদের ধরে রাখতে পারছি? তারা কি যথাযথ স্বীকৃতি ও সুযোগ পাচ্ছে, নাকি প্রতিনিয়ত হতাশার মধ্যেই হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের সম্ভাবনার আলো?
এম.কে.