ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ৩০ জুন ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

বর্ষায় ঘর-দুয়ার

ফাতেমা সুলতানা

প্রকাশিত: ১৯:৪৫, ২৯ জুন ২০২৫

বর্ষায় ঘর-দুয়ার

বর্ষা মানেই যেন আর্দ্রতা, ভেজাভাব আর অস্বস্তি। প্রকৃতির মাঝে যেমন বৃষ্টি আনন্দ বয়ে আনে, তেমনি ঘরের ভেতরে জন্ম নেয় স্যাঁতসেঁতে সমস্যা। কাঠের আসবাবপত্রে ছত্রাক, ফ্লোরে পিচ্ছিল ভাব, কাপড়ে গন্ধ- সব মিলিয়ে ঘরের পরিবেশ হয়ে পড়ে ভারি। কিন্তু একটু যত্ন, সচেতনতা আর ঘরোয়া পদ্ধতি মেনে চললেই এ সমস্যাগুলো সহজেই প্রতিরোধ করা সম্ভব।
১. ঘরে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল নিশ্চিত করুন: দিনের বেলায় অন্তত জানালা ও দরজা খুলে রাখুন। এতে ঘরের ভেতরে জমে থাকা আর্দ্রতা দূর হবে এবং ছত্রাকের আশঙ্কা কমবে। মাঝে মাঝে ফ্যান চালু রাখুন যাতে বাতাস চলাচল বজায় থাকে।
২. চারকোল বা ডিহিউমিডিফায়ার ব্যবহার: ঘরের কোণায় কাঠের কয়লা রেখে দিলে তা বাতাসের আর্দ্রতা শোষণ করে। এটি একটি সাশ্রয়ী ও কার্যকর পদ্ধতি। চাইলে বাজার থেকে ছোট ডিহিউমিডিফায়ার কিনেও ব্যবহার করতে পারেন।
৩. কাঠের ফার্নিচারের যত্ন: ফার্নিচার নিয়মিত শুকনো কাপড়ে মুছে নিন। মাঝে মাঝে হালকা ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে তারপর ভালোভাবে শুকিয়ে নিন। চাইলে ওড পালিশ ব্যবহার করতে পারেন। এটি কাঠে একটি প্রোটেক্টিভ লেয়ার তৈরি করে।
৪. নিমপাতা ও কর্পূর ব্যবহার: নিমপাতা ও কর্পূর (ক্যামফার) স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে ছত্রাক ও গন্ধ প্রতিরোধে দারুণ কার্যকর। কাপড়, বিছানা ও আলমারিতে এগুলো রেখে দিন।
৫. ফ্লোরে পানি জমতে দেবেন না: প্রতিদিন মুছুন, তবে অতিরিক্ত পানি ব্যবহার নয়। দরজার সামনে শুকনো ম্যাট রাখুন। মুছার জন্য অ্যান্টি-ফাঙ্গাল বা ব্লিচ মিশ্রিত পানি ব্যবহার করতে পারেন।
৬. ন্যাপথালিন বা লবণ ব্যবহার: ঘরের কোণায় ও আলমারিতে লবণ বা ন্যাপথালিন রাখলে আর্দ্রতা কমে। এটি কাপড় ও বইয়ের তাকের জন্যও ভালো।
৭. কার্পেট ও পর্দার যত্ন: পর্দা ও কার্পেট ধুয়ে রোদে শুকিয়ে নিন। না হলে স্যাঁতসেঁতে হয়ে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করবে এবং ছত্রাকও জমবে।
৮. ইলেকট্রনিক্সে সুরক্ষা বজায় রাখুন: ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি যেন ভিজে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। প্রয়োজনে যন্ত্রের পাশে সিলিকা জেল প্যাকেট রাখুন, যা অতিরিক্ত আর্দ্রতা শোষণ করবে।
৯. ওয়ারড্রোব ও আলমারিতে শুকনো কাগজ: শুকনো কাগজ বা ড্রায়ার শিট জামাকাপড়ের মধ্যে রাখুন। এতে কাপড় স্যাঁতসেঁতে ভাব এড়িয়ে সুগন্ধও থাকবে।
১০. পরিচ্ছন্নতা হোক প্রতিদিনের অভ্যাস: সাধারণ ঝাড়ু ও মুছা নিয়মিত করুন। ঘরের প্রতিটি কোণ যেন পরিষ্কার থাকে, তা নিশ্চিত করুন। এতে পোকামাকড়ের উৎপত্তি কমে এবং ঘর থাকে সুস্থ ও সুরক্ষিত।
বর্ষাকাল যেমন প্রকৃতিতে সজীবতা আনে, তেমনি ঘরেও বাড়ায় বাড়তি যত্নের প্রয়োজন। তাই সামান্য সচেতনতা আর প্রতিদিনের সহজ কিছু অভ্যাসে আপনি রাখতে পারেন আপনার ঘরকে আর্দ্রতা ও দুর্গন্ধমুক্ত। বৃষ্টির দিনে ঘরের উষ্ণতা আর স্নিগ্ধতা যেন থাকে ঠিকঠাক সেই দায়িত্ব কিন্তু আপনারই!

প্যানেল

×