
ছবিঃ জনকণ্ঠ
শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত বারোদুয়ারী মসজিদ, এক অনন্য ঐতিহাসিক ও স্থাপত্যিক নিদর্শন হিসেবে আজো দাঁড়িয়ে রয়েছে সময়ের সাক্ষ্য হয়ে।
জনশ্রুতি ও স্থানীয় প্রবীণদের মতে, এই মসজিদটির নির্মাণকাল আনুমানিক ১৭শ শতকের দিকে, মুঘল শাসনামলে। তবে সঠিক ইতিহাস দলিল-দস্তাবেজে না থাকলেও এর স্থাপত্য এবং গঠনশৈলী প্রাচীন মুসলিম স্থাপত্যের গৌরব বহন করে।
বারোদুয়ারী মসজিদের নামকরণেই এর বিশেষত্ব নিহিত বারো অর্থ বারোটি এবং দুয়ারী অর্থ দরজা। এই মসজিদে মোট বারোটি প্রবেশদ্বার রয়েছে, যা একে অন্যান্য সাধারণ মসজিদ থেকে আলাদা করে তোলে। মূল গঠন একটি আয়তাকার হল ঘর, যার চারপাশ ঘিরে রয়েছে সুচিন্তিতভাবে গাঁথা মোটা ইটের প্রাচীর। উপরে তিনটি গম্বুজ বিশিষ্ট ছাদ রয়েছে, যা মুঘল স্থাপত্যের বৈশিষ্ট্য বহন করে। মসজিদের সামনের অংশে রয়েছে একটি বড় খোলা চত্বর, যেখানে একসময় মুসল্লিরা নামাজ আদায় করতেন।
বারোদুয়ারী মসজিদ শুধু ধর্মীয় উপাসনার স্থান নয়, এটি ঐ অঞ্চলের ইতিহাস, ঐতিহ্যের এক জীবন্ত নিদর্শন। দীর্ঘ সময় ধরে এটি এলাকার মানুষের ধর্মীয় ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে থেকেছে। বিশেষ করে জুমার নামাজ, ঈদ জামাত এবং বিভিন্ন ধর্মীয় মাহফিলে এখানে হাজারো মুসল্লির আগমন ঘটে।
স্থানীয়দের মতে, বারোদুয়ারী মসজিদের পাশেই ছিল একটি দিঘি, যা বর্তমানে শুকিয়ে গেছে। এই দিঘি ও মসজিদ ঘিরে প্রচলিত আছে নানা ইতিহাস । কেউ কেউ বলেন, এটি গারো পাহাড় থেকে আগত কোনো প্রভাবশালী জমিদার বা সুফি দরবেশের উদ্যোগে নির্মিত হয়েছিল, যিনি ইসলাম প্রচারে ভূমিকা রেখেছিলেন।
বর্তমানে মসজিদটি অনেকটাই জীর্ণ দশায় আছে। সংরক্ষণের অভাবে এর অনেকাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও স্থানীয়রা নিজেরাই মেরামতের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তেমন কোনো নজর না থাকায় এ মসজিদ এখন ঐতিহাসিক গুরুত্ব হারানোর আশঙ্কায়।
বারোদুয়ারী মসজিদ শুধু শ্রীবরদীর নয়, শেরপুর জেলারও একটি গর্ব। ইতিহাস ও ঐতিহ্য রক্ষায় এর যথাযথ সংরক্ষণ এবং পর্যটন উন্নয়নের উদ্যোগ এখন সময়ের দাবি। এই প্রাচীন স্থাপনাটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হয়ে উঠতে পারে একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা ও দর্শনীয় স্থান।
আলীম