ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২

শিশুর বুদ্ধিমত্তা বিকাশে ৫টি কার্যকরী উপায়

প্রকাশিত: ০৭:২২, ২১ জুন ২০২৫

শিশুর বুদ্ধিমত্তা বিকাশে ৫টি কার্যকরী উপায়

সংগৃহীত প্রতীকী ছবি

প্রতিদিনের ছোট ছোট অভ্যাসে কিভাবে আপনার সন্তানের মেধা বাড়াবেন

প্রতিটি বাবা-মাই চান তাদের সন্তান যেন বুদ্ধিমান, আত্মবিশ্বাসী ও কৌতূহলী হয়ে গড়ে ওঠে। অনেকের ধারণা, বুদ্ধিমত্তা শুধু জন্মগত বিষয়। কিন্তু গবেষণা বলছে, পরিবেশ, দৈনন্দিন অভ্যাস ও মানসিক সমর্থন শিশুর মস্তিষ্ক গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শুধু ফ্লাশকার্ড বা স্ক্রিন টাইম নয়, বরং কিছু সহজ পদ্ধতি অনুসরণ করেই আপনি আপনার সন্তানের মেধা বিকাশে সাহায্য করতে পারেন।

১. বিরক্তিকে স্বাগত জানান
আপনার সন্তান যখন বলে "আমি বোরড", তখন তা শুনে অস্বস্তি বোধ করার কিছু নেই। বিরক্তি আসলে সৃজনশীলতার জন্ম দেয়। যখন শিশুর মস্তিষ্ক বাইরের উদ্দীপনা থেকে মুক্ত থাকে, তখনই সে নিজের ভাবনা তৈরি করতে শেখে। খেলনা বা গ্যাজেট দিয়ে প্রতিমুহূর্ত ভরে না দিয়ে কিছুটা নিষ্ক্রিয় সময় দিন। এতে সমস্যা সমাধানের দক্ষতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা বাড়বে।

২. খোলা প্রশ্ন করুন
"তুমি কি মনে কর?" বা "এর পর কি হতে পারে বলে মনে হয়?"- ধরনের প্রশ্ন শিশুর স্বাধীন চিন্তাশক্তি বাড়ায়। এমন প্রশ্ন মস্তিষ্কের এক্সিকিউটিভ ফাংশন সক্রিয় করে, যা ফোকাস, যুক্তি ও স্মৃতিশক্তি নিয়ন্ত্রণ করে। শিশুর উত্তর ভুল হলেও চিন্তা করার প্রক্রিয়াটিই তার মস্তিষ্কের জন্য ব্যায়ামস্বরূপ।

৩. ভুলকে স্বাভাবিক ভাবুন
"চেষ্টা করলে পরের বার পারবে" বা "এটা একসাথে সমাধান করি"- ধরনের বাক্য শিশুর মনে ভয় দূর করে। গবেষণায় দেখা গেছে, ভুলকে শেখার অংশ হিসেবে নেওয়ার অভ্যাস মস্তিষ্কের নিউরাল কানেকশন বাড়ায়। শিশু যখন বুঝবে চেষ্টা করলে দক্ষতা বাড়ে, তখন তার মেধার বিকাশ ত্বরান্বিত হবে।

৪. শারীরিক ক্রিয়াকলাপ বাড়ান
মস্তিষ্ক ও শরীরের সম্পর্ক গভীর। দৌড়ানো, লাফানো বা গাছে চড়ার মতো শারীরিক ক্রিয়াকলাপ ব্রেইন-ডেরাইভড নিউরোট্রোফিক ফ্যাক্টর (BDNF) নিঃসরণ বাড়ায়, যা মস্তিষ্কের কোষ বৃদ্ধি ও স্মৃতিশক্তি উন্নত করে। বাড়ির উঠানে খেলাধুলা, নাচ বা সাইকেল চালানোর সুযোগ দিন। শারীরিকভাবে সক্রিয় শিশুরা শুধু শক্তিশালীই হয় না, তাদের মনোযোগ ও আবেগ নিয়ন্ত্রণের দক্ষতাও বাড়ে।

৫. গল্প বলার সংস্কৃতি গড়ে তুলুন
স্ক্রিন টাইমের বদলে মুখোমুখি গল্প বলার অভ্যাস তৈরি করুন। গল্প শোনার সময় শিশুর মস্তিষ্কের একাধিক অঞ্চল সক্রিয় হয়, যা ভাষার দক্ষতা, স্মৃতিশক্তি ও সহানুভূতি বিকাশে সাহায্য করে। নিজের শৈশবের গল্প বলুন, রাতের খাবার টেবিলে নতুন গল্প তৈরি করুন বা শিশুকে গল্প সম্পূর্ণ করতে উৎসাহিত করুন। এই অভ্যাস শিশুর বর্ণনামূলক চিন্তাশক্তি ও আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা বাড়াবে।

মনোবিজ্ঞানী ড. প্রিয়া শর্মার মতে, "শিশুর মেধা বিকাশে জোরপূর্বক পড়াশোনার চেয়ে প্রাকৃতিক কৌতূহল জাগানো গুরুত্বপূর্ণ।" এই সহজ পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করে আপনি আপনার সন্তানের মস্তিষ্কের ভিত্তি মজবুত করতে পারেন। মনে রাখবেন, প্রতিটি শিশুরই নিজস্ব গতি আছে - তাকে সেই গতিতে বেড়ে উঠতে দেওয়াই সবচেয়ে বড় উপহার।

সাব্বির

×