ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি এগিয়ে নিচ্ছে রাশিয়া

প্রকাশিত: ১২:০৭, ২১ জুন ২০২৫; আপডেট: ১২:০৯, ২১ জুন ২০২৫

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি এগিয়ে নিচ্ছে রাশিয়া

ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েলের সাথে চলমান উত্তেজনার মধ্যেও ইরান তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, যেখানে রাশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়া ইরানের বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচিতে সহায়তা করে আসছে, যা উভয় দেশের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।

  • বুশেহর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র: রাশিয়া ইরানের একমাত্র কার্যকর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বুশেহর-এর নির্মাণ ও পরিচালনায় প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। ২০২৩ সালে এটি সম্পূর্ণরূপে চালু হয় এবং রাশিয়া এর জ্বালানি সরবরাহ করে আসছে।

  • সহযোগিতা বৃদ্ধি: ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে রাশিয়া ও ইরান একটি 'বিস্তৃত কৌশলগত অংশীদারিত্ব' চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যেখানে বেসামরিক পারমাণবিক সহযোগিতা বৃদ্ধির উল্লেখ রয়েছে। এই চুক্তির মাধ্যমে, ইরান রাশিয়ার প্রযুক্তির উপর আরও বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, কারণ পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার কারণে তাদের বিকল্প সীমিত।

  • নতুন চুল্লি নির্মাণ: রাশিয়া বুশেহর-এ আরও দুটি নতুন চুল্লি নির্মাণ করছে, এবং ইরানে আরও পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির বিষয়েও আলোচনা চলছে। যদিও এই প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি নিষেধাজ্ঞা এবং অন্যান্য ভূ-রাজনৈতিক কারণে ধীর গতিতে চলছে।

  • বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতি: রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক সংস্থা রোসাটমের (Rosatom) ২০০ জনেরও বেশি বিশেষজ্ঞ ইরানের বুশেহর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কাজ করছেন। ইসরায়েলের হামলার হুমকির মুখে রাশিয়া তাদের বিশেষজ্ঞদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং ইসরায়েলের সাথে তাদের নিরাপত্তার বিষয়ে একটি চুক্তিও হয়েছে বলে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছেন।

 

পশ্চিমা দেশগুলো এবং কিছু বিশ্লেষক রাশিয়ার এই সহযোগিতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের আশঙ্কা, রাশিয়ার এই সহায়তা ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে, যদিও ইরান জোর দিয়ে বলে আসছে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণ বেসামরিক উদ্দেশ্যে।

  • কিছু পশ্চিমা গণমাধ্যম অভিযোগ করেছে যে, রাশিয়া ইরানকে পারমাণবিক জ্বালানি তৈরিতে দক্ষতা এবং অন্যান্য সংবেদনশীল প্রযুক্তি সরবরাহ করতে পারে, বিশেষ করে সামরিক হার্ডওয়্যারের বিনিময়ে।

  • যদিও রাশিয়া ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে সরাসরি সহায়তা করছে না, তবে তাদের প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং কূটনৈতিক সমর্থন ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করছে বলে মনে করা হয়।

ইউক্রেন যুদ্ধের পর পশ্চিমা দেশগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রাশিয়া এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দিকে তার বাণিজ্যিক ও সামরিক সহযোগিতাকে পুনর্বিন্যাস করছে, যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ইরান। এই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ইরানের বেসামরিক পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার জন্য সহায়ক হয়েছে। রাশিয়া এবং চীন উভয়ই আন্তর্জাতিক ফোরামে ইরানের পারমাণবিক অধিকারের পক্ষে সমর্থন জানিয়ে আসছে এবং যেকোনো সামরিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সতর্ক করছে।

তবে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর আঘাত হানার ঘটনা রাশিয়ার জন্য একটি বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ এতে বুশেহর-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে কর্মরত রাশিয়ান কর্মীদের নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। রোসাটমের প্রধান আলেক্সি লিখাচেভ বুশেহর-এ হামলার ফলে চেরনোবিলের মতো বিপর্যয়ের সম্ভাবনার কথাও উল্লেখ করেছেন।
তথ্যসূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=mR3pA8YrBI8

সাব্বির

×