ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২

ডন নিউজ ইংলিশ এর প্রতিবেদন

“ভারত শুধু হাসিনার কথা শুনেছে, জনগণের নয়”

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:৫৬, ২১ জুন ২০২৫

“ভারত শুধু হাসিনার কথা শুনেছে, জনগণের নয়”

ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানের ডন নিউজ ইংলিশ-এ একটি গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎকারে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী জুলকারনাইন সায়ের শেখ হাসিনার সরকারের পতনের প্রেক্ষাপট, শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে ভূমিকা এবং ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে উদ্ভূত দ্বন্দ্বের কারণ তুলে ধরেছেন।

সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ঘটনার পর আওয়ামী লীগ প্রথমবার ক্ষমতায় আসে ১৯৯৬ সালে এবং এরপর ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে পুনরায় সরকার গঠন করে। তখন থেকেই, দলটি একটি “কাল্ট-সংস্কৃতি” তৈরি করতে থাকে—যেখানে সবকিছুই শেখ মুজিব বা শেখ হাসিনার পরিবারের চারপাশে আবর্তিত হতে থাকে।

সায়ের দাবি করেন, হাসিনা সরকার দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমনে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ জারি করেছে, যার আওতায় শেখ মুজিব বা শেখ হাসিনার পরিবার সম্পর্কে সমালোচনা করা আইনত দণ্ডনীয়। এতে একটি ‘ফ্যাসিস্ট’ ধাঁচের শাসনব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল বলে তিনি মন্তব্য করেন। 

বক্তব্যে জুলকারনাইন সায়ের ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক ও শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি ভারতের একপাক্ষিক সমর্থনের কড়া সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে তারা শুধুমাত্র শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের স্বার্থ দেখেছে, বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের কথা বিবেচনা করেনি।

তার মতে,  ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনগুলোতে বড় রাজনৈতিক দলগুলো (যেমন বিএনপি ও জামায়াত) অংশ নেয়নি, তারপরও ভারত কোনো মন্তব্য করেনি। গণতন্ত্রের মানসিকতা প্রদর্শনকারী দেশ হিসেবে পরিচিত ভারত এই বিষয়ে নিশ্চুপ থেকেছে।

তিনি আরও বলেন, ভারতের উচিত ছিল সরকারের সঙ্গে বসে আলোচনা করে বোঝানো যে বিরোধী দলগুলোকে বাদ দিয়ে একতরফা নির্বাচন হলে তা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দেয়। 

সায়ের বলেন, ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বাংলাদেশে অতিমাত্রায় হস্তক্ষেপ করেছে—মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাতেও তারা নীরব থেকেছে। এমনকি ভারতীয় সংস্থাগুলো বাংলাদেশের ভেতরে গোপন অভিযান পরিচালনা করেছে বলেও তিনি দাবি করেছেন। এতে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি, সামরিক শক্তি ও জনসংখ্যা বিবেচনায় বাংলাদেশ একটি আত্মনির্ভরশীল রাষ্ট্র এবং প্রতিবেশী ভারতের উচিত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বন্ধ করা। শুধু আওয়ামী লীগের সাথে সম্পর্ক তৈরি করে ভারতের কূটনীতিকরা বড় ভুল করেছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। 

জুলকারনাইন সতর্ক করে বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতি এখন এক সংকটময় মোড়ে দাঁড়িয়ে।  সম্প্রতি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি যুদ্ধপরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মালদ্বীপ থেকে শুরু করে অনেক দেশই ভারতের বিরুদ্ধে মনোভাব পোষণ করছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও ভারতের একচেটিয়া নীতির কারণে এই অঞ্চলে ভারত ক্রমেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। তার মতে, ভারতের কূটনৈতিক কর্মকাণ্ড এক প্রকার ব্যর্থ এবং এই অঞ্চলে ভারত দিনদিন আরও বেশি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে।

মুমু ২

×