
ছবিঃ সংগৃহীত
আমাদের মানসিক অবস্থার উপর খাদ্যাভ্যাসের প্রভাব অনেক বেশি। দৈনন্দিন জীবনের চাপ, ঘুমের অভাব বা আবহাওয়ার পরিবর্তনের মতো কারণগুলো আমাদের মেজাজের উপর প্রভাব ফেললেও, খাদ্যই অনেক সময় সেই প্রভাবকে বাড়িয়ে দিতে বা কমিয়ে দিতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু নির্দিষ্ট খাবার আমাদের শরীরে "হ্যাপি হরমোন" নামে পরিচিত সেরোটোনিন, ডোপামিন ও এন্ডরফিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে, যা আমাদের মানসিক অবস্থাকে স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক।
হ্যাপি হরমোন: কী এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ?
সেরোটোনিন
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ নিউরোট্রান্সমিটার যা মেজাজ, ঘুম এবং ক্ষুধার ভারসাম্য রক্ষা করে। এর ঘাটতি হতাশা, উদ্বেগ এবং ঘুমের অসুবিধার কারণ হতে পারে।
ডোপামিন
আমাদের কাজের প্রেরণা, সন্তুষ্টি ও আনন্দের অনুভূতির জন্য দায়ী। সফলতা ও পুরস্কারের অনুভূতির সাথে এটি সরাসরি যুক্ত।
এন্ডরফিন
এটি প্রাকৃতিক ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে এবং চাপ কমিয়ে আনন্দ অনুভব করাতে সাহায্য করে।
হ্যাপি হরমোন বাড়াতে সাহায্যকারী ৭টি খাবার
১. ওমেগা‑৩ ফ্যাটি অ্যাসিড
সালমন, ম্যাকারেল ও সার্ডিনসহ চর্বিযুক্ত মাছ এবং ফ্ল্যাক্সসিড, আখরোটে থাকা ওমেগা‑৩ ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং সেরোটোনিনের নিঃসরণ উন্নত করে। এটি বিষণ্ণতা হ্রাসে কার্যকর।
২. জটিল কার্বোহাইড্রেট
ব্রাউন রাইস, ওটস, ডাল ও স্টার্চযুক্ত সবজি ধীরে হজম হয় এবং রক্তে শর্করার স্থিরতা বজায় রাখে। এগুলো ট্রিপটোফান গ্রহণে সহায়তা করে, যা সেরোটোনিন তৈরির জন্য অপরিহার্য।
৩. প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার
ডিম, মুরগি, দুধ ও টোফুতে থাকা ট্রিপটোফান ও টায়রোসিন অ্যামিনো অ্যাসিড ডোপামিন ও সেরোটোনিন তৈরিতে সহায়ক। প্রোটিন মস্তিষ্ককে স্থির রাখে ও মনোযোগ বৃদ্ধি করে।
৪. ডার্ক চকোলেট
৭০% বা তার বেশি কোকোযুক্ত ডার্ক চকোলেটে থাকা ফেনাইলইথাইলামিন, ক্যাফেইন ও থিওব্রোমিন সেরোটোনিন ও এন্ডরফিনের নিঃসরণ বাড়াতে সাহায্য করে, যা মনের প্রশান্তি আনে।
৫. ফল ও সবজি
বেরি, কলা, পালং শাক, ব্রকোলির মতো ফল ও সবজিতে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন, যা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমিয়ে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য বজায় রাখে। বেরির ফ্ল্যাভোনয়েড মেজাজ উন্নয়নে কার্যকর।
৬. প্রোবায়োটিক খাবার
ইয়োগার্ট, কিমচি, কফির ইত্যাদি অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া সুস্থ রাখে, যা ৯০% সেরোটোনিন উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। অন্ত্র ভালো থাকলে মানসিক স্বাস্থ্যও ভালো থাকে।
৭. বাদাম ও বীজ
আলমন্ড, আখরোট, চিয়া সিড ও সানফ্লাওয়ার সিডে থাকা ট্রিপটোফান ও ম্যাগনেসিয়াম স্নায়ুর স্বস্তি দেয় এবং ঘুম ভালো রাখতে সাহায্য করে।
হ্যাপি হরমোন হ্রাসকারী কিছু অভ্যাস
নিম্নোক্ত অভ্যাসগুলো শরীরে হ্যাপি হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে:
-
দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ: কর্টিসলের মাত্রা বাড়িয়ে সেরোটোনিন কমিয়ে দেয়।
-
অপর্যাপ্ত ঘুম: হরমোনের স্বাভাবিক নিঃসরণ ব্যাহত হয়।
-
অতিরিক্ত চিনি ও অনিয়মিত ডায়েট: ডোপামিনের ভারসাম্য নষ্ট হয়।
-
সূর্যালোকের অভাব: ভিটামিন D কমে যায়, ফলে সেরোটোনিনও কমে।
-
অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম: বাস্তব জীবনের আনন্দ হ্রাস পায়, ডোপামিন কমে।
-
ব্যায়ামের অভাব: শরীরে এন্ডরফিন নিঃসরণ কমে যায়।
শুধুমাত্র শরীরের পুষ্টির জন্য নয়, খাদ্য আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্যাভ্যাসে ছোট ছোট পরিবর্তন এনে, নিয়মিত ব্যায়াম, ভালো ঘুম ও পর্যাপ্ত সূর্যালোক নিশ্চিত করে আপনি প্রাকৃতিকভাবেই আপনার মেজাজ উন্নত করতে পারেন। সুস্থ মন ও দেহের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার ও জীবনযাত্রাই সেরা উপায়।
পৃথী