ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৯ জুন ২০২৫, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

রায়পুরে ইদ এলেও এল না সহায়তা, আশ্রয়কেন্দ্রে বিষণ্নতা

 নিজস্ব সংবাদদাতা, রায়পুর, লক্ষ্মীপুর

প্রকাশিত: ২৩:৪০, ৮ জুন ২০২৫

রায়পুরে ইদ এলেও এল না সহায়তা, আশ্রয়কেন্দ্রে বিষণ্নতা

দৈনিক জনকণ্ঠ

সকালটা ছিল ঈদের দ্বিতীয় দিন। দেশের প্রতিটি গৃহে হাসি, আনন্দ আর কোরবানির ব্যস্ততা। কিন্তু লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্রে ছিল না কোনো ঈদের আমেজ।

কোরবানি তো দূরের কথা, কেউ কেউ দুবেলা খাবার জোগাড় করতেই হিমশিম খাচ্ছেন। নতুন কাপড় নেই, আতর-সাবান নেই, নেই আত্মীয়ের ডাকও। ঈদের দিনও এই মানুষগুলো কাটিয়েছেন অভাব আর অবহেলার দুঃসহ ছায়ায়।

দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের হাজিমারা আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল হৃদয় ভাঙা এক চিত্র। আশ্রয়কেন্দ্রের বাসিন্দা, শারীরিক প্রতিবন্ধী মো. শাহজালাল রাহুল চোখের পানি মুছতে মুছতে বলেন, ছয় মাস ধারে অসুস্থ। কাজ করতে পারি না। মা, স্ত্রী, তিন সন্তান নিয়ে চলতে হিমশিম খাচ্ছি।

আগে টিএনও একবার গরু পাঠিয়েছিলেন। এবার কেউ আসেইনি, কেউ খোঁজও নেয়নি। এই আশ্রয়কেন্দ্রেই থাকেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মো. বাবুল গাইন, আনোয়ার হোসেন, আয়েশ বেগমসহ অনেকেই। তারা জানান, ঈদের দিন কেউ আত্মীয়স্বজনের পাঠানো একটুখানি মাংসের আশায় বসে ছিলেন, কেউবা শুধু চাল-ডালে সেদ্ধ এক বাটি ভাত খেয়েই দিন পার করেছেন।

একই অবস্থা কারিমিয়া, মিয়ারহাটসহ রায়পুরের অন্তত আটটি আশ্রয়কেন্দ্রে। প্রায় সাড়ে চার শতাধিক পরিবার ঈদের আনন্দ থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত।

কারিমিয়া আশ্রয়কেন্দ্রের রাহাতন বেগম বলেন, এখানে ১১০টা পরিবার থাকে। টানা বৃষ্টিতে জায়গায় জায়গায় পানি জমে গেছে। ঈদের দিনটাও বিষণ্নতায় কেটেছে। আগের বাড়িতে থাকলে প্রতিবেশীরা একটু কোরবানির মাংস দিত। এখানে তো কাউকেই চিনি না।

নদীভাঙনে ঘর হারিয়ে মিয়ারহাট আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন মরণ আলী হাওলাদার। তিনি বলেন, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বড় কষ্টে আছি। ঠিকমতো ভাতই জটে না, পুষ্টিকর খাবার তো স্বপ্ন।

হাজিমারা আশ্রয়কেন্দ্র ‘সুখআলয়’-এর সভাপতি চাঁন মিয়া (দুর্জয়) বলেন, ২০২২ সালে একবার প্রশাসন থেকে কোরবানির মাংস এসেছিল। এরপর আর কেউ আসে না। জনপ্রতিনিধিরা শুধু নির্বাচনের সময়ই মনে রাখে। জলাবদ্ধতা, নোংরা পরিবেশ, বৃষ্টির দিনে রান্না-বান্নার কষ্ট সব মিলিয়ে জীবনের প্রতিটি দিনই দুঃসহ। এর মাঝে ঈদের দিনটিও যেন হয়ে ওঠে একরকম অভিশাপ।

রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরান খান বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর সমস্যা সমাধানে কাজ চলছে। কোরবানির ঈদে সরকারিভাবে এখনও কিছু সিদ্ধান্ত হয়নি।

কিন্তু স্থানীয়দের দাবি, ঈদের মতো গুরুত্বপূর্ণ দিনে কোনো সহায়তা না পাওয়াটা নিঃসন্দেহে তাদের প্রতি অবহেলার বহিঃপ্রকাশ।

হ্যাপী

×