ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৭ জুন ২০২৫, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২

সামান্য কথাবার্তাতেই মিলবে মানসিক শান্তি—জেনে নিন ৫টি সহজ কৌশল

প্রকাশিত: ১৪:০৫, ২৭ জুন ২০২৫

সামান্য কথাবার্তাতেই মিলবে মানসিক শান্তি—জেনে নিন ৫টি সহজ কৌশল

ছবি: সংগৃহীত

আপনি হয়তো ছোটখাটো আলাপ পছন্দ করেন না, কিংবা মিশ্র-সমাবেশে এই ধরনের কথাবার্তা কীভাবে কম বিব্রতকর করে তোলা যায়—তা ভেবে উদ্বিগ্ন হন। কিন্তু ছোটখাটো আলাপ, বা কথার ছলে কথোপকথন, আপনি ভাবছেন তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। চমকপ্রদ নতুন তথ্য বলছে, হালকা কথাবার্তা বা খুব একটা গভীর নয় এমন সংলাপও আপনার সুখ ও মানসিক সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

বর্তমানে একাকীত্ব এক মহামারির রূপ নিয়েছে, যেখানে ৫০% মানুষ জানিয়েছেন তারা নিঃসঙ্গ বোধ করেন। এর পাশাপাশি অনেকেই বলেন, তাদের যথেষ্ট বন্ধু নেই বা একেবারেই নেই। অথচ নিঃসঙ্গতা এবং বন্ধুহীনতা—দুটোই মানসিক, চিন্তাগত এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

এই বাস্তবতায় ছোটখাটো আলাপ হতে পারে আশপাশের মানুষের সঙ্গে সংযোগ গড়ার চমৎকার উপায়।

ছোটখাটো আলাপ কীভাবে করবেন?

১. উপযুক্ত জায়গায় প্রস্তুত থাকুন
ছোটখাটো আলাপে দক্ষ হতে চাইলে উপযুক্ত মুহূর্তের জন্য প্রস্তুত থাকাটা জরুরি।

মানুষ সবচেয়ে বেশি ছোটখাটো আলাপ করেন সামাজিক অনুষ্ঠান (৬৯%), লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় (৬৪%), কর্মক্ষেত্রে (৬৩%), কেনাকাটার সময় (৪৯%), রেস্তোরাঁয় (৩৯%), কফি শপে (৩১%), সেলুন বা স্পাতে (২৮%), লিফটে (২৫%), বিমানে ভ্রমণের সময় (২৪%), রাইডশেয়ার বা ট্যাক্সিতে (২৩%), জিমে (১৭%) এবং ট্রেন বা বাসে (১২%)—এই জায়গাগুলোতে। (তথ্যসূত্র: Preply)
তাই আপনি যেখানেই থাকুন না কেন, সুযোগটা চিনে নিন এবং তখনই অন্যের সঙ্গে আলাপ শুরু করার চেষ্টা করুন।

২. ভালো বিষয়ের পছন্দ করুন
আলাপ সহজ করতে হলে কিছু উপযুক্ত বিষয়ের কথা মনে রাখা দরকার। Preply-এর তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে প্রচলিত ছোটখাটো আলাপের বিষয়গুলো হলো আবহাওয়া (৬২%), কাজ (৩৮%), পরিবার (২৯%), সামাজিক অবস্থা (২৮%), খেলা (২৩%), বাসস্থান (২০%) এবং যানজট (১৪%)।

তবে খেয়াল রাখতে হবে—এই বিষয়গুলো জনপ্রিয় হলেও, অনেকে আবার খেলা, বর্তমান ঘটনা এবং পারিবারিক বিষয় নিয়ে কথা বলতে পছন্দ করেন না। কাজেই বিষয় নির্বাচনেও সচেতন থাকুন।

৩. অ-মৌখিক ভাষা ব্যবহার করুন
আলাপের সময় আপনার শরীরী ভাষাও গুরুত্বপূর্ণ।

কথাবার্তার সময় সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ুন, চোখে চোখ রাখুন এবং হাসুন—এসব অ-মৌখিক আচরণ আলাপচারিতাকে প্রাণবন্ত করে তোলে। Social Psychological and Personality Science–এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় এ ধরনের অঙ্গভঙ্গিকে ইতিবাচক সংযোগ গঠনের মাধ্যম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

৪. সুযোগ পেলে গভীর কথায় পৌঁছান
আলাপের শুরুটা হালকা ভাবে করলেও, সুযোগ পেলে তা গভীর আলোচনায় রূপ দেওয়ার চেষ্টা করুন।

গভীর আলাপে তথ্যবিনিময় হয় বেশি, যা মানুষকে আরও ভালোভাবে চেনার সুযোগ তৈরি করে এবং সম্পর্ক গড়ে তোলে।
যেমন, মিটিং শেষে সহকর্মীর সঙ্গে আপনি আবহাওয়া নিয়ে আলাপ শুরু করতে পারেন, তারপর তাদের প্রজেক্ট নিয়ে বা স্ট্রেসফুল কাজ নিয়ে আলোচনা করতে পারেন।

Psychological Science-এ প্রকাশিত এক গবেষণা বলছে—ছোটখাটো আলাপ না থাকার চেয়ে ভালো, তবে গভীর আলাপ আরও বেশি সুখ বাড়ায়। আপনি চাইলে এমন প্রশ্ন করতে পারেন যেগুলো ভবিষ্যৎ, সাফল্য, আফসোস, সম্পর্ক, স্মৃতি বা হাস্যকর অভিজ্ঞতা ঘিরে—যা বন্ধন মজবুত করে।

৫. বেশি করে চর্চা করুন
ছোটখাটো আলাপে দক্ষতা বাড়ানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো নিয়মিত চর্চা করা। Preply-এর তথ্য অনুযায়ী, ৩৯% মানুষ প্রতিদিন ছোটখাটো আলাপে জড়ান।

আপনি যদি আগ্রহ নিয়ে অন্যের সঙ্গে কথা বলতে এগিয়ে যান, তাহলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষ তা ইতিবাচকভাবে নেয়। Journal of Experimental Psychology-এ প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী, আমরা মনে করি অপরিচিতরা আমাদের সঙ্গে কথা বলতে চায় না—কিন্তু এটি আসলে ভুল ধারণা। বেশিরভাগ মানুষই অপরিচিতের সঙ্গে আলাপ করে ভালো অনুভব করেন।

প্রমাণ আছে, ছোটখাটো আলাপ উপকারী

গবেষণায় দেখা গেছে, ছোটখাটো আলাপ (যা সাধারণত ভদ্রতা রক্ষার কথাবার্তা হিসেবে পরিচিত এবং তেমন ব্যক্তিগত কিছু জানায় না) মানুষের মন ভালো করতে পারে।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কফি কেনার সময় বারিস্তাদের সঙ্গে হালকা কথাবার্তা যাদের হয়েছিল, তারা নিজেদের বেশি সুখী ও ভালো বোধ করেছেন। (Social Psychological and Personality Science)

আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, ট্রেনে বা সাবওয়েতে অপরিচিতদের সঙ্গে আলাপ করার পরেও মানুষ বেশি সুখী অনুভব করেন। (Journal of Experimental Psychology)

ছোটখাটো আলাপের সুযোগ খুঁজে বের করুন, সচেতনভাবে এগিয়ে যান এবং যত বেশি আপনি এই চর্চা করবেন, এটি তত সহজ ও আনন্দদায়ক হয়ে উঠবে। এমন ছোট ছোট কথোপকথনই আপনার সুখ ও সুস্থতায় বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

আবির

×