ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২

জলপাই তেলের ওলেইক অ্যাসিড বাড়াতে পারে শরীরের মেদ

প্রকাশিত: ২১:৫২, ১১ জুন ২০২৫

জলপাই তেলের ওলেইক অ্যাসিড বাড়াতে পারে শরীরের মেদ

বিশ্বজুড়ে হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী এবং স্বাস্থ্যকর ‘ভালো চর্বি’ হিসেবে পরিচিত জলপাই তেল বা অলিভ অয়েলে থাকা একটি সাধারণ ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরকে নতুন চর্বি কোষ তৈরিতে উৎসাহিত করতে পারে বলে দাবি করেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণা। এর ফলে দীর্ঘমেয়াদে শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমতে পারে এবং অনিচ্ছাকৃতভাবে ওজন বেড়ে যেতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা বিশ্ববিদ্যালয়, ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় এবং নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এক যৌথ গবেষণায় দেখতে পান, অলিভ অয়েলসহ বিভিন্ন উদ্ভিজ্জ তেলে থাকা ওলেইক অ্যাসিড নামের একটি ওমেগা-৯ মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড অতিরিক্ত মাত্রায় শরীরে প্রবেশ করলে, তা চর্বি উৎপাদনের সংকেত দেওয়া প্রোটিন AKT2-এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। একই সঙ্গে, চর্বি নিয়ন্ত্রণকারী গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন LXR-এর কার্যকারিতা কমে যায়। এর ফলে শরীর নিজ থেকেই বেশি চর্বি কোষ তৈরি করতে থাকে।

এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় অ্যাডিপোজেনেসিস—একটি স্বাভাবিক ও দরকারি শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া, যাতে পুরনো চর্বি কোষ ভরে গেলে নতুন চর্বি কোষ তৈরি হয়। কিন্তু গবেষকদের মতে, অতিরিক্ত ওলেইক অ্যাসিড গ্রহণের ফলে এই প্রক্রিয়াটি অপ্রয়োজনীয়ভাবেও সক্রিয় হয়ে পড়ে। 

গবেষণার সহলেখক ও ওকলাহোমা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মাইকেল রুডলফ বলেন, “আপনি ওলেইক অ্যাসিড দিলে তা ‘চর্বি সেনা’ বাড়িয়ে দেয়—এই সেনার কাজ অতিরিক্ত পুষ্টি জমিয়ে রাখা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এসব অতিরিক্ত কোষ যদি প্রয়োজনের চেয়ে বেশি হয়ে যায়, তাহলে ওবেসিটি, এমনকি ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে।”

এ গবেষণায় পরীক্ষামূলকভাবে ইঁদুর ও মানুষের চর্বি কোষের ওপর পরীক্ষা চালানো হয়। দেখা গেছে, অন্যান্য ফ্যাটি অ্যাসিড যেমন লার্ড বা নারকেল তেল এমন প্রতিক্রিয়া দেখায়নি, কিন্তু ওলেইক অ্যাসিড সমৃদ্ধ তেল এ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, একবার চর্বি কোষ তৈরি হয়ে গেলে তা সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয় না—ওজন কমালে তা শুধু সঙ্কুচিত হয়, কিন্তু থেকে যায় বছরের পর বছর। ফলে বেশি চর্বি কোষ মানেই ভবিষ্যতে ওজন বাড়ার আশঙ্কা বেশি।

তবে গবেষকরা বলছেন, এটি একটি পরীক্ষামূলক গবেষণা এবং সব ফলাফলই এখনো মানুষের শরীরের দীর্ঘমেয়াদি কার্যকারণ নির্ণয় করে না। রক্তে গ্লুকোজ, ইনসুলিন বা প্রদাহজনিত প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি এই গবেষণায় বিশ্লেষিত হয়নি।

তবুও গবেষক রুডলফের পরামর্শ, চর্বি জাতীয় খাবার খেতে হবে পরিমিতভাবে এবং বিভিন্ন উৎস থেকে। জলপাই তেলের মতো তেল মাঝারি পরিমাণে উপকারী হলেও দীর্ঘদিন বেশি পরিমাণ গ্রহণ করলে তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, বিশেষ করে হৃদরোগের ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে।

সানজানা

×