
ছবি:সংগৃহীত
আমাদের শরীরে এমন অনেক কিছু ঘটে যা আমরা খেয়ালই করি না—যেমন ইউরিক অ্যাসিড। এটি আসলে শরীরের ভেতরের একধরনের বর্জ্য পদার্থ, যা তৈরি হয় যখন শরীর ‘পুরিন’ নামের এক যৌগ ভাঙে। এই পুরিন থাকে মুলত: মাংস, মাছ, ও অ্যালকোহলে। সাধারণত কিডনি এই ইউরিক অ্যাসিড প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে দেয়।
কিন্তু যখন শরীর এটা বেশি পরিমাণে তৈরি করে বা কিডনি ঠিকভাবে কাজ না করে, তখন ইউরিক অ্যাসিড জমে যেতে থাকে। এর ফলে পা-হাতের গাঁটে ব্যথা, ফোলাভাব, গেঁটে বাত (gout), কিডনিতে পাথর—এমনকি ডায়াবেটিস বা স্থূলতার মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
ভালো খবর হলো, খাদ্যাভ্যাস একটু বদলালেই ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন কিছু নিরামিষ খাবার রয়েছে যেগুলো প্রতিদিন খেলে শরীর স্বাভাবিকভাবে ইউরিক অ্যাসিড কমাতে পারে।
চলুন জেনে নিই এমন ৫টি সাধারণ কিন্তু জাদুকরী খাবারের কথা—
১. চেরি – মিষ্টি ফল, কিন্তু গেঁটে বাতের যন্ত্রণা কমাতে পারে
চেরি শুধু সুস্বাদুই নয়, এটি ইউরিক অ্যাসিড কমানোর এক দুর্দান্ত প্রাকৃতিক উপাদান। এতে থাকা অ্যান্থোসায়ানিন নামক এক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমায় এবং গাঁটে প্রদাহ কমায়। অনেক গবেষণাতেই দেখা গেছে, নিয়মিত চেরি খেলে গেঁটে বাতের সম্ভাবনা কমে যায়। আর হ্যাঁ, এতে থাকা ভিটামিন C কিডনির কাজকেও আরও সক্রিয় করে তোলে।
২. লেবু – সকালে এক গ্লাস লেবু জল, দিনটা হোক হালকা
লেবু বা অন্যান্য সাইট্রাস ফল (যেমন কমলা বা মাল্টা) ভিটামিন C-এর ভালো উৎস। এই ভিটামিন কিডনিকে ইউরিক অ্যাসিড বের করতে সাহায্য করে। সকালে খালি পেটে এক গ্লাস কুসুম গরম জলে লেবু মিশিয়ে খাওয়া দারুণ উপকারী হতে পারে। এটি শরীরকে ক্ষারীয় করে তোলে এবং শরীরে জমে থাকা অ্যাসিড ভাঙতে সাহায্য করে।
৩. শসা – সহজ, ঠান্ডা, আর শরীর রাখে পরিষ্কার
শসার মতো হালকা, জলসমৃদ্ধ সবজি শরীরকে ভেতর থেকে ঠান্ডা রাখে। এতে খুব কম পরিমাণে পুরিন থাকে এবং অনেক বেশি পানি ও ফাইবার—যা ইউরিক অ্যাসিড ধুয়ে শরীর থেকে বের করে দেয়। প্রতিদিন সালাদে শসা, টমেটো বা ঝিঙে রাখলে কিডনি ভালো থাকে এবং গেঁটে বাতের আশঙ্কা কমে।
৪. গ্রিন টি – প্রতিদিন এক কাপ স্বাস্থ্য সচেতনতার চাবিকাঠি
যারা শরীর নিয়ে সচেতন, তাদের মধ্যে গ্রিন টি খুবই জনপ্রিয়। এতে থাকে EGCG নামক এক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের তৈরি হওয়া কমায়। গ্রিন টি কিডনির কার্যকারিতা বাড়ায়, দেহ ডিটক্স করে এবং জয়েন্টে ব্যথা কমায়। দিনে এক-দুই কাপ গ্রিন টি খাওয়ার অভ্যাস আপনাকে অনেক দূর এগিয়ে রাখতে পারে।
৫. ফ্ল্যাক্সসিড (তিসি বীজ) – ছোট বীজে লুকানো বড় উপকার
তিসি বীজ দেখতে ছোট হলেও এর উপকারিতা অনেক। এতে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, লিগন্যান ও ফাইবার—যা শরীরের প্রদাহ কমায় ও কিডনিকে সুস্থ রাখে। ফ্ল্যাক্সসিড শরীর থেকে ইউরিক অ্যাসিড মূত্রের মাধ্যমে বের করতে সাহায্য করে। আপনি চাইলে এগুলো গুঁড়া করে রুটি, দই বা স্মুদি-তে মিশিয়ে খেতে পারেন।
এই ৫টি খাবার সহজেই আমাদের প্রতিদিনের রুটিনে রাখা যায়। এগুলো শুধু ইউরিক অ্যাসিড কমায় না, বরং সামগ্রিক স্বাস্থ্যও ভালো রাখে। তবে যদি ইউরিক অ্যাসিড মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গিয়ে থাকে বা গেঁটে বাতের সমস্যা প্রকট হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
মারিয়া