
ছবি :সংগৃহীত
শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য ব্যায়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাঁটাহাঁটি হচ্ছে সবচেয়ে সহজ এবং কার্যকর এক ধরনের ব্যায়াম, যা সারা বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ অনুসরণ করে থাকেন। এর জন্য কোনও যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয় না, যেকোনো জায়গায় করা যায়, এবং এর স্বাস্থ্য উপকারিতাও অনেক।
তবে সবসময়ই প্রশ্ন থাকে—কতক্ষণ হাঁটলে ভালো, কত পদক্ষেপ হাঁটতে হবে, কোন গতিতে হাঁটতে হবে?
অনেক দিন ধরেই ‘প্রতিদিন ১০,০০০ পদক্ষেপ’ লক্ষ্যটি খুবই জনপ্রিয়। কিন্তু সম্প্রতি একটি জাপানি হাঁটার কৌশল (Japanese Interval Walking) ফিটনেস জগতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে। তাহলে কোনটা ভালো—১০,০০০ পদক্ষেপ, নাকি ৩০ মিনিটের জাপানি হাঁটা?
১০,০০০ পদক্ষেপ হাঁটার উপকারিতা কী?
প্রতিদিন ১০,০০০ পদক্ষেপ হাঁটা, যা প্রায় ৫ মাইলের সমান, দীর্ঘদিন ধরেই ফিটনেস মাপকাঠি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই অভ্যাস ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, হৃদ্যন্ত্রকে সুস্থ রাখে এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, এই লক্ষ্য অর্জন করলে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং বিষণ্নতার ঝুঁকি কমে যায়। এটি একটি সহজ সূচক, যা ফিটনেস ডিভাইস দিয়ে সহজেই ট্র্যাক করা যায়, তাই অনেকের পক্ষেই এটি অনুসরণ করা সম্ভব।
২০২২ সালের একটি গবেষণায় ৭৮,৪৩০ জন ব্রিটিশ প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে দেখা গেছে, দৈনিক প্রায় ৯,৮০০ পদক্ষেপ হাঁটলে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। গবেষণায় আরও উল্লেখ করা হয়, ন্যূনতম ৩,৮০০ পদক্ষেপও ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি ২৫% পর্যন্ত কমাতে পারে। তবে, এই লক্ষ্যটি সবার পক্ষে উপযোগী নাও হতে পারে—বিশেষ করে যাদের অস্থিসন্ধির সমস্যা আছে বা যাদের সময় সীমিত।
জাপানি ইন্টারভ্যাল ওয়াকিং এর উপকারিতা কী?
জাপানে উদ্ভাবিত একটি কাঠামোবদ্ধ হাঁটার পদ্ধতি হলো Interval Walking Training (IWT) বা ইন্টারভ্যাল ওয়াকিং। এই কৌশলে মাঝারি ও দ্রুতগতির হাঁটার মধ্যে পালাক্রমে পরিবর্তন করা হয়। এর নিয়ম হলো:
– ৩ মিনিট ধীরে হাঁটা
– ৩ মিনিট জোরে হাঁটা
– এভাবে ৩০ মিনিট ধরে চালিয়ে যাওয়া।
কোনটি ভালো?
হার্ভার্ড এবং স্ট্যানফোর্ডে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, ক্যালিফোর্নিয়া-ভিত্তিক গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট ডা. সৌরভ সেঠি এই জাপানি পদ্ধতির পক্ষেই মত দিয়েছেন।
তিনি বলেন,“জাপানিরা একটি এমন হাঁটার কৌশল আবিষ্কার করেছে যা ঐতিহ্যবাহী ১০,০০০ পদক্ষেপের চেয়েও বেশি উপকার দেয়। এর নাম ইন্টারভ্যাল ওয়াকিং। প্রতিদিন ৩০ মিনিট এইভাবে হাঁটলে এর ফল অভাবনীয়।”
ডা. সেঠির মতে, ১০,০০০ পদক্ষেপের তুলনায় এই পদ্ধতি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়, মানসিক অবস্থা উন্নত করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ঘুমের মান ভালো করে।
তিনি বলেন, “গবেষণায় দেখা গেছে, এই পদ্ধতি কার্ডিওভাসকুলার (হৃদ্রোগ সংক্রান্ত) স্বাস্থ্য এবং ফিটনেসে ব্যাপক উন্নতি আনে।”
কীভাবে শুরু করবেন?
– প্রথমে ৩-৫ মিনিট স্বাভাবিক গতিতে হাঁটুন
– এরপর ৩ মিনিট ধীরে ও ৩ মিনিট জোরে হাঁটার পালা শুরু করুন
– শেষে আবার ৩-৫ মিনিট ধীরে হাঁটুন ঠান্ডা হওয়ার জন্য
সা/ই