ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২

ঢাকার রাস্তায় রুশ ‘ভাইরাল গার্ল’ মনিকা কবির

প্রকাশিত: ১৯:৩২, ২৭ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ১৯:৩৩, ২৭ মার্চ ২০২৫

ঢাকার রাস্তায় রুশ ‘ভাইরাল গার্ল’ মনিকা কবির

ছবি: সংগৃহীত

বেশ কিছুদিন ধরে ঢাকার রাস্তায় অদ্ভুত সব কর্মকাণ্ড করে ভাইরাল রুশ তরুণী মনিকা কবির। কখনো হাঁটছেন, কখনো দৌড়াচ্ছেন, কখনো বা নাচছেন। কখনো বা হাতভর্তি ব্যাগ নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন গুলশান-বনানীর রাস্তায়।

আবার কখনো তাঁকে দেখা যাচ্ছে মেট্রোরেল কিংবা ঢাকার রিকশায়। মনিকার এসব কর্মকাণ্ডে কেউ মুগ্ধ, কেউ বিস্মিত। তবে সবার মনে একই প্রশ্ন—কে এই মনিকা?

তার এসব কর্মকান্ডের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি ভাইরাল। ফলে তিনি এখন পরিচিত মুখ।

এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেকে ‘আনজারা গার্ল’ পরিচয় দিয়ে ভিডিও প্রকাশ করেন। ‘আনজারা’ নামের ফ্যাশন ব্র্যান্ডটির প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক নওরীন ইরার জানান, মনিকা সম্প্রতি বাংলাদেশি ফ্যাশন ব্র্যান্ড আনজারার সঙ্গে কাজ শুরু করেছেন।

মনিকা জানান, তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা রাশিয়ায়। বেড়ে উঠেছেন মস্কো শহরে। বেড়ে ওঠা বললে ভুল হবে, জন্মের পর থেকে থেকেছেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। নিজের সম্পর্কে মনিকা জানালেন- ‘আমার মায়ের নাম ম্যারিয়া গোজেন। আমার রুশ নাম মারিয়া ভ্যালিরিয়েভনা। আমার রুশ ডাকনাম মনিশকা। বাবার ব্যবসাসূত্রে কখনো এশিয়া, কখনো ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়িয়েছি’।

ছবি: সংগৃহীত

তিনি বলেন, ছেলেবেলায় বাড়িতেই পড়াশোনা করেছি। বয়স পাঁচ হলে একেবারে সরাসরি ক্লাস ফাইভে ভর্তি হন মনিকা। ১২ বছরে শেষ করেন কলেজের পড়াশোনা। এরপর ভর্তি হন ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনে। অনুবাদে আগ্রহ আছে বলে পড়তে শুরু করেন ইন্টারন্যাশনাল ট্রান্সলেশন বিষয়ে। মাতৃভাষা রুশসহ ছয়টি ভাষায় (বাংলা, হিন্দি, পোলিশ, আজারবাইজানি, তুর্কি ও ইংরেজি) অনর্গল কথা বলতে পারেন। পড়তে ও লিখতেও পারেন কিছুটা। মনিকা বললেন, ‘বাংলা শিখেছি আমার ন্যানির (আয়া) কাছে। আগামী কয়েক মাসে হয়তো বাংলা পুরোপুরি শিখে ফেলব।’

মনিকা গণমাধ্যমকে জানান, ‘নামের শেষাংশের “কবির” নিয়েছি আমার দাদার কাছ থেকে। দাদা ও দাদি ভারতের নয়াদিল্লির মানুষ। আমার বাবা সেখানেই বড় হয়েছেন। বাবা ব্যবসার খাতিরে রাশিয়ায় যান, সেখানেই আমার মায়ের সঙ্গে পরিচয়। বাবা বাংলাদেশে চামড়ার ব্যবসার সঙ্গে অনেক দিন যুক্ত ছিলেন। তাঁর হাত ধরেই বাংলাদেশে আসি ২০১২ সালে। তখন থেকেই এখানে আছি।

মনিকা আরও বললেন, ‘নিজেকে নৃত্যশিল্পী হিসেবে পরিচয় দিতে ভালো লাগে। তুরস্কে থাকার সময় লাতিন নাচ শিখেছিলাম। একদিন আমার এক বন্ধুকে নিয়ে কফি খেতে গিয়েছিলাম। সেখানে এক তুর্কি আমাকে নাচ শেখার কথা বলেন। তারপর থেকেই মূলত নাচ শেখার শুরু। তুরস্কে একটা আন্তর্জাতিক নাচ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ১৭তম হয়েছিলাম।’

বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মনিকার নাচের ভিডিও, মানুষের সঙ্গে গল্প করা, মেট্রোরেলে ঘুরে বেড়ানোর ভিডিও আলোচিত। এ প্রসঙ্গে মনিকা বলেন, ‘মানুষ ভালো লাগে আমার। অন্যদের মনোযোগ পেতে ভালো লাগে। আমার চলাফেরা ও কাজের মাধ্যমে নারীর স্বাধীনতা ও এগিয়ে চলার গল্প বলতে চাই।

মনিকা বলেন, ‘ফেসবুকে অনেকেই অনুপ্রেরণা দেন, আবার অনেকেই নেতিবাচক কথা বলেন। আমি নেতিবাচক মন্তব্যে গুরুত্ব দিই না। আমি আমার মতো কাজ করে যাচ্ছি।’

বাংলাদেশের মানুষকে খুব আপন করে নিয়েছি। বাংলাদেশি শিশু-কিশোরদের সঙ্গ বেশ উপভোগ করছি এবং তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ বিশ্বের কিউটেস্ট কান্ট্রি।’

তারপর বাংলা ভাষায় বললেন বাংলাদেশ সম্পর্কে ভালো লাগার কথা, ‘আমার ইলিশ মাছ খুব ভালো লাগে। প্রায় সব বাংলাদেশি খাবারই আমার প্রিয়। একবার কক্সবাজার গিয়ে ব্যাগ হারিয়ে ফেলেছিলাম। তখন ট্যুরিস্ট পুলিশ অনেক কষ্ট করে আমার ব্যাগ খুঁজে বের করে দিয়েছিলেন। আমি থাইল্যান্ডে গিয়েছিলাম; কক্সবাজারের অভিজ্ঞতা আমার থাইল্যান্ডের চেয়েও ভালো। বাংলাদেশের মানুষ খুব আন্তরিক। যখন রাস্তায় হাঁটি, সবাই খুব কৌতূহল নিয়ে আমার দিকে তাকায়।’

 

মেহেদী হাসান

×