
ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী, যুদ্ধ ঘোষণা করার ক্ষমতা কংগ্রেসের হাতে। কিন্তু বাস্তবে প্রেসিডেন্টদের একক সিদ্ধান্তে বারবার যুদ্ধ হয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আবার সেই বিতর্ক ফিরে এসেছে—যুক্তরাষ্ট্র কি ইসরাইল-ইরান যুদ্ধে জড়াবে? প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কি একাই যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারবেন?
হোয়াইট হাউসের লনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, "আমি হয়ত করব, হয়ত করব না।" এই বক্তব্যে অনেকেই আশঙ্কা করছেন, যুক্তরাষ্ট্র হয়ত সরাসরি ইরান যুদ্ধের দিকে এগোচ্ছে।
ওয়ার পাওয়ারস অ্যাক্ট কী?
১৯৭৩ সালে পাশ হওয়া ‘War Powers Resolution’ ছিল প্রেসিডেন্টের যুদ্ধ-ক্ষমতা সীমিত করার জন্য একটি আইন। এতে বলা হয়েছে:
- কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া যুদ্ধ শুরু করা যাবে না
- সামরিক অভিযানের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কংগ্রেসকে জানাতে হবে
- কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়া ৬০–৯০ দিনের বেশি সেনা মোতায়েন করা যাবে না
তবে এই আইন কার্যকর করতে গেলে কংগ্রেসে প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট থাকা দরকার—যা ট্রাম্পের সময় সম্ভব হয়নি, এখনো কঠিন।
ট্রাম্পের যুদ্ধ ক্ষমতা কতটা?
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের Article II অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট হলেন সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক (Commander-in-Chief)। প্রেসিডেন্টরা এই ক্ষমতা ব্যবহার করে "সুরক্ষা ও আত্মরক্ষার" কথা বলে অনেকবার কংগ্রেস এড়িয়ে সামরিক হামলা চালিয়েছেন।
২০০১ ও ২০০২ সালের AUMF (Authorization for Use of Military Force) আইনের মাধ্যমে প্রেসিডেন্টদের এমন হামলার বৈধতা দেওয়া হয়। এ আইনের অধীনেই ইরাকে হামলা ও কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার মতো ঘটনা ঘটেছিল।
তাহলে কংগ্রেস কী করছে?
নতুন করে যুদ্ধ ঠেকাতে কিছু সিনেটর ও কংগ্রেস সদস্য উদ্যোগ নিচ্ছেন। সিনেটর টিম কেইন একটি প্রস্তাব এনেছেন—ইরানের বিরুদ্ধে হামলা চালাতে হলে কংগ্রেসের অনুমতি নিতে হবে। রো খান্না ও থমাস ম্যাসি নামের দুই কংগ্রেস সদস্যও একই ধরনের বিল উত্থাপন করেছেন। সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স একটি বিল এনেছেন যাতে বলা হয়েছে, ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থায় ব্যয় করা যাবে না
কিন্তু কংগ্রেসের দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন না থাকলে ট্রাম্প সহজেই এই সব বিল ভেটো দিয়ে আটকে দিতে পারেন, যেমন তিনি করেছেন ২০২০ সালেও।
ওয়ার পাওয়ারস অ্যাক্ট কি কার্যকর?
অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, এই আইন অনেকটাই প্রতীকী হয়ে গেছে। প্রেসিডেন্টরা প্রায়ই এর বিধি এড়িয়ে যান এবং কংগ্রেসও তাদের রুখে দাঁড়াতে পারে না।
১৯৮০’র দশকে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও তখনকার এক সিনেট কমিটিতে বলেছিলেন, এই আইন কাঙ্ক্ষিত কাজ করতে ব্যর্থ হচ্ছে।
তাহলে কি ট্রাম্প একাই যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারেন?
আইনগতভাবে ট্রাম্পকে কংগ্রেসের অনুমতি নিতে হবে, কিন্তু বাস্তবে তিনি অনেক পথেই তা এড়িয়ে যুদ্ধ শুরু করতে পারেন। আর বর্তমান রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠ কংগ্রেসে ট্রাম্পের যুদ্ধবিরোধী কোনো বিল আটকে দেওয়া কঠিন হবে না। ফলে ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালাতে ট্রাম্পকে আইনগতভাবে কেউ সহজে থামাতে পারবে না বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র আবার এক নতুন যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। ট্রাম্প বলছেন “আমি করতেও পারি, না-ও করতে পারি।” কংগ্রেস চেষ্টা করছে তার ক্ষমতা সীমিত করতে, কিন্তু ইতিহাস বলছে প্রেসিডেন্টদের বিরুদ্ধে ওয়ার পাওয়ারস অ্যাক্ট কার্যকর করা সহজ নয়। এখন দেখার বিষয়, ট্রাম্প কি একাই ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নির্দেশ দেবেন, নাকি কংগ্রেস শেষ মুহূর্তে সত্যিই বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
সূত্র: আল জাজিরা (Al Jazeera)
আঁখি