ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১২ জুন ২০২৫, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

শরৎ এলো

​​​​​​​রেজা ফারুক

প্রকাশিত: ২০:০১, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

শরৎ এলো

.

স্নিগ্ধ মনোরম রোদেলা দুপুর গড়িয়ে যখন আঙিনায় বিকেলের মৃদু হাওয়ার গুঞ্জরণ শুরু হবে ঠিক তখনই, এক পশলা ধুম বৃষ্টির ধূসর রঙের আবেশ ছড়ানোর পর প্রকৃতি দারুণ সবুজ আর আকাশ হয়ে ওঠে গভীর নীলাভ। দূরে, নদীর কিনারে সাদা পরীর মতো দুলে ওঠে থোকা থোকা আলুলায়িত কাশফুলের চূড়া এবং নদীতে রঙিন পালতোলা নৌকা ছুটে চলেছে নিজস্ব গন্তব্যের দিকে- অতিপ্রাকৃতিক এই নয়নাভিরাম দৃশ্যই বুঝিয়ে দেয় ঋতুটা এখন শরৎ।

শরতের এই যে নরম আর নিবিড় আমেজ তা দৈনন্দিন জীবনেও কোমল দোলা দিয়ে যায়। চন্দ্রডোবা ভোরে হালকা শীতার্থ অনুভূতি, ঘাসে গাছের পাতার বিন্দু বিন্দু শিশির কুচি আর সন্ধ্যায় হিমেল শরতেরই এক অভূতপূর্ব বৈশিষ্ট্য। খাল-বিল নদীর কূলপ্লাবিত রাশি রাশি জলধারা বিজড়িত বর্ষার বিদায় পর্ব শুরু হতে না হতেই শরৎ এসে কড়া নেড়ে তার উপস্থিতিকে জানান দেয় স্বমহিমায়। শরতের যেমন রয়েছে একটা নিজস্ব ইমেজ তেমনি এই শরতেই গ্রামে-গঞ্জে শরৎ মেলাও বসে। যা আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির আবহমান ঐতিহ্যের অংশ। শরতের প্রধান প্রতীক কাশফুল হলেও শিউলি, শেফালি, হাসনাহেনা, কামিনীসহ প্রভৃতি ফুলের গন্ধে পরিবেশে সৃষ্টি হয় এক অন্যরকম সুশোভিত গন্ধমন্দির আবহ। যা শুধু জীবন ধারা নয় মনকেও প্রফুল্ল করে তোলে। দিগন্তে সাদা মেঘ সঞ্চারিত চিবুকে নীলাচ্ছিন্ন মিষ্টি রোদের কিরণ ভিন্ন এক রহস্যময় ভালোলাগাকে দৃষ্টির সীমায় এনে যেন দাঁড় করিয়ে দেয়। নদী, নৌকা, কাশফুল, রঙিন প্রজাপতির চঞ্চল ওড়াওড়ি শরৎকে করে তোলে আকণ্ঠ মধুময়।

ব্যস্ত কর্মমুখর নগরজীবনে ঋতুর উপস্থিতিটা খুব কি অনুভূত হয় কিংবা অনুভব করার ফুরসত মেলে? তারপরও কিন্তু প্রাকৃতিক গতি থেমে যায় না। সে তার নিয়ম মতোই এসে চলে যায় নিজের পরিমন্ডলের বৃত্তে। পহেলা বৈশাখ বর্ষা কিংবা বসন্ত নগর সংস্কৃতিতে যে আলোড়ন তুলে যায় শরতের বেলায় ততটা নয়। ভীরু নরম পদব্রজে আসে শরৎ। আবার সেভাবেই হঠাৎ কোনোরকম পূর্বাভাস না দিয়েই চলে যায়। কখনো কখনো যদি সন্ধ্যায় বাড়ির ছাদের রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আকাশে চোখ তুলে তাকালেই জ্যোৎস্নাদিত চাঁদ আর জ্যোৎস্না কিরণ ঝরে পড়ার অপূর্ব দৃশ্য মনটা কিছুক্ষণের জন্য হয়ত ফুরফুরে হয়ে ওঠে। অবশ্য এই অনুরণন মন থেকে মুছে যেতেও সময় লাগে না। নগরের জীবনস্পন্দনে শরতের প্রভাব তেমন না পড়লেও বিশাল বাংলার গ্রামে গ্রামে শরতের নিবিড় ছায়া যেন অপরিসীম ব্যঞ্জনার সৃষ্টি করে। নগরে বসবাসরত নতুন প্রজন্ম অদূর ভবিষ্যতে ষড়ঋতুর এই বাংলার মায়াবী রূপের ঘটনাবলী কি শুধু পাঠের মাধ্যমেই জানবে। নাকি নতুন এই প্রজন্ম খুঁজে নেবে তার আপন ভুবন। প্রকৃতি আর মৃত্তিকার ঘ্রাণ শুঁকে নিজের শিকড়ের সন্ধানে উৎসাহিত হবে। নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে বাংলার নৈসর্গিক ছবিটা। ঋতুভিত্তিক ফ্যাশনের ক্ষেত্রটা দিন দিন বিস্তৃত হওয়ার পাশাপাশি স্মার্ট হয়ে ওঠার বিষয়টাও দৈনন্দিন জীবনযাপনের অংশ হয়ে উঠেছে।

আর সেটাকে কেন্দ্র করেই প্রতিষ্ঠিত ফ্যাশন হাউসগুলোও সেজে উঠেছে নতুন ডিজাইনের নতুন পোশাকের রং ঝলমল আবেশে। বর্ষার ঘন বর্ষণের নেকাবে শরত তার শুভ্রনীল মখমলের পর্দার আড়াল থেকে আটপৌরে ভঙ্গিতে এসে দাঁড়িয়েছে আর তাই বিভিন্ন আউটলেটগুলো নানা ডিজাইন মোটিভের পোশাকে হ্যান্ড পেইন্টের শাড়িতে শরতের চিরায়ত রূপোজ্জ্বলতা ফুটিয়ে তুলে তা বিপণনের সুব্যবস্থা নিয়েছে। অনেকেরই হয়ত গ্রামে গিয়ে শরতের সান্নিধ্য লাভ হয়ে উঠে না। শরতের আবহ উৎকীর্ণ বা চিত্রিত ড্রেসের মাঝেই খুঁজে নেয় এক-আধটু শরতাঙ্কিত আমেজ। হৃদয় দিয়ে অনুভব করবে নদীমাতৃক বৈচিত্র্যমন্ডি এই বাংলাকে। বাংলাদেশের অনুপম রূপ-লাবণ্য ঘেরা নৈসর্গিক সৌন্দর্যের গভীর টান।

পোশাক ছবি : রঙ বাংলাদেশ

×