ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৪ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

তালাকের পর স্ত্রী যৌতুক মামলা দিলে করণীয়

প্রকাশিত: ২৩:৪২, ১১ জুন ২০২৫

তালাকের পর স্ত্রী যৌতুক মামলা দিলে করণীয়

ছবি: সংগৃহীত।

বাংলাদেশের গ্রামীণ জনপদে পারিবারিক কলহ, স্বামী-স্ত্রীর মাঝে মনোমালিন্য এবং একপর্যায়ে বিচ্ছেদ (তালাক) নতুন কোনো ঘটনা নয়। তবে তালাকের পর অনেক সময় দেখা যায় স্ত্রী স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুক নিরোধ আইনে মামলা করে বসেন। এই ধরনের মামলার ক্ষেত্রে স্বামীরা কী করবেন, কেমন পরিণতি হতে পারে, কী ভুলগুলো না করাই ভালো – এসব নিয়ে সাধারণ মানুষ বিশেষত প্রান্তিক জনগোষ্ঠী পর্যাপ্ত ধারণা না থাকার কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েন।

তালাক হওয়ার পর স্ত্রী যদি যৌতুক দাবির অভিযোগে মামলা করেন, তাহলে স্বামীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো পালিয়ে না থাকা এবং আইনিভাবে মোকাবেলা করা। কারণ, পালিয়ে থাকলে একতরফা রায় হতে পারে এবং ওয়ারেন্ট ইস্যু হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এতে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারে।

এমন পরিস্থিতিতে করণীয়: 
তালাকের নোটিশের একটি কপি সংগ্রহ করুন – স্বামী যদি তালাকের নোটিশ পাঠিয়ে থাকেন, তবে সেই কপিটি তার কাছে থাকা বাধ্যতামূলক।
ডাকযোগের রিসিভ কপি সংরক্ষণ করুন – পোস্ট অফিস থেকে পাঠানোর রিসিভ কপিটিও প্রমাণ হিসেবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 
আইনজীবীর পরামর্শ নিন – এসব কাগজপত্র একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর মাধ্যমে বিজ্ঞ আদালতে উপস্থাপন করতে হবে।

অনেক স্বামী বিশ্বাস করতে পারেন না যে তাদের স্ত্রী তাদের বিরুদ্ধে মামলা করবেন। স্ত্রী অনেক সময় নিজে না চাইলেও পারিবারিক ও সামাজিক পরামর্শে এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে এলাকার কিছু অসাধু ব্যক্তি 'মামলা'কে পেশা হিসেবে ব্যবহার করেও উৎসাহ জোগাতে পারে।

স্বামীদের প্রতি পরামর্শ হলো, মামলার খবর পেলেই আতঙ্কিত না হয়ে সাহস ও ঠাণ্ডা মাথায় আইনগত ব্যবস্থা নিন। সঠিক কাগজপত্র থাকলে এবং প্রমাণ দিতে পারলে আদালতে আপনি ন্যায় বিচার পাবেন।

যেসব ভুলে বিপদ বাড়ে:
আদালতের নোটিশ পাওয়ার পর পালিয়ে থাকা, তালাকের কাগজপত্র জমা না দেওয়া, আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ না রাখা, মামলাকে হালকাভাবে নেওয়া।

এসব ভুলের কারণে পুলিশ ওয়ারেন্ট ইস্যু করে গ্রেফতার করতে পারে। অথচ আপনি যদি সঠিক সময়ে তালাকের প্রমাণ দেন, যৌতুক দাবি অস্বীকার করেন এবং আইনি সহায়তা নেন – তাহলে মামলাটি খারিজ হওয়ার সুযোগ থাকে।

তালাকের পর স্ত্রী দেনমোহরের টাকা দাবি করলে সেটা আইনত বৈধ। দেনমোহর যদি পুরোপুরি পরিশোধ না করা হয়, তাহলে স্ত্রী সেই টাকা চাইতে পারেন এবং সেটি দিতে স্বামী বাধ্য থাকবেন।

তালাক, পারিবারিক কলহ বা মামলা – কোনোটিই সমাজ বা পরিবার কাঠামোর জন্য কাম্য নয়। অনেক সময় বাইরের লোকের পরামর্শ, ভুল বোঝাবুঝি বা আবেগের বশবর্তী হয়ে এসব ঘটনা ঘটে যায়। তাই বিবাহিত জীবন সুখী রাখতে স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই ধৈর্য, পারস্পরিক সম্মান এবং বাইরের হস্তক্ষেপ থেকে সম্পর্ককে রক্ষা করার মানসিকতা থাকা জরুরি।

সতর্ক থাকুন, জানুন এবং আইনি পথে সমাধান খুঁজুন। অন্ধভাবে পালিয়ে নয়, সাহস ও কৌশলে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করুন।

সূত্র: https://rb.gy/ffxffa

মিরাজ খান

×