
ছবি: সংগৃহীত।
পৈতৃক সম্পত্তি কিংবা নিজ নামে রেজিস্ট্রিকৃত জমি অন্যের দখলে চলে গেলে মামলা-মোকদ্দমার ভয়েই অনেকেই থমকে যান। বছরের পর বছর ঘুরতে হয় কোর্টে-কাছারিতে। তবে এই দীর্ঘসূত্রতা থেকে মুক্তির জন্য সরকার ২০২৩ সালে প্রণয়ন করেছে একটি সময়োপযোগী আইন—ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২৩। এ আইনে বলা হয়েছে, অবৈধভাবে দখল হওয়া জমি পুনরুদ্ধারের আবেদন নিষ্পত্তি করতে হবে মাত্র তিন মাসের মধ্যে।
এই আইনের আওতায়, কেউ যদি আপনাকে জমি থেকে অন্যায়ভাবে উচ্ছেদ করে, দখলের চেষ্টা করে বা হুমকি দেয়, তাহলে আপনি সরাসরি এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করে প্রতিকার চাইতে পারবেন। এমনকি বিদেশে থাকলেও, নিজের পক্ষে অন্য কাউকে দিয়ে আবেদন করানো যাবে।
সত্য ঘটনা: ঢাকায় বসবাসরত শফিকুর রহমানের জমি দখলের চিত্র
শফিকুর রহমান নামের এক ব্যক্তি ঢাকায় থাকেন। পৈতৃক সূত্রে নিজ এলাকায় কিছু জমির মালিক তিনি। সেখানে বসবাস করতে দিয়েছেন তার ছোট ভাইকে। কিন্তু গত রমজানের ঈদে গ্রামে গিয়ে দেখেন, এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি তার জমি দখল করে সেখানে ঘর তুলে বসবাস করছেন। প্রতিবাদ করলে তাকে হুমকি দিয়ে উচ্ছেদ করা হয়।
এই ঘটনার প্রতিকার পাওয়ার জন্য এখন তিনি এই নতুন আইনের অধীনে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করতে পারেন, যেখানে ৩ মাসের মধ্যে তদন্ত করে তাকে তার জমির দখল ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আইনের গুরুত্বপূর্ণ দিকসমূহ:
- ধারা ৭: কেউ অন্যায়ভাবে জমি দখলের চেষ্টা করলে, হুমকি দিলে বা প্রবেশে বাধা দিলে সেটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
- শাস্তি: সর্বোচ্চ ২ বছর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড।
- ধারা ৮: জমি থেকে উচ্ছেদ হওয়া ব্যক্তি প্রমাণসহ আবেদন করলে তার দখল পুনরুদ্ধার করা যাবে।
- সময়সীমা: আবেদন পাওয়ার ৩ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ।
- আদেশ অমান্য করলে: ইচ্ছাকৃতভাবে আদেশ অমান্য করলে আরও ২ বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানা।
আবেদনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
- সর্বশেষ হাল নাগাদ খতিয়ান
- নামজারি সনদ/দলিল
- প্রমাণ স্বরূপ সাক্ষী বা ছবি/ভিডিও (যদি থাকে)
- জাতীয় পরিচয়পত্র ও পূর্ণ ঠিকানা
- জমির দখলে থাকার প্রমাণাদি
বিশেষ দ্রষ্টব্য:
এই আইন তামাদি আইনের মতো সময়সীমা নির্ধারণ করেনি। অর্থাৎ জমি দখল হবার ১২ বছর পরেও যদি কেউ আবেদন করতে চান, তাহলে সেই আবেদন গ্রহণযোগ্য হতে পারে। তবে যেহেতু এখনো এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা আসেনি, তাই আইনজীবীদের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ ও জটিলতা বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামেই যেন এক সাধারণ চিত্র। দীর্ঘদিনের মামলা, হয়রানি ও দালালের কবল থেকে মুক্তির পথ হতে পারে ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২৩। যারা ন্যায়বিচার পেতে চান, তাদের জন্য এ আইন এক আশার আলো।
নুসরাত