ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০১ জুন ২০২৫, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পন‍্য কিনে প্রতারিত? জানুন কিভাবে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরে অভিযোগ করবেন

প্রকাশিত: ১৩:১২, ৩১ মে ২০২৫; আপডেট: ১৩:১৩, ৩১ মে ২০২৫

পন‍্য কিনে প্রতারিত? জানুন কিভাবে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরে অভিযোগ করবেন

ছবি: সংগৃহীত।

পণ্য বা সেবার ক্ষেত্রে প্রতারণার শিকার হওয়া ভোক্তারা এখন খুব সহজেই আইনি সহায়তা ও ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন। অনেকেই জানেন না, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ অনুযায়ী একজন সাধারণ ভোক্তা হিসেবে আমাদের রয়েছে কিছু মৌলিক অধিকার—যেমন নিরাপদ পণ্য ও সেবা পাওয়ার অধিকার, পণ্যের সঠিক তথ্য জানার অধিকার, প্রতারণার শিকার হলে অভিযোগ জানানোর অধিকার এবং ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকার।

এই আইনের আওতায় প্যাকেটজাত ও খোলা পণ্য ছাড়াও বিভিন্ন সেবা—যেমন পরিবহন, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, টেলিযোগাযোগ, হোটেল বা রেস্টুরেন্ট পরিষেবাও অন্তর্ভুক্ত।

বর্তমানে অনলাইন কেনাকাটার জনপ্রিয়তার পাশাপাশি প্রতারণার ঘটনাও বাড়ছে। অনেক সময় অনলাইনে অর্ডার করা পণ্যের সাথে হাতে পাওয়া পণ্যের কোনো মিল থাকে না কিংবা পণ্য আসতে দেরি হয় বা আসে না-ই। ঠিক এমনই এক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন ঢাকার বাসিন্দা আলামিন সাহেব। তিনি অনলাইনে ১৭,০০০ টাকায় একটি ব্র্যান্ডেড স্মার্টফোন অর্ডার করেন, কিন্তু হাতে পান সস্তা চাইনিজ ফোন।

তিনি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর (DNCRP)-এর ওয়েবসাইটে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন, যার সাথে রিসিট, পণ্যের ছবি ও প্যাকেটের ছবি সংযুক্ত করেন। মাত্র ১২ কর্মদিবসের মধ্যেই তার অভিযোগ যাচাই করা হয় এবং DNCRP অভিযুক্ত কোম্পানিকে ২৫,০০০ টাকা জরিমানা করে এবং ভোক্তাকে মোবাইল ফেরত দিতে নির্দেশ দেয়। সেই জরিমানার ২৫% ক্ষতিপূরণ হিসেবে পান আলামিন সাহেব।

ভোক্তা অধিকার আইনে অভিযোগ করতে এখন অনেক সহজ পদ্ধতি রয়েছে। স্মার্টফোনে "ভোক্তা অধিকার ও অভিযোগ" অ্যাপস ডাউনলোড করে অথবা DNCRP-এর পোর্টালে গিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র ও মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে প্রোফাইল খুলে সহজেই অভিযোগ জানানো যায়। ইমেইল, ফ্যাক্স, কল সেন্টার (০১৭৭৭৫৩৬৬৮ অথবা ০৩১৭৪১২১২) বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও অভিযোগ দাখিল করা যায়।

অভিযোগের সাথে অবশ্যই নাম, ঠিকানা, এনআইডি নম্বর, ফোন নম্বর, অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের নাম, ঘটনার বিবরণ এবং প্রমাণ (যেমন পণ্যের রিসিট, ছবি ইত্যাদি) সংযুক্ত করতে হয়। তবে অভিযোগ পণ্য ক্রয়ের ৩০ দিনের মধ্যে দাখিল করতে হবে।

আইন অনুযায়ী অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত ব্যবসায়ীকে সর্বোচ্চ ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং ২ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেওয়া হতে পারে। যদিও বাস্তবে কারাদণ্ডের ব্যবহার কম, তবে অর্থদণ্ডের মাধ্যমে ভোক্তা অনেক সময় ক্ষতিপূরণ পান।

এ আইন অনুসারে অভিযোগ ফৌজদারি অপরাধ হলেও, ভোক্তা চাইলে দেওয়ানি আদালতেও পৃথক মামলা করে পাঁচ গুণ পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারেন।

ভোক্তা অধিকার রক্ষায় আইনের যথাযথ প্রয়োগের পাশাপাশি প্রয়োজন জনসচেতনতা। সচেতন ভোক্তাই পারে অসাধু ব্যবসায়ীদের রুখে দিতে এবং সঠিক পণ্য ও সেবা নিশ্চিত করতে।

তথ্যসূত্র: জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর (DNCRP)
হেল্পলাইন: ০১৭৭৭৫৩৬৬৮ / ০৩১৭৪১২১২
অ্যাপ: ভোক্তা অধিকার ও অভিযোগ (Google Play Store)

নুসরাত

×