ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৬ জুন ২০২৫, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২

জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএ’র বিরুদ্ধে কড়া অবস্থানে ইরান, সহযোগিতা স্থগিতের বিল অনুমোদন পার্লামেন্টে

প্রকাশিত: ২৩:০৬, ২৫ জুন ২০২৫; আপডেট: ২৩:০৭, ২৫ জুন ২০২৫

জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএ’র বিরুদ্ধে কড়া অবস্থানে ইরান, সহযোগিতা স্থগিতের বিল অনুমোদন পার্লামেন্টে

জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএ’র বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়েছে ইরান। সম্প্রতি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা নিয়ে নিন্দা জানাতে ব্যর্থ হওয়ায় সংস্থাটির বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে তেহরান।

ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবদ্ধ সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, দেশটির পার্লামেন্ট আইএইএ’র সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিতের একটি বিল সর্বসম্মতভাবে পাস করেছে। নতুন এই বিল অনুসারে, জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষকদের কোনো পরিদর্শনের আগে তা সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের অনুমোদন নিতে হবে। তবে আইন হিসেবে কার্যকর হতে হলে বিলটি এখন দেশটির অনির্বাচিত গার্ডিয়ান কাউন্সিলের অনুমোদন পেতে হবে।

পার্লামেন্ট স্পিকার মোহাম্মদ বাকের কালিবাফ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া বক্তব্যে বলেন, "ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলার ঘটনায় জাতিসংঘের পারমাণবিক সংস্থা ন্যূনতম নিন্দাও জানায়নি। তারা আন্তর্জাতিক বিশ্বাসযোগ্যতাকে নিলামে তুলেছে।" তিনি আরও বলেন, "আমাদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আইএইএ’র সঙ্গে সব ধরনের সহযোগিতা স্থগিত থাকবে।"

এই ঘোষণার সময় ছিল ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে টানা দুই সপ্তাহের সংঘর্ষ শেষ হওয়ার পরপরই। ১৩ জুন শুরু হওয়া এই সংঘর্ষে ইসরায়েলি বাহিনী ইরানি সামরিক স্থাপনায় হামলা চালায় এবং বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় ইরানি কমান্ডার নিহত হন।

পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যখন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালায়। এই হামলা প্রসঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, এর ফলে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি "সম্পূর্ণ ধ্বংস" হয়ে গেছে। তবে পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে জানানো হয়, পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে বড় ধরনের ক্ষতি হলেও তা পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি এবং কর্মসূচিটি কয়েক মাস পিছিয়ে গেছে মাত্র। হোয়াইট হাউস এই প্রতিবেদনকে “সম্পূর্ণ ভুল” বলে প্রত্যাখ্যান করে।

অন্যদিকে, ভিয়েনাভিত্তিক আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা আইএইএ নতুন করে ইরানে প্রবেশাধিকার চেয়ে আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থাটির মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি জানিয়েছেন, তিনি ইরান সরকারের কাছে পরিদর্শন পুনরায় শুরু করার বিষয়ে চিঠি দিয়েছেন। তিনি জানান, ইরান দাবি করেছে, মার্কিন হামলার আগেই তারা তাদের উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম সরিয়ে ফেলেছে, তাই আইএইএ’র পরিদর্শকদের নতুন করে মজুত পরিস্থিতি যাচাই করা দরকার।

গ্রোসি বলেন, "আমাদের আবার ফিরে যেতে হবে। আমাদের নতুনভাবে সম্পৃক্ত হতে হবে।"

উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক উত্তেজনার ঠিক আগে আইএইএ প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে ইরানকে পারমাণবিক চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত করে। সংস্থার বোর্ডের ৩৫টি সদস্য দেশের মধ্যে ১৯টি দেশ, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং জার্মানিও রয়েছে, প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দেয়।

আইএইএ জানায়, ইরান তাদের অঘোষিত পারমাণবিক উপকরণ ও কর্মকাণ্ড সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ তথ্য দেয়নি এবং এর সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুতে উদ্বেগ রয়েছে।

তবে তেহরান বরাবরের মতোই বলেছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে।

এই প্রেক্ষাপটে ইরানের পার্লামেন্টের এই পদক্ষেপ দেশটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং পরমাণু আলোচনার ভবিষ্যতের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

 

 

সূত্র:ইউরো নিউজ

আফরোজা

আরো পড়ুন  

×